বিজ্ঞাপন

ভারতীয় মায়ের শিশুসহ বাবাকে হাজিরের নির্দেশ

December 7, 2021 | 8:46 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ভারতীয় নাগরিক সাদিকা সাঈদ ও বাংলাদেশি নাগরিক শাহিনুর টিআইএম নবী দম্পতির তিন বছরের শিশু এবং তার বাবাকে অস্ট্রেলিয়া থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। টিআইএম নবীর বাবা টিম নবীকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) ভারতীয় নাগরিক সাদিকা সাঈদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী ফাইজা মেহরিন। অপরপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান।

এর আগে, গত ২৩ নভেম্বর সাদিকা সাঈদ ও শাহিনুর টিআইএম নবীর তিন বছরের শিশুকে নিয়ে বাবার দেশত্যাগের ঘটনায় শিশুর দাদা টিম নবীকে তলব করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে টিম নবী যেন দেশত্যাগ না করতে পারে, এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ফেসবুকে উচ্চ আদালত নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার ঘটনায় তাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া আদালতের আদেশ অমান্য করে শিশুকে নিয়ে দেশত্যাগ করায় বাবা শাহিনুর টিআইএম নবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন হাইকোর্ট। তার বাংলাদেশি পাসপোর্টের কার্যকারিতা সাময়িক স্থগিত করা হয়।

এর আগে, গত ২২ নভেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাদিকা সাঈদ ও শাহিনুর টিআইএম নবীর তিন বছরের শিশুকে নিয়ে দেশ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়া চলে গেছেন বাবা টিআইএম নবী।

আদালতে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার জানান, ১৬ নভেম্বর সকালে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে শিশুকে নিয়ে বাবা শাহিনুর টিআইএম নবী অস্ট্রেলিয়া চলে গেছেন।

বিজ্ঞাপন

ওইদিনই (১৬ নভেম্বর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তিন বছরের ওই শিশু সন্তানকে নিয়ে বাবার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। শিশুটির বাবা (শাহিনুর টি আই এম নবী) যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন সেজন্য ইমিগ্রেশন পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন আদালত। কিন্তু আদেশ কার্যকরের আগেই শিশুসহ বাবা বিদেশে চলে যান।

তারও আগে, গত ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট দুই মাসের জন্য ওই শিশুকে ভারতীয় নাগরিক মা সাদিকা সাঈদের হেফাজতে রাখার আদেশ দেন। আদালতের আদেশে বলা হয়, মা ও শিশু মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) ব্যবস্থাপনায় থাকবে। তবে বাংলাদেশি বাবা সপ্তাহে তিনদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিশুর সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। এ দুই মাস সাদিকা সাঈদের পাসপোর্ট গুলশান থানায় জমা রাখতে বলা হয়।

শিশুর মায়ের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম জানান, হাইকোর্টের আদেশের পর শিশু বাবা তার সন্তানকে উন্নত পরিবেশে গুলশান ক্লাবে রাখার ইচ্ছার কথা জানান। শিশুর মঙ্গলের কথা চিন্তা করে আমরাও রাজি হই। গুলশান ক্লাবেই শিশুর মাসহ অবস্থান করছিলেন। এক পর্যায়ে তিন বছরের ওই শিশুকে বেড়ানোর কথা বলে গুলশান ক্লাব থেকে নিয়ে যান বাবা। পরে শিশুকে গুলশান ক্লাবে মায়ের কাছে দিয়ে যাননি।

এরপর গত ১৪ নভেম্বর বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনা হলে আদালত ১৬ নভেম্বর সকালের মধ্যে শিশুকে আদালতে হাজির করতে বলেছিলেন। কিন্তু আদালতের আদেশ প্রতিপালন করা হয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ আদালত আগামী রোববারের মধ্যে শিশুসহ বাবাকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, ভারতের বিয়ে সংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকে অন্ধপ্রদেশের হায়দ্রাবাদের সাদিকা শেখ নামে এক নারীকে পছন্দ করেন রাজধানীর এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান শাহিনুর টি আই এম নবী। ২০১৭ সালে হায়দ্রাবাদে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর মালেশিয়ার কুয়ালালামপুরে বসবাস শুরু করেন তারা। কয়েক মাস পর ঢাকায় চলে আসেন। ২০১৮ সালে তাদের ঘরে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এক পর্যায়ে তাদের সংসারে অশান্তি নেমে আসে।

ভারতীয় মায়ের পক্ষের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ জানান, হাইকোর্টে মামলা দায়ের করার পরপরই বাংলাদেশি নাগরিক শাহিনুর টি আই এম নবী ভারতীয় নাগরিককে ডিভোর্স দিয়েছেন।

গত ৮ আগস্ট সাদিকা শেখ ও তার শিশু সন্তানসহ আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হেবিয়াস কর্পাস রিট করে ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের (ফ্লাড) পরিচালক আইনজীবী কাজী মারুফুল আলম ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষক লুলান চৌধুরী।

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন