বিজ্ঞাপন

মেঘদলের বিরুদ্ধে করা মামলায় ক্ষুব্ধ বিশিষ্টজনরা

November 2, 2021 | 9:10 pm

এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট

হজের সময় হাজীরা একসঙ্গে বলেন—লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। এ ধ্বনিকে গানের মধ্যে বিকৃতভাবে তুলে ধরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মিউজিক ব্যান্ড ‘মেঘদল’র বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ইমরুল হাসান নামক এক আইনজীবী। তিনি গত ২৮ অক্টোবর মামলাটি করেন।

বিজ্ঞাপন

মামলায় আসামি করা হয়েছে ‘মেঘদল’ ব্যান্ডের সাত সদস্যকে— ভোকাল শিবু কুমার শিল ও মেজবাউর রহমান সুমন, গিটারিস্ট-ভোকাল রাশিদ শরীফ শোয়েব, বেজ গিটারিস্ট এম জি কিবারিয়া, ড্রামার আমজাদ হোসেন, কিবোর্ডিস্ট তানভির দাউদ রনি ও বাঁশিবাদক সৌরভ সরকার।

রোববার (৩১ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মইনুল ইসলাম পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আর এতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বিশিষ্টজনরা।

বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী একাত্তর টিভিতে সোমবার (১ নভেম্বর) আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেন, “আমি এই গানটি শুনেছি। এতে এমন কোনো কিছুই নেই, যেটাকে ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত বলা যেতে পারে। বিচারক কোন বিবেচনায় মামলাটিকে আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিলেন—সেটা একজন আইনজ্ঞ হিসেবে আমার কাছে বোধগম্য নয়। আগেও আমরা বলেছি, দেশের প্রশাসনের রন্ধ্র রন্ধ্রে ধর্মব্যবসায়ী, স্বাধীনতাবিরোধীরা ঢুকে পড়েছে। এখন বলতে হচ্ছে, আমাদের বিচার বিভাগেও এমন ধর্ম ব্যবসায়ীরা ঢুকে পড়েছেন, যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। বিশ্বাস করলে তারা ঠিকেই ন্যায়বিচার করতেন। এই মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে প্রমাণ করেছেন, আদালত ন্যায়বিচার করেননি।”

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, “কাজী নজরুল ইসলাম, লালন, শাহ আব্দুল করিম এমন অনেক গান লিখেছেন যেগুলোতে সম্প্রীতির কথা আছে। সকল ধর্মের মানুষের ঐক্যের কথা আছে। সেগুলো তো ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানেনি।”

এদিকে মানবাধিকারকর্মী ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না ‘মেঘদল’ ব্যান্ডের পক্ষে আইনি লড়াই চালানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক—বলতে বলতে মুসলিমরা হজে যায়। এর মধ্যে কিন্তু সুরের মূর্ছনা আছে। যে কারণে এটাকে সুর দেওয়ায় এমন কোনো অপরাধ হয়নি।”

সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগটাই অপপ্রয়োগ। আমরা শুরু থেকে এটা বলছিলাম। আজকে খেয়াল করে দেখবেন এই আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে গণমাধ্যমকর্মী, সংস্কৃতিকর্মী ও মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে। খোঁজ নিয়ে দেখবেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা প্রত্যেকে উদার অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী।”

বিজ্ঞাপন

‘মেঘদল’ ব্যান্ডের পাশে দাঁড়ানো কথা জানিয়ে সংস্কৃতিজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, “মেঘদলের সদস্যরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। আমি তাদের বলেছি, তোমরা লড়াই চালিয়ে যাবে। আমরা অবশ্যই তোমাদের পক্ষে অবস্থান নেব। রাস্তায় দাঁড়াব। কিন্তু প্রতিটি ইস্যুতে আমাদের রাস্তায় দাঁড়াতে হবে কেন? মুক্তিযুদ্ধ, ধর্মরিপক্ষেতা, সম-অধিকারের বিরোধীরা আদালতসহ প্রশাসন—জায়গায় তাদের কথা মূল্যায়ন দেখতে পাচ্ছি। আমাদের সরকার ক্ষমতায়, তারা অথরিটি নিয়ে বলবে, আদালত দেশের সংবিধানকে সমুন্নত রাখবে। আদালতের কাজ এটি। তার কাজ এটি নয় যে, পিবিআইয়ের কাছে দিয়ে দেওয়া। আমি তো মনে করি, ‘মেঘদল’ ব্যান্ডের বিরুদ্ধে এই মামলার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল।”

মেঘদলের বিরুদ্ধে মামলা করা একই আইনজীবী ইমরুল হাসান গত বছর পালা গানে মহান আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে বাউল শিল্পী রিতা দেওয়ানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন।

সারাবাংলা/এজেডএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন