বিজ্ঞাপন

বিজয়ের মাসে নাবিহার প্রথম মৌলিক গান ‘সোনালি রোদ’

December 1, 2021 | 10:19 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জন্মদিন উপলক্ষে বাবা-মায়ের কাছ থেকে দারুণ এক উপহার পেল এবছরের জুনে ১০ বছর পূর্ণ করা নাবিহা ইনায়া আরেফিন। একমাত্র মেয়ের ‘ডাবল ডিজিট’-এর সেলিব্রেশনটি খুব ধুমধাম করে সম্পন্ন করার ইচ্ছে থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারির জন্য তা হয়নি। কিন্তু মেয়ের জন্য এমন কিছু করতে চেয়েছিলেন যা তার কাছে সুন্দর একটা স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে। এই চিন্তা থেকেই নাবিহার প্রথম মৌলিক গান রেকর্ড করা হলো। শিরোনাম— ‘সোনালি রোদ’।

বিজ্ঞাপন

শিপ্রা ইসলামের কথায় ও মাহমুদুল হাসানের সুরে গানটির সংগীত পরিচালনা করেছেন জাভেদ আহমেদ কিসলু। শুধু রেকর্ডই নয়, আবীর হকের চিত্র পরিচালনায় গানটির মিউজিক ভিডিওতে নাচও করেছে নাবিহা। এর নৃত্য পরিচালকও সে নিজেই।

ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাবিহা অনেক ছোটবেলা থেকে নাচ-গান-আবৃত্তিসহ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত। পাঁচ বছর ধরে ক্ল্যাসিকাল মনিপুরী নাচ শেখে সে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই নিজের গানের সঙ্গে মুদ্রা বাছাই করেছে বলে সারাবাংলাকে জানায় সে।

প্রথমবারের মতো স্টুডিওতে গিয়ে গান রেকর্ড করতে ভয় লেগেছে কি না— জানতে চাইলে নাবিহা জানায়, স্টুডিওতে যাওয়ার আগে কিছুটা ভয় ভয় লাগলছিল। তবে মাইক্রোফোনের সামনে গান গাইতে শুরু করতেই ভয় ভেঙে যায়। এমনকি দুই দিনের শুটিংয়ে তার মজাই লেগেছে বলে জানা গেল।

বিজ্ঞাপন

এত ছোট বয়স থেকে নাচ-গান-আবৃত্তি করেও কেন ভয় লাগছিল— জানতে চাইলে নাবিহা বলছে, ‘আমি ভেবেছিলাম অনেক যন্ত্রপাতি থাকবে। আর একবারে লাইভে গান গাইতে হবে। গান যে এভাবে গেয়ে রেকর্ড করা যায়, পরে সেটি মিক্সিং করা হয়— এগুলো তো জানা ছিল না। এগুলো জানার পর আর ভয় লাগেনি।’ জন্মদিনে এত চমৎকার উপহার পাওয়ায় মা-বাবাকেও কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানায় নাবিহা।

এই পুরো প্রক্রিয়াটির দায়িত্বে ছিলেন সংগীত পরিচালক জাভেদ আহমেদ কিসলু। নাবিহা সম্পর্কে শুধু মুগ্ধতাই ঝরল তার কণ্ঠে। তিনি বলেন, এত অল্প বয়সে ওর কণ্ঠে ও গায়কিতে যে ম্যাচ্যুরিটি, তা আসলে স্রষ্টা প্রদত্তই বলা যায়। গানের টেকনিক্যাল বিষয়েও সে অত্যন্ত পারদর্শী। লো এবং হাই— দুই রেঞ্জেই ওর গায়কি একইরকম থাকে। কিশোর কুমার, লতা মঙ্গেশকরদের মতো বড় বড় শিল্পীদের ক্ষেত্রেই কেবল এরকম দেখা যায়। নাবিহার এই ন্যাচারাল মেধার যত্নটা ঠিকঠাকমতো নেওয়া গেলে সে বড় হয়ে নাম করুক বা না করুক, বাংলাদেশের সংগীত জগতের জন্য অনেক অবদান রাখতে পারবে।

কিসলুও জানালেন, মাইক্রোফোনের সামনে শুরুর দিনে ঘাবড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু নাবিহা একদম স্বতঃস্ফূর্তভাবে গান গেয়েছে, যা তাকে মুগ্ধ করেছে।

বিজ্ঞাপন

সুরকার মাহমুদুল হাসান কয়েক দশক ধরে গানের জগতে থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে সুর দেওয়া এটিই তার প্রথম কোনো গান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ছায়ানটের এই শিক্ষক প্রায় ৩০ বছর ধরে সংগীত শেখান ও গান করেন। করোনাভাইরাস মহামারির প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ঘরেই ছিলেন তিনি। ওই সময় ফেসবুকে শিপ্রা ইসলামের এই কবিতাটি দেখতে পেয়ে তার খুব ভালো লেগে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সুর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। গানের কথা খুব সহজ হওয়ায় শিশুদের জন্য সুর করার চিন্তা করেন মাহমুদুল হাসান। বাংলাদেশে শিশুদের জন্য ছড়াগান থাকলেও দেশাত্মবোধক গান নেই বললেই চলে— এ বিষয়টিও বিবেচনায় রেখেছিলেন তিনি।

মাহমুদুল হাসান জানালেন, গানটিতে সুর দিলেও রেকর্ড করার চিন্তা তেমন ছিল না। নাবিহা মূলত তার কাছেই গান শেখে। এই গানটি তাকে শেখান তিনি। তখন নাবিহার মা ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফীনের কাছে মনে হয়, এই গান আগে কখনো শোনেননি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, গানটির সুরকার তার মেয়ের শিক্ষক নিজেই। এভাবেই মূলত গানটি রেকর্ডের চিন্তা আসে ও বিজয়ের মাসের প্রথম দিনে র‍্যাবিটহোল মিউজিকের ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পায় গানটি।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইফফাত সারাবাংলাকে বলেন, নাবিহা যখন গানটি শিখছিল তখন শুনেই মনে হচ্ছিল, খুব সাধারণ হয়েও অসাধারণ আর ভীষণ মেলোডিয়াস সুর। আর গানের কথাগুলোও খুব সহজ কিন্তু প্রাণবন্ত। হঠাৎ মনে হলো বিজয়ের ৫০ বছরে নাবিহার কণ্ঠে তার ১০ বছর জীবনের প্রথম মৌলিক গান যদি একটি দেশাত্মবোধক গান হয়, এর চেয়ে স্মরণীয় নাবিহার জীবনে এই মুহূর্তে আর কী হতে পারে!

সারাবাংলাকে তিনি বলেন, আমাদের দেশে বাচ্চাদের জন্য অনেক গান থাকলেও বেশিরভাগই সমবেত কণ্ঠে। তাছাড়া ছোটদের জন্য দেশের গানের মিউজিক ভিডিওর কালেকশনও তেমন নেই। সেই সূত্রেই মাহমুদুল হাসানের সুর করা এই দেশের গানটি রেকর্ড করার পাশাপাশি মিউজিক ভিডিও তৈরি করা হয়।

বিজ্ঞাপন

গানটি শুনতে ক্লিক করুন—

নাবিহার বাবা স্থপতি সাব্বির আরেফিন তালুকদার মেয়ের গান গাওয়া নিয়ে ভীষণই আনন্দিত। নাবিহার ভাষায়, ‘বাবা ভীষণ এক্সাইটেড।’ জানা গেল নাবিহার মা গান তো বটেই, নাচের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। আর বাবার বেশি ভালো লাগে গান। তাই মেয়ের প্রথম রেকর্ডেড মৌলিক গান ও মিউজিক ভিডিও বের হওয়া তার জন্য একইসঙ্গে আনন্দ ও গর্বের।

নিজের মিউজিক ভিডিও নাবিহার কাছে কেমন লাগলো— জানতে চাইলে লাজুক কণ্ঠে নাবিহা জানায়, সে রোজ রাতে এই গান শুনেই ঘুমাচ্ছে এখন। গানটি শুনলে মন শান্ত হয়ে আসে।

ইংরেজি মাধ্যমে পড়লেও নাবিহার বাংলা উচ্চারণে কোনো জড়তা না থাকা প্রসঙ্গে তার মা জানান, মেয়েকে ছোটবেলা থেকেই বাংলা সংস্কৃতির মধ্যেই বেড়ে তোলার চেষ্টা করছেন তারা। সেই থেকে নাচ-গান-আবৃত্তি করান। মেয়েরও ভালো লাগে। এর ধারাবাহিকতাতেই প্রথম মৌলিক গান করল নাবিহা।

গান ও মিউজিক ভিডিও রেকর্ড হয়েছে টি থ্রি মিউজিক স্টেশন ও ধৃতি নর্তনালয়ে। বিশেষ সহযোগিতায় ছিলেন সঙ্গীতা ইমাম, কবির মাহমুদ ও সনি চৌধুরী। গানটি শোনা যাচ্ছে ইউটিউবে র‍্যাবিটহোল বিডির মিউজিক চ্যানেল র‍্যাবিটহোল মিউজিকে।

শিশুশিল্পী নাবিহার প্রথম গান প্রকাশ সম্পর্কে র‍্যাবিটহোলের হেড অব অপারেশন্স নাজমুল আলম স্বরূপ জানান, র‍্যাবিটহোল মিউজিকের মাধ্যমে বাংলা সংগীত জগতকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান তারা। নাবিহা ইনায়া আরেফিনের প্রথম মৌলিক গান শোনার পর তাদের অত্যন্ত ভালো লাগে। অল্প বয়স হলেও নাবিহার গায়কী মুগ্ধ করে তাদের। সে কারণেই র‍্যাবিটহোল মিউজিকের প্রথম গান হিসেবে নাবিহার সোনালি রোদ প্রচার করছেন তারা।

সারাবাংলা/আরএফ/আইই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন