বিজ্ঞাপন

‘গোপনে’ চট্টগ্রামে এসে মধ্যরাতে ফিরে গেলেন মুরাদ

December 7, 2021 | 1:35 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সরকারি সংশ্লিষ্ট দফতরকে অবহিত না করে এবং প্রাপ্য প্রটোকল না নিয়ে ‘অগোচরে’ চট্টগ্রামে আসেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, যেদিন তিনি বিতর্কিত কথোপকথনের জন্য মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বার্তা পান। সেই বার্তা অনুসারে তিনি ই-মেইলে নিজ দফতরে পদত্যাগ পত্রও পাঠিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

গতকাল সোমবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের পাঁচতারকা রেডিসন ব্লু বে ভিউ হোটেলে আসেন প্রতিমন্ত্রী, আবার সন্ধ্যার পর হোটেল ত্যাগ করেন। আর মধ্যরাতে তিনি চট্টগ্রাম ছেড়ে গেছেন বলে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন।

জানতে চাইলে রেডিসন ব্লু বে ভিউ হোটেলের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক রাফাত সালমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হোসেন গতকাল (সোমবার) দুপুরের দিকে হোটেলে আসেন। উনার জন্য একটি রুম বুকিং করা ছিল। সেখানে তিনি অবস্থান করেন। সন্ধ্যার পর তিনি হোটেল থেকে চলে যান। সকালে আমরা খবর নিয়েছি। রাতে তিনি হোটেলে ছিলেন না।’

একটি সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটায় প্রতিমন্ত্রী মুরাদ রেডিসন হোটেলে চেক ইন করেন। রাত দেড়টার দিকে তিনি হোটেল কক্ষ ত্যাগ করে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। চট্টগ্রামে অবস্থানের সময় তিনি শুধু হোটেল কক্ষেই ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে প্রতিমন্ত্রী মুরাদের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির সঙ্গেও সারাবাংলার এ বিষয়ে কথা হয়। তিনি দাবি করেছেন, চট্টগ্রামে আসা-যাওয়ার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী তাকে কিছুই জানাননি। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, গত (সোমবার) রাতে প্রতিমন্ত্রী ঢাকায় নিজ বাসায় ছিলেন না।

তথ্য প্রতিমন্ত্রীর চট্টগ্রামে আসার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকেও অবহিত করা হয়নি। এ বিষয়ে অবগত না থাকায় তাকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোনো প্রটোকলও দেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, সোমবার দুপুরে বিমানে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। তবে বিমানবন্দরে দায়িত্বরতদের এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি।

বিজ্ঞাপন

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার ফরহাদ হোসেন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর বিমানবন্দরে আগমন বা অবস্থানের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি।’

জাইমা ইস্যুতে প্রতিমন্ত্রী বললেন— ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না

 

সাধারণত মন্ত্রিসভার সদস্যসহ সরকারি নিয়মে প্রটোকল পাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিদের সফরের আগে আঞ্চলিক তথ্য অফিস, জেলা প্রশাসন এবং নগর অথবা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখাকে অবহিত করা হয়। তবে প্রতিমন্ত্রী মুরাদের সফর নিয়ে কোনো সংস্থাই কিছু জানতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

আঞ্চলিক তথ্য অফিস, চট্টগ্রামের উপ-প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মীর হোসেন আহসানুল কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের কোনো সফরসূচি আমরা পাইনি। সাধারণত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিব কিংবা ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আমাদের কাছে সফরসূচি প্রেরণ করেন। কিন্তু গতকাল (সোমবার) এ ধরনের কোনো সফরসূচি আমাদের জানানো হয়নি। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন তথ্য অফিস, সেই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর সফর অবশ্যই আমাদের জানার কথা। এক্ষেত্রে আদৌ প্রতিমন্ত্রী মহোদয় এসেছিলেন কি না, সেটা আমরা জানি না।’

এ সংক্রান্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার ও নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মো. তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর সফরের বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়নি। কোনো সফরসূচিও আমাদের কাছে ছিল না। আমরা এ বিষয়ে অবগত ছিলাম না।’

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত ‍উপ-কমিশনার আরাফাতুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত ভিআইপিদের সফরের আগে আমাদের কাছে শিডিউল পাঠানো হয়। সে মোতাবেক আমরা নিরাপত্তা সংক্রান্ত সরকারি যে সুযোগ-সুবিধা তিনি প্রাপ্য সেটার ব্যবস্থা করি। যেহেতু প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের সফরের বিষয়ে আমরা অবগত ছিলাম না, তাকে সরকারি নিয়মের প্রটোকল দেওয়া যায়নি।’

গত শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) ফেসবুকে এক লাইভ অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী চলমান বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলছিলেন। ওই সময়ই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে কিছু মন্তব্য করে বসেন তিনি। মুহূর্তেই তার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে অভব্য, শিষ্টাচার বহির্ভূত, নারীবিদ্বেষী, কুরুচিপূর্ণ বলে অভিহিত করেন অনেকেই। সরকারের দায়িত্বশীল একটি পদে থেকে এমন বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়— এমনটি বলেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীও।

প্রতিমন্ত্রী নিজে অবশ্য এমন বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান-দাবি সবকিছুকেই নাকচ করে দেন। সারাবাংলার সঙ্গে আলাপে ডা. মুরাদ বলেছিলেন, ‘সমালোচকদের গালিগালাজ তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ নিজ দলের সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘উনারা নিজেদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেয়েও বড় নেতা মনে করেন।

এরপরই রোববার (৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে ডা. মুরাদ হাসানের একটি ফোনকল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। চিত্রনায়ক ইমন ও চিত্রনায়িকা মাহির সঙ্গে সেই কথোপকথনেও ডা. মুরাদকে অশালীন কথা বলতে শোনা যায়। মাহিকে হোটেল সোনারগাঁওয়ে তার ভাড়া করা রুমে আহ্বান জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিনি না এলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে তাকে তুলে নেওয়া হবে। ওই সময় তাকে যৌন সহিংস কথাবার্তা বলতেও শোনা যায়।

জাইমাকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য এবং ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় চরম বিতর্কের মুখে পড়েন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ। নারী অধিকারকর্মীসহ রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিবৃতি দিয়ে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রীর প্রতি। কোনো কোনো বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগও চাওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবহিত হওয়ার পর তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুন: একজন মন্ত্রীর সঙ্গে তো অশালীনভাবে কথা বলতে পারি না

সারাবাংলা/আরডি/এমও

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন