বিজ্ঞাপন

‘৭২ ঘণ্টা পরে কেন, যখনই নালিশ করবে নিতে হবে’

November 12, 2021 | 12:26 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষণের শিকার ব্যক্তি যখনই অভিযোগ করবেন, তখনই পুলিশকে সেই অভিযোগ নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) রাতে ফেসবুকে নিজের পেজ থেকে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় সিনিয়র এই আইনজীবী এ কথা বলেন। বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলায় বিচারিক আদালতের পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গে তিনি এ প্রতিক্রিয়া দেন।

এদিন বিকেলে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারের আদালত আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে প্রধান আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে আলামত পাওয়া যায় না উল্লেখ করে রায়ের পর্যবেক্ষণে ৭২ ঘণ্টা পরে ধর্ষণের মামলা না নিতে পুলিশকে ‘পরামর্শ’ দিয়েছেন এই বিচারক।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

আদালতের এমন পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গেই এক মিনিট ৩২ সেকেন্ডের এক ভিডিওবার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করেন জেড আই খান পান্না। ওই ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) রেইনট্রি ধর্ষণ মামলার রায় রয়েছে। (মামলার রায়ে আসামিদের) বেকসুর খালাস সম্পর্কে আমার কোনো মন্তব্য নেই। কিন্তু একটি জায়গায় আমি খুবই মর্মাহত।

৭২ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশের কাছে না গেলে যেন ধর্ষণ মামলা নেওয়া না হয়— বিচারকের এমন পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গেই মূলত মর্মাহত হয়েছেন বলে জানান এই সিনিয়র আইনজীবী। তিনি বলেন, কিভাবে মাননীয় আদালত বললেন যে ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পরে গেলে সেই মামলা যেন পুলিশ না নেয়? এ কথা কি উনি বলতে পারেন? কক্ষনোই না। ৭২ ঘণ্টা পরে কেন! যদি সে মেয়েকে আটকে রাখে? যখনই সে নালিশ দেবে, তখনই (মামলা) নেবে। আপনি বিচার করবেন কি করবেন না সেটি আপনার বিষয়। কিন্তু পুলিশ (অভিযোগ) নিতে বাধ্য। এতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও আছে।

বিজ্ঞাপন

উচ্চ আদালতের সেই নির্দেশনার প্রসঙ্গ টেনে জেড আই খান পান্না বলেন, সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপনারা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানতে বাধ্য। একটি গারো মেয়ে যখন মাইক্রোবাসে ধর্ষণের শিকার হন, মাননীয় বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের দ্বৈত বেঞ্চে এ সম্পর্কে একটি রায় আছে। রায়টি দেখবেন। আমি যদি এই জাজমেন্টটি পাই, খালাসের বিষয়ে না, কিন্তু আপনার (বিচারক) এই মন্তব্য নিয়ে অবশ্যই উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার চেষ্টা করব।

এর আগে, রেইনট্রি ধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণার পর আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, ভিকটিমের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক থাকলেও ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ডাক্তারি পরিক্ষায় কুমারী মেয়ের যে আলামত, সেটি প্রমাণ হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদনে আদালত ও পাবলিক টাইম নষ্ট হয়েছে। এ বিষয়ে আমার একটি পর্যবেক্ষণ আছে— ৭২ ঘণ্টা বা এর একটু কম সময় পার হলে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না। এরকম হলে পুলিশ যেন ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পরে কোনো ধর্ষণের মামলা না নেয়।

এই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন সাফাত আহমেদ। মামলার বাকি আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাফাতের দুই বন্ধু সাদমান সাকিফ ও নাঈম আশরাফ। বাকি দুই আসামি হলেন— সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল।

২০১৭ সালে দায়ের করা এই মামলাটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল অনলাইনে-অফলাইনে। আসামি সাফাতসহ বাকিদের গ্রেফতারে নানা ধরনের বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করেন। রায়ে পাঁচ আসামির সবাই খালাস পাওয়ার পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারের পর্যবেক্ষণও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। আইনজীবী, নারী অধিকারকর্মী, সমাজবিজ্ঞানী, অপরাধবিজ্ঞানীসহ সচেতন মহলও এই মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে সন্তুষ্ট হতে পারেননি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন