বিজ্ঞাপন

খুলছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চুক্তি ডিসেম্বরেই

November 25, 2021 | 11:20 pm

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মধ্যপ্রাচ্যের পর বাংলাদেশের অন্যতম বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। কিন্তু সরকার কিছু বেসরকারি জনশক্তি রফতানিকারকের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় প্রায় তিন বছর ধরে দেশটিতে জনশক্তি রফতানি বন্ধ রয়েছে। তবে দীর্ঘ দিন পর দেশটিতে ফের জনশক্তি রফতানির সুযোগ তৈরি হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে নতুন করে প্রস্তাব দিয়েছে মালয়েশিয়া। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিয়েছেন, সব কিছু ঠিক থাকলে ডিসেম্বরেই চুক্তি হচ্ছে। আর এ চুক্তিতে কর্মী পাঠাতে রিক্রুটিং এজেন্সির ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা থাকছে না। এদিকে, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন বেসরকারি জনশক্তি রফতানিকারকরা।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, সবশেষ ২০১৮ সালে ঘটা করে মালেয়েশিয়ায় পৌনে দুই লাখ কর্মী পাঠানো হয়। এরপর ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি সিন্ডিকেট করে দেশটিতে উচ্চ অভিবাসন হারে কর্মী পাঠাতে দুই দেশের সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নেয়। ওই পরিস্থিতিতে অন্য রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা তীব্র প্রতিবাদ তোলেন। ফলে ওই বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে মালয়েশিয়া সরকার। এর পর দফায় দফায় বৈঠক করেও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা সম্ভব হয়নি।

এদিকে, ২০২০ সালে শুরু হয় করোনাভাইরাসের মহামারি। তখন প্রায় সব দেশই স্বাভাবিকভাবে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রাখে। তবে বর্তমানে করোনার প্রকোপ কমে আসায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার জন্য সরকার নানা দেন-দরবার শুরু করে। গত ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে এ নিয়ে এক ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দেশটি শ্রমবাজার উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায় এক ধাপ এগিয়ে যায়।

ফেব্রুয়ারির পরেও বেশ কয়েকবার এ নিয়ে দুই দেশের সরকারের মধ্যে বিস্তর আলোচনা হয়। সেই আলোচনার পর কর্মী নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে মালয়েশিয়া। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের যৌথ বৈঠকে যেসব আলোচনা হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল- শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলে রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা নির্ধারণ।

বিজ্ঞাপন

সূত্র বলছে, এবার আর কোনো সিন্ডিকেট থাকছে না। আগের তৈরি ডাটাবেজ থেকেই দেশটিতে কর্মী পাঠাবে বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে তারা। এজন্য একটা সমঝোতা স্মারক সই হবে। এমওইউ যেটা আছে সেটা মোটামুটি চূড়ান্ত হয়ে আছে। এখন সই বাকি। আশা করছি ডিসেম্বর মাসে কিছু একটা ঘটতে পারে।’

এদিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে দেশের বেসরকারি জনশক্তি রফতনিকারকরা প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন বায়রা’র সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, মালয়েশিয়ার বাজার ধরে রাখতে অভিবাসন ব্যয় কমাতে হবে। পাশাপাশি সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। আশা করব, এবার কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না। এতে অভিবাসন ব্যয়ও কম হবে।’

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন যে সমঝোতা স্মারক সই করার জন্য তৈরি হচ্ছে সেখানে সিন্ডিকেটের বিষয় থাকছে না। তবে মন্ত্রী এখনই বলতে চাচ্ছেন না যে- কিছু এজেন্সি, নাকি সবাই কর্মী পাঠাতে পারবে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এমওইউতে বলা নেই কয়টা এজেন্সি কর্মী পাঠাতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগে জনপ্রতি চার/পাঁচ লাখ টাকা প্রয়োজন হতো। আমরা যদি এক লাখ ৬০/৬৫ হাজার টাকাতেও অভিবাসন ব্যয় নামিয়ে আনতে পারি সেটাও বড় সফলতা। এবার সে চেষ্টাই করা হয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আমরা ডিসেম্বর মাস থেকেই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারব।’

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, বর্তমানে কৃষি ও শিল্প খাতে বাংলাদেশ ছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে কর্মী নিচ্ছে মালয়েশিয়া। বাংলাদেশসহ দুটি দেশ থেকে কৃষি খাতে ৩২ হাজার কর্মী নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে মালয়েশিয়া। আর এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না সরকার। তাই সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে দ্রুত কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরুর তাগিদ রয়েছে।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালে ৯৯ হাজার ৭৮৭ জন কর্মী মালয়েশিয়া পাঠানো হয়। ২০১৮ সালে পাঠানো হয় ১ লাখ ৭৬ হাজার কর্মী। পরে কর্মী রফতানির নামে দুই দেশে গড়ে ওঠা চক্রের কারণে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রফতানি বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। অথচ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর সে চাহিদা ভারত, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া- এমনকি চীনের কর্মীদের দখলে চলে যাচ্ছে।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন