বিজ্ঞাপন

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীর সব খরচ কোম্পানি দেবে

December 19, 2021 | 1:42 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সিন্ডিকেট বাণিজ্য, করোনাভাইরাসসহ নানা কারণে প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ থাকা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলে দেওয়া হলো। রোববার ( ১৯ ডিসেম্বর) দেশটির রাজধানী কুয়ালালামপুরে এক আনুষ্ঠানিক সমঝোতা স্মারক সইয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানোর বাধা কেটে গেল।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং প্রত্যাবাসনের আদর্শ কাঠামো প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমিকদের কর্মসংস্থান একটি অন্যতম সহযোগিতার ক্ষেত্র এবং পারস্পরিকভাবে উপকারী বলে উভয় দেশ বিশ্বাস করে।

এই চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়া প্রান্তের সব খরচ নিয়োগকর্তা বা কোম্পানিকে বহন করতে হবে। মালয়েশিয়ান রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি নিয়োগ, মালয়েশিয়ায় নেওয়া, আবাসন, কর্মে নিয়োজন এবং কর্মীর নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর খরচ কোম্পানি বহন করবে।

চুক্তি অনুযায়ী- নিয়োগকর্তা নিজ খরচে মালয়েশিয়ান রিক্রুটিং এজেন্ট নিযুক্ত করতে পারবেন। মালয়েশিয়ায় আসার পর বাংলাদেশি কর্মীর ইমিগ্রেশন ফি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ, ইনস্যুরেন্স সংক্রান্ত খরচ, করোনা পরীক্ষার খরচ, কোয়ারেন্টাইন সংক্রান্ত খরচসহ সব ব্যয় মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা/কোম্পানি বহন করবে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন:  বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য দুয়ার খুলে দিলো মালয়েশিয়া

চুক্তি অনুযায়ী নিয়োগকর্তা কর্মীর মানসম্মত আবাসন, বীমা, চিকিৎসা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করবে। ফলে আশা করা যায় কর্মীর অভিবাসন খরচ অনেক কমে যাবে।

মধ্যপ্রাচ্যের পর বাংলাদেশের অন্যতম বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। কিন্তু কিছু বেসরকারি জনশক্তি রপ্তানিকারকদের প্রভাব আর সে প্রভাব সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় গত প্রায় তিন বছর ধরে দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, সবশেষ ঘটা করে পৌনে দুই লাখ কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠানো গিয়েছিলো ২০১৮ সালে। এরপর ১০ টি রিক্রুটিং এজেন্সি সিন্ডিকেট করে দেশটিতে উচ্চ অভিবাসন হারে কর্মী পাঠাতে দুই দেশের সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নেয়। ওই পরিস্থিতিতে অন্য রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরা তীব্র প্রতিবাদ তোলেন। ফলে ওই বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে মালয়েশিয়া সরকার। এরপর দফায় দফায় বৈঠক করেও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা সম্ভব হয়নি।

এরমধ্যে ২০২০ সালে শুরু হলো করোনাভাইরাসের মহামারি। তখন প্রায় সব দেশই স্বাভাবিকভাবে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রাখে। এরপর চলতি বছরে করোনার প্রকোপ কমে আসার পর থেকেই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার জন্য সরকার নানা দেনদরবার শুরু করে। গত ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে এ নিয়ে এক ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সে বৈঠকে দেশটির শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার একধাপ এগিয়ে যায়। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে গত ১০ ডিসেম্বর প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর বরাবরে আমন্ত্রন পাঠায় মালয়েশিয়া সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতেই নতুন করে সমঝোতা স্মারকে সই হলো।

এ সময় যৌথ এক সংবাদ ব্রিফিং এ জানানো হয় এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং প্রত্যাবাসনের আদর্শ কাঠামো প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমিকদের কর্মসংস্থান একটি অন্যতম সহযোগিতার ক্ষেত্র এবং পারস্পরিকভাবে উপকারী বলে উভয় দেশ বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের কর্মীরা যেমন মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে, তেমনি বাংলাদেশের উন্নয়নেও অবদান রেখে যাচ্ছে যা উভয় দেশ স্বীকার করে।

উভয় দেশের আইন, বিধি, প্রবিধান, জাতীয় নীতি এবং নির্দেশাবলীর আলোকে এই সমঝোতা স্মারকে কর্মীদের অধিকার ও মর্যাদাকে অধিকতর সুরক্ষিত থাকবে।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো- বিএমইটি’র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ৯৯ হাজার ৭৮৭ জন কর্মী মালয়েশিয়া পাঠানো হয়।২০১৮ সালে পাঠানো হয় ১ লাখ ৭৬ হাজার কর্মী।

কর্মী রফতানির নামে দুই দেশে গড়ে ওঠা চক্রের কারণে এরপর থেকে বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। অথচ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

আর সে চাহিদা ভারত, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া এমনকি চীনের কর্মীদের দখলে চলে যাচ্ছে।

সারাবাংলা/জেআর/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন