বিজ্ঞাপন

সোনার বাংলাদেশের পথে এগিয়ে যাব— এই হোক চাওয়া-পাওয়া: রাষ্ট্রপতি

December 16, 2021 | 9:27 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে এবং স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সবাইকে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে সবার চাওয়া-পাওয়া হোক জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা— এমন প্রত্যাশাই করেছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। এর আগে এখানেই জাতিকে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সমৃদ্ধির শপথ পড়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।

রাষ্ট্রপতি ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিটি কাজে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সব ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।

আরও পড়ুন- এই বিজয় উৎসব আগামী দিনে চলার পথের প্রতিজ্ঞা: প্রধানমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন

বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার প্রত্যয় জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির পিতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথে এগিয়ে যাব— মুজিব জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শুভক্ষণে এটাই হোক সবার চাওয়া-পাওয়া।

স্বাধীনতা দেশের সবচেয়ে বড় অর্জন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এই স্বাধীনতা হঠাৎ করেই আসেনি। এর পেছনে রয়েছে বহু বছরের শোষণ, নির্যাতন ও বঞ্চনার দীর্ঘ ইতিহাস। হাজার বছরেরও বেশি সময় শোষণ-বঞ্চনা, নির্যাতন-নিপীড়নের দুঃসহ পথ অতিক্রম করলেও বাংলা ভাষাভাষী এ জনপদের মানুষের কোনো স্বাধীন সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র ছিল না। দীর্ঘ ৯ মাসের লড়াই শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি ছিনিয়ে আনে মহাবিজয়। আর এ বিজয়ের পেছনে যে ব্যক্তিটি সার্বক্ষণিক নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তিনি আমাদের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু রাজনীতির পাঠ নিয়েছেন গণমানুষের কাছ থেকে। তিনি জনগণের ভাষা বুঝতেন, তাদের দাবি-দাওয়া ও প্রয়োজনের কথা জানতেন এবং সবসময় তাদের পাশে দাঁড়াতেন। বঙ্গবন্ধু অনুসৃত ‘কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব’ নীতি অনুসরণ করেই বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কূটনৈতিক অঙ্গনে সফলতার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।

বিজ্ঞাপন

ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানানো হয়

আবদুল হামিদ বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত করলেও থামিয়ে দিতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োচিত ও দূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ এখন নিয়ন্ত্রণে এবং সংক্রমণজনিত মৃত্যুর হারও শূন্যের কাছাকাছি। মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বমানবতার ইতিহাসে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করে। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানেও ভারতসহ বিশ্ব সম্প্রদায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, গৌরব ও ত্যাগের অনুপম বীরত্বগাথা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, যা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সম্ভব হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আর তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হচ্ছে।

ঢাকায় ভারতের রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, আপনাদের ঢাকায় স্বাগত জানাতে পারায় আমি আনন্দিত। ভারত আমাদের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী ও বিশ্বস্ত বন্ধুরাষ্ট্র। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের রাজনৈতিক নেতা ও জনগণ বাংলাদেশকে যে বিরাট নৈতিক ও বৈষয়িক সমর্থন দিয়েছিল, তা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

রামনাথ কোবিন্দের হাতে ‘মুজিব চিরন্তন’ শ্রদ্ধা স্মারক তুলে দেন শেখ রেহানা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর যে সমস্ত সদস্য নিহত হয়েছে তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি ২০২০ সালের ১৭ মার্চ ‘মুজিববর্ষে’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির ভিডিওবার্তার কথা স্মরণ করেন এবং পরবর্তী সময়ে এ বছরের ২৬ মার্চ মুজিববর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থাকায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে শুরু হওয়া দুই দেশের সম্পর্ক এখন নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ভারতের রাষ্ট্রপতির এই সফর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার করবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

এর আগে, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। অতিথিরা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে পরিবেশন করা হয় জাতীয় সংগীত। এরপর বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে পাঠ করা হয়।

আলোচনা পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা সম্মাননীয় অতিথির হাতে ‘মুজিব চিরন্তন’ শ্রদ্ধা স্মারক তুলে দেন।

এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা ও ইংরেজিতে প্রকাশিত দু’টি স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। স্মারকগ্রন্থগুলো সম্পাদনা করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পাদিত দুইটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়

এর আগে, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে দক্ষিণ প্লাজার অনুষ্ঠানস্থলে এসে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের আগমনের পর পরিবেশন করা হয় জাতীয় সংগীত। এরপর শপথবাক্য পাঠ করান বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে জাতীয় পতাকা হাতে আটটি বিভাগীয় শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সর্বস্তরের মানুষ এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ’সুরের ধারা‘র শিল্পীসহ অন্যান্য শিল্পীদের পরিবেশনায় ‘সাড়ে সাত কোটি মানুষের আরেকটি নাম মুজিবর’ গানের মধ্য দিয়ে শপথ অনুষ্ঠান শেষ হয়। পরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়, রাত ৮টা পর্যন্ত চলে।

দুই দিনের আয়োজন ঘিরে লাল-সবুজের থিমে বর্ণিলভাবে সাজানো হয়েছে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা। লাল-সবুজের বর্ণিল সাজে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। সংসদ ভবনকে পশ্চাদপটে রেখে মঞ্চ সাজানো হয়েছে। সংসদ ভবনে ফুটে উঠেছে মুজিব শতবর্ষের লোগো এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর লোগো।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন