বিজ্ঞাপন

খালেদ মোশাররফ হত্যার বিচার কি হবে?

November 6, 2021 | 2:00 pm

কবীর চৌধুরী তন্ময়

প্রশ্নটি আজ দেশের সাধারণ জনগণের। কারণ, চার দশকেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার আজও হয়নি, বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও দেশের মানুষ মনে করতে পারছে না। যদিও নভেম্বরের সাত তারিখ-দিনজুড়ে বিএনপি পালন করে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে, জাসদ আবার ‘সৈনিক-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ নাম দিলেও আওয়ামী লীগ এটিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।

বিজ্ঞাপন

মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার এবং ‘কে ফোর্সের’ অধিনায়ক ছিলেন খালেদ মোশাররফ। ঢাকা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নোয়াখালী জেলায় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন তিনি। সরাসরি যুদ্ধে শত্রুপক্ষের গুলিতে গুরুতর আহত হন খালেদ। পাকিস্তানিদের নিক্ষিপ্ত গোলার একটি অংশ খালেদ মোশাররফের কপালে আঘাত হানে, এতে করে তার মাথার ঘিলু কিছুটা ছিটকে বেরিয়ে আসে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দক্ষতার সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনা করতে যে তিনটি ফোর্স গঠন করা হয়েছিল, এর একটির অধিনায়ক ছিলেন খালেদ মোশাররফ। তার নামের আদ্যক্ষর দিয়েই নাম হয় ‘কে ফোর্স’। স্বাধীনতা ঘোষণার কয়েকদিন আগে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সিনিয়র মেজর থাকা অবস্থায় তাকে শমসেরনগরে বদলি করা হয়। যুদ্ধ শুরু হলে বাঙালি সৈনিকরা যাতে সংগঠিতভাবে পাল্টা আক্রমণ করতে না পারে, সে পরিকল্পনা থেকেই মূলত খালেদ মোশাররফকে সরিয়ে দেয় পাকিস্তানিরা। শত-সহস্র ষড়যন্ত্র করেও খালেদ মোশাররফকে থামানো যায়নি। ২৫ মার্চের পাকিস্তানিদের গণহত্যার প্রতিবাদ করতেই পরদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসে মেজর শাফায়াত জামিলসহ বিদ্রোহী সৈন্যদের সাথে যোগ দেন তিনি। চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন খালেদ মোশাররফ।

খালেদ মোশাররফ শুধু একজন সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্বই পালন করেননি, সেসময় রাজধানী ঢাকা ও আশেপাশের মুক্তিবাহিনী ও যোদ্ধাদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি সবসময় মানসিকভাবেও চাঙা রাখতেন খালেদ মোশাররফ।

বিজ্ঞাপন

মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার খালেদ মোশাররফকে বীরউত্তম খেতাবে ভূষিত করে। পঁচাত্তরের নভেম্বরে বঙ্গবন্ধুর খুনি মোশতাকচক্রকে হটিয়ে দিয়ে খালেদ মোশাররফ যখন মুক্তিযুদ্ধের মুল স্রোতধারায় গণতান্ত্রিক সরকার-রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করলে, তখন ৭ নভেম্বর পরিকল্পিতভাবে আরেক অভ্যুত্থানে তাকে হত্যা করা হয়।

খালেদ মোশাররফ হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিগত চার দশকে নানামুখী রাজনীতি ও রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতি শোনা গেলেও তার হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনের উদ্যোগ দেখা যায়নি। বরং উল্টো খালেদ মোশাররফকে জঘন্য আঁতাতকারী, ‘ঘাতক’ ও ‘ষড়যন্ত্রকারী’ বানানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

রাজনীতির নোংরা বক্তব্য, দোষারোপের বিবৃতি বেশিদিন ‘চিরসত্য’কে ধামাচাপা দিয়ে রাখতে পারে না। সত্য তার আপন গতিতেই বেরিয়ে আসে, সত্য তার নিজস্ব গুণে প্রকাশিত হয়। খালেদ মোশাররফ হত্যাকাণ্ড বা ১৯৭৫ সালে ৭ নভেম্বর মূলত কী ঘটেছিল এটিও বেরিয়ে আসবে। জাতি প্রকৃত সত্য জানবে এবং ঘৃণ্য অপরাধীদের ঘৃণা করবে, প্রত্যাখ্যান করবে।

বিজ্ঞাপন

৭ নভেম্বর নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা যাই হোক, তথ্য-সুত্র কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশাররফের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় এবং তখনকার কতিপয় সেনাবাহিনীর অফিসারদের স্মৃতিচারণ আর তাদের লেখা বই থেকে জানা যায়, ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা’র মধ্য দিয়ে জাসদের কর্নেল তাহেরের সহযোগিতায় মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান তার রাজনৈতিক যে মেরুকরণ শুরু করেছিল, বোধ করি আজও তা অব্যাহত রয়েছে।

খালেদ মোশাররফ হত্যাকাণ্ডকে আড়াল করতেই অনেকে বলে থাকেন, খালেদ মোশাররফই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন। আবার অনেকে সমালোচনার জন্য সমালোচনা করতে এটাও বলেন যে, ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। আবার অনেকে এও বলে বেড়ায়, খালেদ মোশাররফ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার জন্য রুশ-ভারতের দালাল হয়ে জিয়াউর রহমানকে বন্দি করেছে, অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। যদিও তারা এই পর্যন্ত তাদের সমালোচনার পক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরতে পারেনি।

৩ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান নিয়ে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুর রক্ত মাড়িয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসা খন্দকার মোশতাক আর খুনি মেজরদের ৮১ দিনের অবৈধ শাসনের অবসান ঘটিয়ে খুনিদের মদদে সেনাপ্রধানের আসনে বসা জিয়াউর রহমানকে বন্দী করেন খালেদ মোশাররফ। তিনি চেয়েছিলেন বিনা রক্তপাতে বিশৃঙ্খল সেনাবাহিনীতে চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনতে।

খালেদ মোশাররফ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার সমালোচনার জবাব দিয়েছেন কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম বীর বিক্রম। ‘দাম দিয়ে কিনেছি এই বাংলা’ বইতে তিনি লেখেন, ‘অভ্যুত্থানের প্রাথমিক পর্যায়ে খালেদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের কোনো মানসিক প্রস্তুতি এমনকি পরিকল্পনা ছিলো না। এ কারণে এই অভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসারেরাও করণীয় সম্পর্কে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলো।’

বিজ্ঞাপন

আর সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সাথে ‘জঘন্য আঁতাত’ নিয়ে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, খালেদ মোশাররফের সামরিক শক্তিকে পরাজিত করতে পারবে না-এটা বুঝেই খুনি মেজররা দেশত্যাগের জন্য দেনদরবার শুরু করে। মোশতাকও তার অনুসারীদের দেশত্যাগের সুযোগ দেওয়ার জন্য খালেদ মোশাররফকে অনুরোধ করেন। এই অবস্থায় খালেদ মোশাররফ খুনি মেজরদের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা চালিয়ে তাদের পরাজিত করার চেষ্টা করতে পারতেন। সে ক্ষেত্রে জঙ্গি বিমান ব্যবহার করতে হত। তাহলে একদিকে বিমান হামলা অন্যদিকে ফারুক-রশিদের অধীনে থাকা ৩০টি ট্যাংক আর ১৮টি কামানের গোলাবর্ষণে একটি ধ্বংসযজ্ঞ তৈরি হত। হয়তো এই চিন্তা করেই খালেদ মোশাররফ আর তার অনুসারীরা ফারুক-রশিদ চক্রকে আত্মসমর্পণ করানো থেকে বিরত থাকার কৌশল অবলম্বন করেন। যার যথার্থ প্রমাণ পাওয়া যায় কর্নেল (অব.) শাফায়াত জামিল-এর লেখায়। তিনি তার বইয়ে উল্লেখ করেন, ‘সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধ, রক্তক্ষয় ও বেসামরিক নাগরিকের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাদের দেশত্যাগের সেফ প্যাসেজ দিতে রাজি হলাম আমরা। সে সময় এটা আমাদের মনে ছিলো যে, বিদেশে চলে গেলেও প্রয়োজনে পরে ইন্টারপোলের সাহায্যে তাদের ধরে আনা যাবে’। [একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর, পৃষ্ঠা-১৩৬]

আরেকটি বিষয়, জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডে যারা খালেদ মোশাররফকে জড়িয়ে মিথ্যাচার-সমালোচনা করেন তাদের জন্য এখানেও কর্নেল (অব.) শাফায়াত জামিল-এর বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা দখলকারীদের সঙ্গে আমাদের টেলিফোনে যখন বাকযুদ্ধ চলছিল, তখন ঘুণাক্ষরেও আমরা জানতে পারিনি জেলে চার জাতীয় নেতার হত্যাকাণ্ডের কথা। অথচ আগের রাতেই সংঘটিত হয়েছিল ঐ বর্বর হত্যাকাণ্ড। ওসমানী ও খলিলুর রহমান ঐ ঘটনার কথা তখন জানতেন বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু তারা আমাদের কিছুই জানাননি। জানালে এভাবে ১৫ আগস্টের খুনিদের নিরাপদে চলে যেতে দেওয়া হত না। আমাদের নেগোসিয়েশন টিমকেও এ বিষয়ে কেউ কিছু আভাস দেয়নি’। [একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর, পৃষ্ঠা-১৩৬]

পরদিন, ৪ নভেম্বর বঙ্গভবনে শাফায়াত জামিল সেনাবাহিনীর তৎকালীন চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ মেজর জেনারেল খলিলুর রহমানকে জেল হত্যাকাণ্ড ঘটে যাওয়ার কথা জানার পরও তাদের এই তথ্য না জানানোর জন্য তিরস্কার করে বলেন: ‘এই ডিসগ্রেসফুল আচরণের জন্য আমি আপনাকে অ্যারেস্ট করতে বাধ্য হচ্ছি’। [একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর, পৃষ্ঠা-১৩৮]

আবার ৩ নভেম্বর অভ্যুত্থানের অন্যতম পরিকল্পনাকারী মেজর (অব.) নাসির উদ্দিন তার লেখা ‘গণতন্ত্রের বিপন্নধারায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী’ বইয়ের তথ্য অনুযায়ী খালেদ মোশাররফ ও অভ্যুত্থানকারীরা ৪ নভেম্বর জেল হত্যাকাণ্ডের খবর পায়।

যা হোক, তথ্য-প্রমাণ ছাড়া কোনো সমালোচনার গুরুত্ব থাকে না বরং সমালোচক বা সংগঠন বিতর্কিত হয়, নিজেদের আসল উদ্দেশ্য বের হয়ে আসে।

১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর সারাদিন বঙ্গভবনেই ব্যস্ত ছিলেন তখনকার সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ। নতুন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সায়েম যখন শপথ নিচ্ছেন, জেনারেল জিয়াউর রহমান তখন গৃহবন্দী। আর তখন কিন্তু সবচেয়ে সক্রিয় অবস্থান গ্রহণ করে জাসদের গণবাহিনী এবং সৈনিক সংস্থা।

কর্নেল তাহেরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন তার ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন যিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছিলেন। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর থেকে ৬ নভেম্বর রাত পর্যন্ত অসংখ্য সভা হয়েছে।…কর্নেল তাহের পরিকল্পনা করেছিলেন অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সৈন্যরা অস্ত্র হাতে রাস্তায় বেরিয়ে আসবে। তিনি সৈন্যদের বলেছিলেন, প্রত্যেকে কয়েকটি অস্ত্র হাতে বেরিয়ে আসবে। আর বাইরে অপেক্ষমাণ আমাদের শ্রমিক ও ছাত্ররা সশস্ত্র হবে। এভাবেই সৈনিক-জনতার অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেছিলেন কর্নেল তাহের’।

৭ নভেম্বর প্রথম প্রহরে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করা হলেও বেলা ১১টার দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফকে তার দুই সহযোগী কর্নেল নাজমুল হুদা ও লে. কর্নেল এ টি এম হায়দারসহ নির্মমভাবে হত্যা করে।

রক্তক্ষয়ী হত্যাকাণ্ডের শেষ দৃশ্যের স্পষ্ট বিবরণ পাওয়া যায় লে. কর্নেল হামিদ-এর ‘তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা’ বইয়ে। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘মেজর জলিল কয়েকজন উত্তেজিত সৈনিক নিয়ে মেসের ভিতর প্রবেশ করে, সাথে একজন বিপ্লবী হাবিলদারও ছিল। সে চিৎকার দিয়ে জেনারেল খালেদকে বলল-‘আমরা তোমার বিচার চাই’! খালেদ শান্তকণ্ঠে জবাব দিলেন, ‘ঠিক আছে, তোমরা আমার বিচার করো। আমাকে জিয়ার কাছে নিয়ে চলো’।

স্বয়ংক্রিয় রাইফেল বাগিয়ে হাবিলদার চিৎকার করে বললো- ‘আমরা এখানেই তোমার বিচার করবো’। খালেদ ধীর স্থির কণ্ঠে বললেন, ‘ঠিক আছে, তোমরা আমার বিচার করো’। খালেদ দু’হাত দিয়ে তার মুখ ঢাকলেন। ট্যারর-র-র-র! একটি ব্রাশ ফায়ার। মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন সেনাবাহিনীর চৌকস অফিসার জেনারেল খালেদ মোশারফ যার ললাটে ছিল বীরযোদ্ধার জয়টিকা, মাথায় ছিল মুক্তিযুদ্ধের বীর উত্তমের শিরোপা আর মাথার বাম পাশে ছিলো পাকিস্তানি গোলন্দাজ বাহিনীর কামানের গোলার গভীর ক্ষতচিহ্ন। কামরার ভেতরেই গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণত্যাগ করলেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী, মুক্তিযুদ্ধে ৮নং সেক্টরের সাবসেক্টর কমান্ডার বীর বিক্রম কর্নেল নাজমুল হুদা। কর্নেল হায়দার ছুটে বেরিয়ে যান কিন্তু সৈনিকদের হাতে বারান্দায় ধরা পড়েন । উত্তেজিত সিপাহীরা কিল ঘুষি লাথি মারতে মারতে দোতলা থেকে নিচে নামিয়ে এনে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে’।

জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে বিশেষ সামরিক আদালতে যে বিচারের মাধ্যমে কর্নেল আবু তাহেরকে ফাঁসি দেওয়া হয়, সেই বিচারকে ২০১১ সালে উচ্চ আদালত অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করেছে। তাহেরের বিচার-প্রক্রিয়াটি ছিল অস্বচ্ছ, সংক্ষিপ্ত এবং গোপন। তার চেয়েও বিচারে দুইটি গুরুতর বিচ্যুতি ছিল। এক. ঘটনার সময় তাহের সামরিক বাহিনীতে ছিলেন না। অতএব সামরিক বিধি তার জন্য প্রযোজ্য হতে পারে না। দুই. যে আইনে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, সেই আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন। ২১ জুলাই তাহেরকে ফাঁসি দেওয়ার পর ৩০ জুলাই আইনটি সংশোধন করা হয়। তবে এই বিচারের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার আবু তাহেরের অপহৃত মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলেও পঁচাত্তরের কর্নেল তাহের-জাসদের তথাকথিত সিপাহি বিপ্লব সৃষ্ট বিতর্কের অবসান হয়নি।

যতটুকু জানা যায়, পঁচাত্তরে আওয়ামী লীগ ৭ নভেম্বরকে সেনা কর্মকর্তা হত্যা দিবস হিসেবে মামলা করেছে, কিন্তু ওই মামলার আদ্যোপান্ত কী-আদৌ জানা গেল না। যদিও জিয়াউর রহমানকে হত্যার অপরাধে ১৩ জন সেনা কর্মকর্তার ফাঁসি হয়েছে। তাহেরের গোপন বিচারকে আদালত অবৈধ ঘোষণা করে তার মর্যাদাও ফিরিয়ে দিয়েছে। তাহলে জনমনে প্রশ্ন আসে, খালেদ মোশাররফ হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে না কেন?

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন