বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা: আশার মাঝে ‘আরসা’য় হতাশা

November 21, 2021 | 9:18 pm

মোস্তফা কামাল

জাতিসংঘে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ক সর্বসম্মত প্রস্তাবে আশার আলো দেখিয়েছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পর বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় এই প্রথম কোনো প্রস্তাব বিনা ভোটে জাতিসংঘে গৃহীত হলো।

বিজ্ঞাপন

এই প্রস্তাব ইইউ এবং ওআইসি-এর সদস্য দেশগুলো ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জাপান এবং কোরিয়াসহ আন্ত-আঞ্চলিক দেশগুলোর সহ-পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। মোট ১০৭টি দেশ এই রেজুলেশনে সহ-পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছে, যা ২০১৭ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ। সেই বিবেচনায় এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় মাইলফলক। দীর্ঘমেয়াদি এই সংকট সমাধানে ভূমিকা রাখার আগ্রহ দেখিয়েছে চীন-রাশিয়াসহ বেশ ক’টি দেশ। যা মিয়ানমারের ওপর চাপ তৈরি না করে পারে না।

এমন আশাব্যঞ্জক সময়ে শনিবার বঙ্গোপসাগরের টেকনাফের সেন্টমার্টিনের পূর্বপাশ থেকে মাছ ধরার সময় ইঞ্জিনচালিত ৪টি ট্রলারসহ বাংলাদেশি ২২ জন জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের নৌ বাহিনী। দিনদুপুরে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মিয়ানমার নৌবাহিনীর এই দুষ্কর্ম বাজে বার্তা দিচ্ছে। তারওপর কক্সবাজারের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে ঘিরে আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি আর্মি–আরসার অপতৎপরতা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। আইনের শিথিল প্রয়োগ ও উদ্বাস্তুদের দুর্দশাকে পুঁজি করে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো রোহিঙ্গা শিবিরগুলোকে শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত করছে। গত অক্টোবরে রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ এবং ৬ রোহিঙ্গা নাগরিককে হত্যার পর, আরসার অবস্থান আরও শক্ত হচ্ছে। এরা ক্যাম্পে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত। রাতের বেলায় পুরো ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তারা। রোহিঙ্গারা তাদের চেনে কিন্তু প্রকাশ্যে কিছু বলছে না।

মাদকপাচার থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি, ত্রাণসামগ্রী মজুদসহ হেন কাজ নেই যা আরসা সদস্যরা না করছে। ভাবভঙ্গিতে তারা ডেমকেয়ার। যেন তাদের মোকাবিলার কেউ নেই। যদিও আইনশৃঙ্খলা  বাহিনী তা মানছে না। বলতে চাচ্ছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার কোনো উপস্থিতি নেই। মিয়ানমার বলেছে যে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেক সন্ত্রাসী আছে এবং তাদের তারা দেশে ফিরিয়ে নিতে চায় না। কিন্তু বাংলাদেশ বলছে, ক্যাম্পগুলোতে কোনো আরসা সদস্য নেই।

বিজ্ঞাপন

কথার এ ধরনের মারপ্যাঁচে সমস্যা আরও পাকছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে কাজ করা গোষ্ঠী মদদ পেয়ে চলছে। রাখাইনে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পুলিশ পোস্টে হামলার দায় স্বীকার করে আরসা। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সেই ঘটনার অজুহাতে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক দমন পীড়ন চালায়। রোহিঙ্গাদের অনেকের ধারনা, আরসা সদস্যরা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় এবং আনুষ্ঠানিক প্রত্যাবাসন আলোচনায় একটি পক্ষ হতে চায়। তাদের অবস্থানের একটি শক্ত বার্তা দিতে তারা মুহিব উল্লাহ এবং অন্য ৬ জনকে হত্যা করেছে। মাদক ও মানবপাচারের পাশাপাশি, আরসা সদস্যদের অর্থের একটি প্রধান উৎস চাঁদাবাজি। ক্যাম্পে প্রায় ৫০০ মাদরাসা আছে। বেশিরভাগ মাদরাসা আরসার একটি সহযোগী সংস্থা উলামা কাউন্সিল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অন্য প্রভাবশালী দলটি ইসলামি মহাস। যা ছিল মুহিব উল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। মুহিব উল্লাহকে হত্যার পর থেকে ফৌজদারি অভিযোগে আড়াই শতাধিক রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বহু আরসা সদস্য রয়েছে। বিপুল সংখ্যক আরসা সদস্য মিয়ানমারের এজেন্ট এবং তারা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী থেকে নিয়মিত নানা সুযোগ-সুবিধাপাপ্ত। আরসা বরাবরই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর জন্য কাজ করে আসছে। মতাদর্শের চেয়ে তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বেশি পারঙ্গম।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে জাতিগত নির্মূল অভিযানের নৃশংসতার দৃষ্টান্ত হিসেবে অভিহিত করেছে। অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা এটিকে বলেছে ‘গণহত্যা’। প্রতিশ্রুতি দিলেও গত চার বছরে মিয়ানমার একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি। রাখাইন রাজ্যে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে আস্থার অভাবে দুই দফায় প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এখন জাতিসংঘে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ক সর্বসম্মত প্রস্তাবে আশার আলোর মাঝে আরসার উপদ্রব নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করছে।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবিডিই/আইই

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন