বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা সঙ্কটের দ্রুত সমাধান চায় ভারত : গোখলে

April 9, 2018 | 12:29 pm

।। এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বাংলাদেশ সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেসব গোখলে বলেছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট এই অঞ্চলের নিরাপত্তা সমস্যা সৃষ্টি করছে। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চায় ভারত। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের চুক্তি হওয়াতে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে বলেও বিশ্বাস করে নয়াদিল্লি।

রোববার বিকেলে ঢাকা সফরে এসে সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি অভিযাত হোটেলে গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে তিনি একথা বলেন।

প্রায় দুই ঘণ্টা ব্যপ্তির এই বৈঠকের বেশিরভাগ সময়ই বাংলাদেশের মনোভাব জানতে শ্রোতার ভূমিকায় ছিলেন বিজয় কেসব গোখলে। বৈঠকে বেশিরভাগ সময়ই তিনি অন্যদের কথা শুনেছেন, নিজে বলেছেন অনেক কম কথা। বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলার সঙ্গে এই বিষয়ে আলাপ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা সংকটের পাশাপাশি বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তিস্তা চুক্তি, ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক, বাণিজ্য ও উন্নয়নসহ একাধিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। এ সময় উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ায় বাংলাদেশর প্রশংসা করেন বিজয় কেসব গোখলে।

অনানুষ্ঠানিক ওই বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে ভারতের সচিব জানান, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার অমীমাংসিত ইস্যূ তিস্তা নিয়ে কোনো আশার কথা জানাতে পারেননি বিজয় কেসব গোখলে। তিনি জানান, নয়া দিল্লি সরকার এই বিষয়ে পশ্চিম বাংলার সঙ্গে কাজ করছে।

বিজ্ঞাপন

বিজয় কেসব গোখলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক ওই বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, মাহজাবিন খালেদ এমপি, সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান এক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাস গুপ্ত, একাত্তর টেলিভিশনের চিফ এডিটর মোজাম্মেল বাবু, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তসহ আরও কয়েকজন। এ সময় বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলাসহ হাইকমিশনের একাধিক কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

গত জানুয়ারিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পাওয়ার পর বিজয় কেসব গোখলের এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর। এই সফরকে পরিচিতিমূলক সফর বলে জানিয়েছে ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বার্তায় জানিয়েছে, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেসব গোখলে সোমবার সকালে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। বৈঠকটি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা এবং মেঘনাতে অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দুই সচিব একাধিক বিষয়ে সমাঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করতে পারেন।

ঢাকা সফরে বিজয় কেসব গোখলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সোমবার সন্ধ্যায় সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে সোমবার দুপুরে এক সেমিনারে বক্তব্য দিবেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এই অঞ্চলের আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারত তার অবস্থান সুদৃঢ় করতে চায়। বিশেষ করে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সাম্প্রতিককালের সম্পর্কের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখছে ভারত। এই অঞ্চলের চালকের আসনটি অন্য কোনো দেশের হাতে দিতে চায় না মোদি সরকার। যে কারণে অতি সম্প্রতি সমুদ্র নিরাপত্তা ইস্যূতে ফ্রান্সের সঙ্গে বিশেষ চুক্তি করেছে ভারত।

এদিকে, ভারত বাংলাদেশকে বিশেষ বন্ধু মনে করে। আঞ্চলিক রাজনীতিতে ঢাকাকে নয়াদিল্লির পাশে চায় মোদি সরকার। কিন্তু বেইজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক নিয়ে চিন্তিত নয়া দিল্লি। গত দুই বছরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে এবং যে সকল সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে তার প্রতিও সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে নয়া দিল্লি। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতের গণমাধ্যমকর্মীদের স্পষ্ট করে বলেছেন যে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক শুধুমাত্র দেশের উন্নয়নের স্বার্থে। এতে ভারতের বিচলিত হওয়ার কিছু নাই।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, নয়া দিল্লি প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যে আশ্বস্ত হতে পারেনি। বাংলাদেশর সঙ্গে চীনের সম্পর্ক নিয়ে স্পষ্ট বার্তা পেতে চায় ভারত। বিজয় কেসব গোখলেও ঢাকা সফরে এসেও বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছেন। এই বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করে স্পষ্ট বার্তা জানার চেষ্টা চালাতে পারেন বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে। পাশাপাশি ভারতের পাশে বাংলাদেশের সরব সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালাবেন তিনি।

ভারতের কূটনীতিকরা বলছে, যে কোনো সময় থেকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বর্তমানে সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও নয়া দিল্লি ঢাকার পক্ষেই রয়েছে, এই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বোঝাতেই বিজয় কেসব গোখলে ঢাকা সফর করছেন।

সারাবাংলা/জেআইএল/আইএ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন