বিজ্ঞাপন

মিতু হত্যার অধিকতর তদন্ত: পিবিআইকে বাদ দেওয়ার আবেদন

November 14, 2021 | 9:21 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিশেনের (পিবিআই) পরিবর্তে অন্য কোনো সংস্থাকে দেওয়ার আবেদন করেছেন বাবুলের আইনজীবী। একইসঙ্গে তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তনেরও আবেদন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৪ নভেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমানের আদালতে আবেদন করেন বাবুল আক্তারের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী।

জানতে চাইলে ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘যে সংস্থা বা যিনি একবার তদন্ত করে মিতু হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন, সেই সংস্থাকে আবার অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ায় বাদীর পক্ষে আপত্তি জানিয়ে আবেদন করা হয়েছে। আমরা পিবিআইর বদলে অন্য যেকোনো সংস্থার মাধ্যমে অধিকতর তদন্তের আবেদন করেছি। একইসঙ্গে বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে যেন তদন্তের দায়িত্ব না থাকে, সেই আবেদনও করেছি। আদালত ১২ ডিসেম্বর এ আবেদনের ওপর শুনানির সময় নির্ধারণ করেছেন।’

অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন শুরুর জন্য মিতু হত্যা মামলার নথিপত্র আদালতের হেফাজত থেকে নিজের হেফাজতে নেওয়ার জন্য গত ১০ নভেম্বর আবেদন করেছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। রোববার আদালত এ আবেদন মঞ্জুর করেছেন।

বিজ্ঞাপন

পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আদালত নথিপত্র সরবরাহের আদেশ দিয়েছেন বলে শুনেছি। কাল (সোমবার) এ বিষয়ে হয়তো লিখিত আদেশ পাব। তখন বিস্তারিত জানা যাবে।’

আরও পড়ুন-

বাবুল আক্তারের আইনজীবী ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আদালতের হেফাজতে থাকা নথিপত্র তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দেওয়ার বিষয়ে আমাদের আপত্তি আছে। কাল (সোমবার) আমরা লিখিতভাবে আবেদন করব। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে— নথিপত্রের অনুলিপি আদালতের হেফাজতে রেখে তারপর তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দিতে হবে, যেন সেগুলো পরিবর্তন-পরিমার্জন করা না যায়।’

বিজ্ঞাপন

মিতু হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া প্রথম মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর মামলার বাদী বাবুল আক্তার সব নথিপত্র আদালতের হেফাজতে সংরক্ষণের আবেদন করেছিলেন। গত ২৩ আগস্ট এ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত বাবুল আক্তারের পক্ষে আদেশ দেন।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রী খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ২০১৬ সালের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই নানাভাবে স্ত্রী খুনে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার আলোচনা শুরু হয়। ঘটনার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন প্রথম এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ্যে আনেন।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্তভার পড়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ওপর। এরপর আস্তে আস্তে জট খুলতে থাকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর এই মামলার।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরের ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের লক্ষ্যে ১২ মে ওই মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই।

আগের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দাখিলের পর গত ১২ মে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আট জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন— মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া।

ওই দিনই (১২ মে) বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন।

এদিকে, গত ১৪ অক্টোবর কারাবন্দি বাবুল আক্তার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি দাখিল করেন। ২৭ অক্টোবর ওই আবেদনের ওপর শুনানি হয় বাবুল আক্তারের উপস্থিতিতে। আদালত বাবুলের নারাজি আবেদন নামঞ্জুর করেন। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে টেকনিক্যাল ত্রুটি আছে উল্লেখ করে অধিকতর তদন্ত করে পুনরায় প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আদালত পিবিআইকে নির্দেশ দেন। ১২ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন আদালত। তবে অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে দেওয়া নিয়ে আপত্তি আছে বাবুলের আইনজীবীর।

এর মধ্যে গত ২৩ অক্টোবর মামলার এক আসামি এহতেশামুল হক ভোলা আদালতে জবানবন্দি দিয়ে জানিয়েছেন, বিশ্বস্ত সোর্স কামরুল ইসলাম শিকদার মুছাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তাকে দিয়ে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে খুন করায় তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন