বিজ্ঞাপন

এফআর টাওয়ার কেলেঙ্কারি: রাজউকের ৮ কর্মকর্তা বরখাস্ত

November 13, 2021 | 2:18 pm

কবীর আলমগীর, জয়েন্ট নিউজ এডিটর

ঢাকা: রাজধানীর বনানীনতে ফারুক-রূপায়ন টাওয়ার (এফআর টাওয়ার) নির্মাণ তদারকিতে দুর্নীতির অভিযোগে আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ঢাকা জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১-এর ৩ নম্বর মামলা অনুযায়ী বিচারিক আদালতে ওই আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ হয়েছে। দুদকের মামলায় ওই আট জনের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

বরখাস্ত হওয়া আট জন হলেন— রাজউকের জোন-২-এর সহকারী অথোরাইজড অফিসার নজরুল ইসলাম, নিরীক্ষা ও বাজেট শাখার সহকারী পরিচালক সদরুল আমিন, প্রশাসন বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. মেহেদউজ্জামান, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মুজিবুর রহমান মোল্লা, এস্টেট পরিদর্শক মো. মোফাজ্জেল হোসেন, উচ্চমান সহকারী মো. সাইফুল আলম, প্রধান ইমারত পরিদর্শক ইমরুল কবির এবং উচ্চমান সহকারী মো. শফিউল্লাহ।

আরও পড়ুন- এফ আর টাওয়ারে আগুন: রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর জামিন

বিজ্ঞাপন

রাজউক চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর সই করা এক আদেশে বরখাস্ত করা হয়েছে এই আট জনকে। আদেশে রাজউক চেয়ারম্যান উল্লেখ করেছেন, এ বছরের ১৬ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ২১.৫৭৩ নম্বর স্মারক এবং ৭ অক্টোবর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২১.২৬৯ ও ২১.২৭০ স্মারক অনুযায়ী ওই আট জনকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বরখাস্ত আদেশে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি চাকরিবিধি ২০১৩-এর ৪৩ (৪) ধারা অনুযায়ী বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা খোরাকি ভাতা পাবেন।

আদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান এ বি এম নুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বরখাস্তের তথ্যটি সঠিক আছে।’ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রক্রিয়া বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আদেশে সই হওয়ার দিন থেকেই বিভাগীয় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রসিকিউশন শাখা এ বিষয়ে নথি প্রস্তুত ও মামলা দায়েরের বাকি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেবে।’

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: এফআর টাওয়ার মামলায় ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

বরখাস্ত হওয়ার বিষয়ে তৎকালীন প্রধান ইমারত পরিদর্শক নজরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় জানার পর তিনি সংযোগ কেটে দেন। এরপর একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়েও তার কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।

২০১৯ সালের ২৮ মার্চ এফআর টাওয়ারে আগুন লেগে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়লে ২৬ জন মারা যান। ওই ঘটনায় অন্তত অর্ধশত মানুষ আহত হন। এরপর ওই টাওয়ার নির্মাণে দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

দুদকের পাশাপাশি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ও ঘটনার তদন্ত শুরু করে। অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারের বিভিন্ন সংস্থা চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এর মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি নকশা অনুমোদনে বিধি লঙ্ঘন ও নির্মাণের ক্ষেত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দেয়।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: এফ আর টাওয়ারের নকশা জালিয়াতি: ফারুকসহ ৩ আসামি কারাগারে

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়— এফআর টাওয়ারের ১৮ তলার নকশা অনুমোদন করা হয়েছিল বিধি লঙ্ঘন করে। তার ওপরে আরও পাঁচটি ফ্লোর নির্মাণের নকশাকে বৈধতা দিতে বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি হয়। নিয়মের লঙ্ঘন ছিল ভবনটি নির্মাণের ক্ষেত্রেও।

ওই বছরের ২২ মে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ওই দিন তিনি বলেন, এফআর টাওয়ারের নকশা অনুমোদনে বিধি লঙ্ঘন এবং নির্মাণের ক্ষেত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল। শুধু তা-ই নয়, অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে ভবনটির ১৯ থেকে ২৩ তলা। আর এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হুমায়ূন খাদেমসহ অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।

আরও পড়ুন: এফ আর টাওয়ার নির্মাণে নকশা জালিয়াতি, রাজউক কমর্কতা কারাগারে

মন্ত্রী ওই সময় আরও বলেন, অবৈধভাবে নির্মিত ১৯ থেকে ২৩ তলা পর্যন্ত ভেঙে ফেলা হবে। এ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা হবে। আর ১৬ থেকে ১৮ তলা পর্যন্ত অনুমোদনের ক্ষেত্রে আইনি ত্রুটি থাকায় সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। পরে দফতর পরিবর্তন হওয়ায় শ ম রেজাউল করিমের সিদ্ধান্ত আলোর মুখ দেখেনি।

এফআর টাওয়ার নিয়ে ৪ মামলা

ওই বছরের ২৫ জুন নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে ১৬ থেকে ২৩ তলা ভবন নির্মাণের অভিযোগে এফআর টাওয়ারের মালিক, রাজউকের সাবেক দুই চেয়ারম্যানসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করে দুদক। সাংবিধানিক এই সংস্থাটির উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বাদী হয়ে ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলাটি করেছিলেন।

আরও পড়ুন: অনিয়মের ভাগাড়ে বেড়ে ওঠে বনানীর এফ আর টাওয়ার

মামলার আসামির তালিকায় আছেন— এফআর টাওয়ারের মালিক এস এম এইচ আই ফারুক, কাসেম ড্রাইসেলের এমডি তানভীর-উল-ইসলাম, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান কে এ এম হারুন, সাবেক সদস্য মো. রেজাউল করিম তরফদার, ভবন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রূপায়ন গ্রুপের কর্ণধার লিয়াকত আলী খান মুকুল, রাজউকের সাবেক পরিচালক মো. শামসুল আলম, তত্ত্বাবধায়ক মো. মোফাজ্জল হোসেন, সহকারী পরিচালক শাহ মো. সদরুল আলম, সাবেক প্রধান ইমারত পরিদর্শক মো. মাহবুব হোসেন সরকার, সাবেক ইমারত পরিদর্শক মো. আওরঙ্গজেব সিদ্দিকী, সহকারী অথোরাইজড অফিসার মো. নজরুল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক জাহানারা বেগম, সহকারী পরিচালক মেহেদউজ্জামান, নিম্নমান সহকারী মুহাম্মদ মজিবুর রহমান মোল্লা, অফিস সহকারী মো. এনামুল হক ও বিসিএসআইআরের সদস্য (অর্থ) মুহাম্মদ শওকত আলী, সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব আ ই ম গোলাম কিবরিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবদুল্লাহ আল বাকি, গণপূর্ত অধিদফতরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সৈয়দ নাজমুল হুদা এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামছুর রহমান।

এ মামলায় ভুয়া ছাড়পত্রের মাধ্যমে এফআর টাওয়ারের ১৯ তলা থেকে ২৩ তলা নির্মাণ, বন্ধক প্রদান ও বিক্রি করার অভিযোগে দণ্ডবিধির সাতটি ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫ (২) ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।

আরও পড়ুন: এফআর টাওয়ারের মালিক ফারুক গ্রেফতার

আরেক মামলায় এফআর টাওয়ারের ১৫ তলা অনুমোদন থাকলেও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ১৯৯৬ লঙ্ঘন করে নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে ১৮ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের অভিযোগ আনা হয়। এই মামলায় দণ্ডবিধির চারটি ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় মোট পাঁচ জনকে আসামি করা হয়েছিল। আসামিরা হলেন— এফআর টাওয়ারের মালিক এস এম এইচ আই ফারুক, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ূন খাদেম, রূপায়ণের লিয়াকত আলী খান মুকুল, রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইদুর রহমান ও সাবেক অথোরাইজড অফিসার সৈয়দ মকবুল আহমেদ।

জমির মালিক এস এম এইচ আই ফারুক হোসেন ১৯৯৬ সালে তার মালিকানাধীন ১০ কাঠা জায়গাতে ১৮ তলা ভবন নির্মাণের জন্য রাজউকে আবেদন করেন। প্রথমে ১৫ তলার অনুমোদন পেলেও পরবর্তীকালে রাজউকের সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে অবৈধভাবে ১৮ তলা ভবন নির্মাণ করেন। আরও পরে ভবনটি অবৈধভাবে ২৩ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয় বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়।

রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারের নকশা জালিয়াতি মামলায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিলের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগপত্রের অনুমোদন দেওয়া হয়। একইসঙ্গে এজাহারভুক্ত সাত আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন পাঁচ জনকে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে।

আরও পড়ুন: এফ আর টাওয়ারে আগুন, মারা গেলেন যারা

গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সৈয়দ নাজমুল হুদা মৃত্যুবরণ করায় তাকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়। এছাড়া অব্যাহতিপ্রাপ্তরা হলেন— রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান কে এ এম হারুন, সাবেক সদস্য মো. রেজাউল করিম তরফদার, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব আ ই ম গোলাম কিবরিয়া, সাবেক প্রধান ইমারত পরিদর্শক মো. মাহবুব হোসেন সরকার, সাবেক ইমারত পরিদর্শক মো. আওরঙ্গজেব সিদ্দিকি ও গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামছুর রহমান।

অন্যদিকে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত নতুন আসামিরা হলেন— রাজউকের উচ্চমান সহকারী মো. সাইফুল আলম, ইমারত পরিদর্শক ইমরুল কবির, ইমারত পরিদর্শক মো. শওকত আলী, উচ্চমান সহকারী মো. শফিউল্লাহ ও সাবেক অথোরাইজড অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম।

অন্যদিকে, মূল মামলার আসামিরা হলেন— এফআর টাওয়ারের মালিক এস এম এইচ আই ফারুক, রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল, এফআর টাওয়ার ওনার্স সোসাইটির সভাপতি কাসেম ড্রাইসেলের এমডি তাসভীর-উল-ইসলাম, সাবেক পরিচালক মো. শামসুল আলম, বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক মো. মোফাজ্জল হোসেন, সহকারী পরিচালক শাহ মো. সদরুল আলম, সহকারী অথোরাইজড অফিসার মো. নজরুল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক জাহানারা বেগম, সহকারী পরিচালক মেহেদউজ্জামান, নিম্নমান সহকারী মুহাম্মদ মজিবুর রহমান মোল্লা ও অফিস সহকারী মো. এনামুল হক। এছাড়া, বিসিএসআইআরের সদস্য (অর্থ) মুহাম্মদ শওকত আলী ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবদুল্লাহ আল বাকিও ওই মামলায় আসামি ছিলেন; যারা অনুমোদিত অভিযোগপত্রের আসামি।

আরও পড়ুন: এফআর টাওয়ার: মালিক ফারুক ও সাবেক রাজউক চেয়ারম্যানের বিচার শুরু

২০০৭ সালে বিষয়টি তদন্ত করে অনুমোদিত নকশায় অতিরিক্ত পাঁচ তলা নির্মাণের প্রমাণ পেয়েও কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি রাজউক।

মামলার এজহার থেকে জানা যায়, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে পরস্পর যোগসাজশে প্রতরণা ও ক্ষমতার অপব্যবহার মাধ্যমে ইমারাত নির্মাণ বিধিমালা ১৯৯৬-এর বিধি লঙ্ঘন করে। এছাড়া ভবন নির্মাণের ছাড়পত্র ইস্যু, ফি জমা ও নকশা অনুমোদন ব্যতিরেকে ভুয়া নকশা সৃজন, ১১ তলার ডেভিয়েশনসহ নির্মাণ, ১৯ হতে ২৩ তলা পর্যন্ত অবৈধভাবে নির্মাণ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিকটবন্ধক প্রদান ও বিক্রি করার অপরাধ করেন। এ কারণে দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১৬৬/ ১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগপত্র দাখিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া এফআর টাওয়ার নির্মাণে গাফিলতির অভিযোগ ওঠায় নকশা অনুমোদন সংক্রান্ত ৫৭টি নথি গায়েব করায় রাজউক দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা দায়েরের অনুমোদন করে দুদক। অভিযুক্ত রাজউকের দুই কর্মচারী হলেন— রাজউকের এন্ট্রি শাখার উচ্চমান সহকারী মো. শফিউল্লাহ এবং সাবেক নিম্নমান সহকারী (বর্তমানে পরিদর্শক) মো. বেলাল হোসেন।

আরও পড়ুন: এফআর টাওয়ার মামলায় সাইদুর রহমানকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ

দুদক সূত্র জানায়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন স্থাপনার নকশা সংক্রান্ত রাজউক অনুমোদিত মোট ৫৭টি নথি গায়েব/বিনষ্ট করার অভিযোগ দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়। ফলে দণ্ডবিধির ২০৪/২১৭ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় পৃথক দু’টি মামলার অনুমোদন দেয় সাংবিধানিক সংস্থাটি।

দুদকের উপসহকারী পরিচালক খন্দকার আখেরুজ্জামান এই অভিযোগ অনুসন্ধান করেন। এছাড়া অনুসন্ধানটি তদারকি করেন দুদকের উপপরিচালক এস এম সাহিদুর রহমান।

এই তিন জন ছাড়াও মামলায় রাজউকের ১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী হলেন— সহকারী অথোরাইজড অফিসার মো. নজরুল ইসলাম, মো. শামসুল আলম, পরিচালক (এস্টেট), সাবেক উপপরিচালক (এস্টেট) মুহম্মদ শওকত আলী, সাবেক সহকারী পরিচালক (এস্টেট) শাহ মো. সদরুল আলম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক (এস্টেট) জাহানারা বেগম, সাবেক পরিদর্শক মো. মেহেদউজ্জামান, নিম্নমান সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক মুহাম্মদ মজিবুর রহমান মোল্লা, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. এনামুল হক, সাবেক পরিচালক (এস্টেট) মো. আবদুল্লাহ-আল-বাকী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক মো. মোফাজ্জেল হোসেন, উচ্চমান সহকারী, মো. সাইফুল আলম, ইমারত পরিদর্শক (নকশা জমা গ্রহণকারী) ইমরুল কবির ও মো. শওকত আলী, উচ্চমান সহকারী (ইস্যুকারী) (সাময়িক বরখাস্ত) মো. শফিউল্লাহ ও সাবেক অথরাইজড অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম।

আরও পড়ুন: এফ আর টাওয়ার থেকে ২৫ লাশ উদ্ধার: গুলশান জোনের ডিসি

২০১৯ সালের ২৫ জুন এ বিষয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ মামলাটি করা হয়। মামলার বাদী দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিক।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ১৯৯৬-এর বিধি-বিধান লঙ্ঘন করেন। এছাড়া ভবন নির্মাণের ছাড়পত্র ইস্যু, ফি জমা ও নকশা অনুমোদন ছাড়া ভুয়া নকশা তৈরি, ১১ তলার ডেভিয়েশনসহ নির্মাণ, ১৯ হতে ২৩ তলা পর্যন্ত অবৈধভাবে নির্মাণ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বন্ধক প্রদান ও বিক্রি করার অপরাধ করেন। এসব কারণে দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১৬৬/ ১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরাধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় অভিযোগপত্র দাখিলের সিদ্ধান্ত হয়।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, এফআর টাওয়ারের ১৫ তলা থেকে ২৩ তলা অনিয়মের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। শুরুতে ১৫ তলা ভবনের নকশা অনুমোদনেও নীতিমালা মানা হয়নি। তদন্তে নেমে ভবনটির দু’টি নকশা হাতে পায় দুদক। একটি নকশায় ১৮ তলা ও অন্যটিতে ২৩ তলা দেখানো হয়েছে। সে সময়ে মামলার এজহারে ২০ জনকে আসামি করা হলেও পরে তদন্তসাপেক্ষ আরও পাঁচ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সারাবাংলা/একে/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন