আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ইউপি নির্বাচনের ‘মাঠে’ এমপি তানভীর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

সিরাজগঞ্জ: ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় নির্বাচনি প্রচারণায় সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর ইমামের অংশ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনি সমাবেশ থেকে নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে এমপির ব্যক্তিগত সহকারী বলছেন, নির্বাচনি সমাবেশ নয়, তৃণমূলের মতবিনিময় সভা করেছেন তানভীর ইমাম।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) এমপি তানভীর ইমাম উল্লাপাড়ার ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে তিনটি নির্বাচনি সমাবেশ করেন। দুপুরের দিকে উল্লাপাড়া সদর ইউনিয়নের বাকুয়া গ্রামে দলীয় প্রার্থী আব্দুস সালেক, বিকেলে বড় পাঙ্গাসী ইউনিয়নের হুমায়ুন কবির লিটন এবং সন্ধ্যায় সলপ ইউনিয়নের শওকাত ওসমানের পক্ষে সমাবেশ করেন তিনি। এসব সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফয়সাল কাদির রুমি, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফাসহ দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, এসব সমাবেশ থেকে দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচনি সমাবেশে নৌকা প্রতীক দেখিয়ে ভোট চেয়েছেন তানভীর ইমাম। একইসঙ্গে দলের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’দের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে না নিলে ভালো হবে না।

বড় পাঙ্গাসী ইউনিয়নে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে হাওড়া এলাকায় সভা করছেন এমপি সাহেব। উল্লাপাড়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আকমাল হোসেন বলেন, মঙ্গলবার বাকুয়া গ্রামে বিশাল নির্বাচনি সমাবেশ করেছেন এমপি তানভীর ইমাম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এমপি তানভীর ইমাম নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মতবিনিময় সভার নাম করে তিনি প্রকাশ্যেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন। এমপির লোকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সমর্থকদের বিভিন্ন সময় হুমকি-ধমকিও দিয়ে আসছেন। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ভোটাররা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, এমপি মহোদয় নির্বাচনি সমাবেশ করেছেন— কেউ এমন অভিযোগ করলে সেটি তদন্ত করে দেখা হবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, সংসদ সদস্যদের নির্বাচনি সভায় অংশ নেওয়া বা প্রচারণা চালানোর কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বলছেন, এসব বিষয়ে অভিযোগ করতেও ভয় পাচ্ছেন তারা। এখন পর্যন্ত প্রতীক বরাদ্দ না হলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ব্যাপক শো-ডাউন ও প্রচারণা করছে বলেও অভিযোগ তাদের। তারা বলছেন, আমরা প্রচারণা-জনসংযোগ করতে পারছি না। অন্যদিকে পুলিশি প্রটোকল নিয়ে এমপি নির্বাচনি সমাবেশ করছেন।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর ইমামের মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তিনি তার ব্যক্তিগত সহকারীকে ফোনটি ধরিয়ে দেন। ব্যক্তিগত সহকারী মীর আরিফুল ইসলাম উজ্জল বলেন, ‘এমপি সাহেব কোনো নির্বাচনি সমাবেশ করেননি। তিনি দলের তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত মতবিনিময় সভা করছেন।’ তবে এর আগে দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এমপি তানভীর ইমাম বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বলে স্বীকার করেন তিনি।

আগামী ২৮ নভেম্বর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার ১৩টি ইউপিতে ভোট নেওয়া হবে। এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন আগামী ১১ নভেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৪ অক্টোবর।

সারাবাংলা/টিআর