বিজ্ঞাপন

আন্দোলন দমাতে পুলিশ-ছাত্রলীগ, ঢাবি ক্যাম্পাসে ভীতি-উত্তেজনা

April 8, 2018 | 11:29 pm

।। ঢাবি করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলায় আন্দোলনকারী ও পুলিশসহ প্রায় অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় পুরো ক্যাম্পাস এলাকায় উত্তেজনা ও ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। এই হামলার প্রতিবাদে সোমবার (৯ এপ্রিল) সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

এখনও দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে, পুলিশের পক্ষ থেকে রাবার বুলেট, কাঁদুনে গ্যাস ছোড়া হচ্ছে। থেমে থেমে চলছে সংঘর্ষ। শাহবাগ এলাকায় যান চলাচল এখনও স্বাভাবিক হয়নি।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীদের ওপর হঠাৎ কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে এবং লাঠিপেটা করে পুলিশ। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েন। পালিয়ে যাওয়ার সময় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে আটক করে পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

কিছু সময় পরে আন্দোলনকারীরা সংগঠিত হয়ে ফের অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। এরপর থেকে থেমে থেমে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ চত্বর ছেড়ে টিএসসিতে গিয়ে অবস্থান নেন। কাঁদুনে গ্যাস থেকে বাঁচতে আন্দোলনকারীরা কয়েক জায়গায় আগুন জ্বালান।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে হঠাৎ করে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে ১০-১২ জন ছাত্রলীগ কর্মী আন্দোলনকারীদের ওপর ‍হামলা চালায়। এসময় বেশ কয়েকজন ঢাবি শিক্ষার্থী আহত হন। আরও আহত হন কয়েকজন পথচারী।

বিজ্ঞাপন

এরপর আন্দোলনকারীরা চারুকলা ইন্সটিটিউটের সামনের রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেন, অন্যদিকে পুলিশ অবস্থান নেয় গণগ্রন্থাগারের মূল ফটকের সামনের রাস্তায়। সেখান থেকে তারা দফায় দফায় রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে। পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট লেগে চোখের উপরে আঘাত পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক। এছাড়া বিক্ষোভকারীদের ইটের আঘাতে তিন পুলিশ সদস্যসহ বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন বাংলার ক্যামেরা পারসন মুনির আহমেদ আহত হন।

রাত ৮ টা থেকে সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত তিন ছাত্রসহ ৬ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন- হাইকোর্টের ব্যারিস্টার আওলাদ হোসেন (৫০), ঢাবি ছাত্র আকরাম হোসেন (২৬), আবুবকর সিদ্দিক (২২), রফিকুল ইসলাম (২৪), মাহফুজুর রহমান (২৭) এবং রাফি আলামিন (২৬)। ঢাকা মেডিকেল পুলিশ বক্সের ইনচার্জ (এসআই)বাচ্চু মিয়া এই তথ্য জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসের ভেতরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে। সাড়ে আটটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার বন্ধ হওয়ার পর যেসব শিক্ষার্থীরা হলে ফিরছিলেন তাদের ওপরও পুলিশ হামলা চালায়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পুলিশের রমনা জোনের উপকমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সর্দারসারাবাংলাকে বলেন, আন্দোলনকারীরা দীর্ঘক্ষণ ধরে রাস্তা বন্ধ করে রেখেছিলো। এতে জনসাধারণের অসুবিধা হচ্ছিলো। রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করা হলেও তারা তাদের অবস্থান অব্যাহত রাখে। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তাদেরকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হই। আন্দোলনকারীরা যেন জনগণের জান-মালের কোনো ক্ষতি করতে না পারে, তাই পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

কোটা সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও জেলা পর্যায়ে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছেন চাকরি প্রত্যাশীরা। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে- কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে ৫৬ ভাগ থেকে ১০ ভাগে নিয়ে আসা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে শূন্যপদে মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ দেয়া, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেয়া, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা নির্ধারণ করা এবং চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা।

কোটা সংস্কারের দাবিতে কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে গণ পদযাত্রা কর্মসূচির পর সারা দেশের প্রধান সড়কগুলোতে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। রোববার (৮ এপ্রিল) দুপর দুইটায় সারা দেশে পূর্বঘোষিত গণ পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণগ্রন্থাগারের সামনে থেকে গণপদযাত্রা শুরু হয়ে নীলক্ষেত, কাঁটাবন ঘুরে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, ঢাকা-কুমিল্লা মহাসড়ক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়ক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের মহাসড়ক অবরুদ্ধ করা হয়।

আরও পড়ুন

শাহবাগ থেকে আন্দোলনকারীরা ঢাবিতে, সংঘর্ষ চলছেই

কাঁদুনে গ্যাসে ছত্রভঙ্গ শাহবাগে আন্দোলনকারীরা

কোটা সংস্কার: মহাসড়কে আন্দোলনকারীরা
কোটা সংস্কারের দাবিতে শাহবাগে আন্দোলন

সারাবাংলা/এমআইএস/

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন