বিজ্ঞাপন

দ্রুত ছড়ালেও ভয়ংকর নয় ওমিক্রন: ড. বিজন

December 7, 2021 | 7:51 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ধারণার চেয়েও দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’, যা ইতিমধ্যে ৪৫টি দেশে শনাক্ত হয়েছে। তবে ডেল্টা ধরনের ন্যায় এটি ভয়ংকর নয়।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ‘কোভিড-১৯, ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন-ডেল্টা, ওমিক্রন’ বিজ্ঞান, নৈতিকতা ও বৈষম্য’ শীর্ষক সেমিনারে এই তথ্য জানান বিজ্ঞানীরা।

এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল। ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্যে কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং সশরীরে উপস্থিত থেকে বক্তৃতা করেন বিএসএমএমসইউ ফার্মাকোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক (ডা.) মো. সায়েদুর রহমান। সেমিনার পরিচালনা করেন গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার।

ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ‘ওমিক্রনকে ভয়ংকর ভাবার কারণ এর মিউটেশন। এখন পর্যন্ত ডেল্টা ধরনের সর্বোচ্চ ১৫টি মিউটেশন হয়েছে। সেখানে ওমিক্রনের হয়েছে ৫০টি। যার ৩২টি স্পাইক প্রোটিন। যা দিয়ে সে মানুষকে খুব কম সময়ে সংক্রমিত করে। এই যে ব্যাপক পরিবর্তন। এতে করে ধরনটি শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। আর এ জন্যই মনে করা হচ্ছে ওমিক্রন ডেল্টার চেয়েও ভয়ানক।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘ফিউরিন নামক একটি প্রোটিন পুরো ভাইরাসের বৈশিষ্ট্যকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। এটি সার্সকপ-১ এ ছিল না, তবে সার্সকপ-২তে আছে। এখন এটি যদি আরও বিস্তার লাভ করে তাহলে ডেল্টার চেয়েও মারাত্মক হতে পারে। তবে এই মুহূর্তে ডেল্টার মতো আতঙ্কিত হওয়ার মতো অবস্থায় যায়নি ওমিক্রন। তবে এটাই শেষ কথা নয়, খারাপ হতে পারে। আফ্রিকা থেকে অন্যান্য দেশে শনাক্তের পর এটি আরও শক্তিশালী হয়েছে। সংক্রমণ যত বাড়বে ততই এটি মারাত্মক হতে থাকবে।’

‘ইতোমধ্যে যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তারা অনেকটা সুরক্ষিত। তবে এর বিপরীতে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কতটুকু সেটি সম্পর্কে এখনো পর্যালোচনা চলছে’- বলেন এই গবেষক।

অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান খসরু বলনে, ‘এক দিনের লকডাউনে তিন হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। যদি বিনা টাকায় নমুনা পরীক্ষা করা যেত, প্রয়োজনে বাড়িতে গিয়ে পরীক্ষা করাতে পারতাম, তাহলে অর্থনীতি সচল থাকত। এই দেশে এমন অনেক মানুষ আছে, যাদের অর্ধেক বেলা খাবারে জন্য কাজ ফেলে আসা সম্ভব নয়। প্রয়োজনে পরীক্ষার জন্য মানুষকে টাকা দিতে হবে। তবেই আমরা লকডাউন নামক জঞ্জাল থেকে মুক্তি পাব।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘দেশের ১৫ কোটি মানুষকে ৩০ কোটি মাস্ক বিনামূল্যে দিতে কী সমস্যা? সাদা-লাল রংয়ের দুই ধরনের মাস্ক দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় প্রতিটি শহরে সাত দিনের মধ্যে মানুষকে সচেতন করা যায়। ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু করেন। এতে সরকারে পদক্ষেপ সম্পর্কে মানুষ জানতে পারবে, গুরুত্ব দেবে।’

ডা. সায়েদুর রহমান খসরু বলেন, ‘এখন রেস্টুরেন্টে গেলে ভ্যাকসিন সনদ চায়। আমরা জানি, নিবন্ধিত ৮০-৯০ লাখ এবং নিবন্ধন ছাড়া এখনো কয়েক কোটি মানুষ ভ্যাকসিনের বাইরে। আমাদের বুঝতে হবে, ঝুঁকি কার বেশি। ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের ভ্যাকসিন নিশ্চিত না করে কম বয়সীদের দেওয়া এবং বুস্টার ডোজ দেওয়া অনৈতিক। এটা বিজ্ঞান সম্মত নয়। যেখানে মৃতদের বেশির ভাগই বয়স্ক, সেখানে তারা ভ্যাকসিনের বাইরে থাকার তো কোনো কারণ নেই।’

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজনও সাইন্স (বিজ্ঞান) পড়েনি। মন্ত্রী সাহেবও বিজ্ঞান বোঝেন না, সেক্রেটারি সাহেবও কোনোদিন বিজ্ঞান পড়েছেন কি না জানি না। অথবা এখানে লেনদেনের সুবিধা নেই বলে তাদের সময় নেই। দ্বিগুণ দামে ভ্যাকসিন কিনতে উনাদের উৎসাহ অনেক বেশি। প্রায় ১৪ ডলার দিয়ে তারা ভ্যাকসিন কিনছেন প্লেনের ভাড়া ছাড়াই।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমাদের (গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র) একটাই অপরাধ- আমরা কিট নিয়ে ব্যবসা করতে চাইনি। মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ব্যবসা অত্যন্ত ঘৃণ্য অপরাধ বলে আমি মনে করি। খালেদা জিয়াকে জেলে রাখার থেকেও স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যবসা খারাপ অপরাধ। বর্তমানে সময় মেডিক্যাল সাইন্স এবং মেডিক্যাল পলিটিক্সটাকে আরও ভালোভাবে বোঝা দরকার।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন