বিজ্ঞাপন

বিমানবন্দরে নগ্ন করে হয়রানি: কাতারের বিরুদ্ধে ৭ নারীর মামলা

November 16, 2021 | 10:45 pm

রোকেয়া সরণি ডেস্ক

গত বছর কাতারের দোহার হামাদ বিমানবন্দরে কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইট থেকে নামিয়ে পোশাক খুলে নগ্ন করে তল্লাশির ঘটনায় কাতারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করছেন সাত নারী। ওই ঘটনার এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও কাতারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তারা। নগ্ন তল্লাশির মাধ্যমে হয়রানি ও ব্যক্তিস্বাধীনতা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ২ অক্টোবর দোহার হামাদ বিমানবন্দরের একটি বাথরুমে এক নবজাতক উদ্ধারের ঘটনা ঘটে। ওই সময় কাতার এয়ারওয়েজের ওই ফ্লাইটের যাত্রী সাত অস্ট্রেলিয়ান নারীকে জোর করে নামিয়ে আলাদা করে তল্লাশি করা হয়। ভুক্তভোগী নারীদের অভিযোগ, সশস্ত্র কয়েকজন তাদের বিমান থেকে নামিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে টারমাকে নিয়ে যায়। সেখানে কয়েকজন নার্স ছিলেন। তল্লাশির নামে সেখানে তাদের সম্পূর্ণ নগ্ন করে ফেলা হয়েছিল। তারা এ প্রক্রিয়ায় সম্মতি না দিলেও তাদের মতামতের তোয়াক্কা করেনি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

বিবিসির খবরে জানানো হয়, এ ঘটনায় পরে কাতার ক্ষমাপ্রার্থনা করে এবং বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু ভুক্তভোগী নারীরা বলছেন, ওই ঘটনায় তাদের সঙ্গে যে অন্যায় করা হয়েছে, সেটিকে কাতার আমলেই নেয়নি। সে কারণেই তারা এবার আইনের আশ্রয় নিয়েছেন।

আরও পড়ুন- কাতারে নারী যাত্রীদের পোশাক খুলে পরীক্ষা, ক্ষুব্ধ অস্ট্রেলিয়া

বিজ্ঞাপন

সিক্সটি মিনিট, দ্য এইজ ও দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ডকে ভুক্তোভুগীরা মামলা দায়েরের কারণ সম্পর্কে বলেছেন এতদিন তারা কাতার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু তারা সেটি করেনি। বিমানবন্দরে তল্লাশির নামে এমন হেনস্থার শিকার যেন আর কাউকে না হতে হয়, এ বিষয়েও তারা আদালতের কাছে আইনি প্রতিকার চান।

ওই সাত নারীর আইনজীবী ডেমিয়েন স্ট্রুজ্যাকার গণমাধ্যমকে বলেন, ভুক্তোভুগী নারীদের অবহেলা করা হয়েছে। তাই তারা বাধ্য হয়ে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এর অংশ হিসেবে তারা কাতার এয়ারওয়েজ, কাতার দূতাবাস ও কাতারের বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে নির্যাতন, আঘাত ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন।

আইনজীবী বলছেন, আন্তর্জাতিক চুক্তি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অস্ট্রেলিয়ায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। কাতার এয়ারওয়েজ এবং কাতার বিমানবন্দর— দু’টিই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় মামলায় কাতার সরকারের কাছে জবাবদিহিতা চাওয়া হয়েছে। ঘটনার জন্য কাতার সরকারকেই দায়ী করা হয়েছে। মামলায় কাতার সরকারের কাছ থেকে ভুক্তোভোগীদের জন্য ক্ষতিপূরণও চাওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

কাতার এয়ারওয়েজের আইনজীবীরা অবশ্য এই মামলাকে ‘নো মেরিট’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন। তারা বলছেন, এই মামলাটি থেকে ভুক্তভোগীদের পাওয়র কিছু নেই।

আরও পড়ুন- নারী যাত্রীদের অবমাননায় কাতার সরকারের দুঃখ প্রকাশ

এদিকে, ভুক্তভোগী নারীরা অস্ট্রেলিয়া সরকারের ওপরও ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, ঘটনাটি নিয়ে কাতার সরকারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া সরকার সঠিকভাবে আলোচনা চালিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছে।

এই অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ অস্ট্রেলিয়া সরকার। শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) মেলবোর্নে একটি প্রেস কনফারেন্সে ফেডারেল সরকারের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন জানান, এ ঘটনায় তার সরকারের প্রতিক্রিয়ায় তিনি ‘খুবই সন্তুষ্ট’।

বিজ্ঞাপন

অজি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই নারীদের জন্য অভিজ্ঞতাটি ভয়ংকর। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত হয়েছে, এক জন অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছে এবং কাতার বিমানবন্দরের কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে।

ফেডারেল সরকারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ঘটনাটি নিয়ে কাতার সরকার থেকে একটি ‘উচ্চমাত্রার গোপন’ নথি পাঠানো হয়েছিল। সেটি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলা নিষেধ।

অস্ট্রেলিয়া সরকার ‘সন্তুষ্টি’র কথা জানালেও ভুক্তোভোগী নারীদের অভিযোগ, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। কাতার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ বা ‘গোপন নথি’ চালাচালি সম্পর্কেও তারা কিছুই জানেন না। এ বছরের আগস্ট মাসে কাতার দূতাবাসে পাঠানো চিঠির কোনো জবাবও তাদের দেওয়া হয়নি।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন