বিজ্ঞাপন

চমেকের ৩১ ছাত্র বহিষ্কার, খুলছে ২৭ নভেম্বর

November 23, 2021 | 6:25 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ছাত্রলীগের দু’পক্ষে মারামারির ঘটনায় ৩১ ছাত্রকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের পর ২৭ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বহিষ্কৃতরা চমেকের এমবিবিএস ও বিডিএস’র বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র। তারা সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এদের মধ্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিতরা আছেন।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে চমেক একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলা এই সভায় সভাপতিত্ব করেন চমেকের অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার।

চমেকের অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় গত দুইবছরে মারামারিসহ কলেজে শৃঙ্খলাবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দু’টি তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৩১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া ২৭ নভেম্বর অর্থাৎ আগামী শনিবার থেকে চমেক খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জানা গেছে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ৩১ জনের মধ্যে ২৩ জন এমবিবিএস বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী এবং ৮ জন ডেন্টাল বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী।

বিজ্ঞাপন

এদিকে চমেকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃতরা হয়েছেন আটজন। তারা হলেন— এমবিবিএস ৬২তম ব্যাচের এইচ এম আসহাব উদ্দিন, সৌরভ ব্যাপারী ও সাদ মোহাম্মদ গালিব, ৬১তম ব্যাচের সাইফ উল্লাহ, ৬০তম ব্যাচের অভিজিৎ দাশ। এছাড়া বিডিএস ৩০তম ব্যাচের সাজেদুল ইসলা, ৩১তম ব্যাচের জাহেদুল ইসলাম ও ৩০তম ব্যাচের ইমতিয়াজ আলমকেও দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

দেড় বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয় দুজনকে। তারা হলেন— এমবিবিএস ৫৯ তম ব্যাচের রিয়াজুল ইসলাম ও ৬০ তম ব্যাচের অভিজিৎ দাস।

এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে ২১ জনকে। তারা হলেন— সাজু দাস (এমবিবিএস ৬২তম), রকিব উদ্দিন আহমেদ (৬২তম), জাকির হোসেন (৬২তম), জুলকাফল মহাম্মদ শোয়েব (৬২তম), ইব্রাহিম খলিল (৬২তম), চমন দাশ (৬২তম), ফারহান রহমান (৬২তম), মাহিন আহমেদ (৬২তম), শেখ ইমাম হাসান (৬২তম), সৌরভ দেবনাথ (৬২তম), মইনুল হোসেন (বিডিএস ৩১তম), আরাফাত ইসলাম (৬২তম), হাবিবুল্লাহ হাবিব (বিডিএস ৩০তম), মো. আনিস (বিডিএস ৩১তম), এহসানুল কবির (বিডিএস ৩১তম), মাহতাব উদ্দিন (বিডিএস ৩১তম), মো. শামীম (৬০তম), মো. সাব্বির (৬০তম), মইন ভূঁইয়া (৬১তম), তৌফিকুর রহমান (৫৮তম) ও আল আমিন ইসলাম (৫৮তম)।

বিজ্ঞাপন

বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের জন্য কোনো আবেদন করতে পারবেন না বলে ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২৯ ও ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান ছাত্রাবাস ও ক্যাম্পাসে পৃথকভাবে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার পর ৩০ অক্টোবর চমেক অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।

অভিযুক্ত সেই মাহাদিও

চমেকে সর্বশেষ মারামারির ঘটনায় আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ঘরে ফেরা এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাহাদি জে আকিবও অভিযুক্ত হয়েছেন। তবে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অভিযুক্ত হয়েছেন এনামুল হাসান সীমান্ত ও উৎস দে রক্তিম নামে এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের আরও দুই ছাত্র অভিযুক্ত হয়েছেন তদন্ত প্রতিবেদনে। তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী সভায় সিদ্ধান্ত হবে।

বিজ্ঞাপন

গত ২৯ অক্টোবর চমেকের প্রধান ছাত্রাবাসে উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে মারামারি হয়। এতে দু’জন আহত হন।

এর জের ধরে পরদিন সকালে চমেক ক্যাম্পাসে মাহাদি জে আকিবের ওপর হামলা হয়। হামলায় মাহাদি মাথায় গুরুতর আঘাত পান। তাকে চমেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ব্যান্ডেজ মোড়ানো মেহেদির মাথায় ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’ লিখে নিচে একটি বিপদজনক চিহ্নও এঁকে দেওয়া হয়। এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়। ২১ দিন চিকিৎসা শেষে গত ১৮ অক্টোবর বাড়ি ফিরে গেছেন মাহাদি, যিনি নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

অভিযুক্ত বাকি দু’জন এনামুল হাসান সীমান্ত ও উৎস দে রক্তিম সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ছাত্রাবাসে মারামারির ঘটনায় গত ৩০ অক্টোবর দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

বন্ধ থাকবে ছাত্রাবাস, সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ২৭ নভেম্বর খোলার সিদ্ধান্ত হলেও একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নগরীর চট্টেশ্বরী সড়কে প্রধান ছাত্রাবাস এবং নাছিরাবাদে ছাত্রাবাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ছাত্রাবাসে ছাত্রদের সকল আসন বরাদ্দ বাতিল করে নতুনভাবে আবেদন করতে বলা হয়েছে। তবে চমেকের কান্তা ছাত্রীনিবাস খোলা থাকবে।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চমেক ক্যাম্পাস ও ছাত্রাবাসে সকল ধরনের মিছিল, সভা-সমাবেশ নিষেধের আওতায় থাকবে। ছাত্রাবাস ও কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। যে কোনো পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে কোনো শিক্ষার্থীকে অথবা তার কক্ষে তল্লাশিসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে।

সারাবাংলা/আরডি/এনএস

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন