বিজ্ঞাপন

ব্যবসা বাড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে বুটক্যাম্পে ৩৩ নারী উদ্যোক্তা

December 24, 2021 | 11:35 pm

রাজনীন ফারজানা, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর

ঢাকা: টাঙ্গাইলের হিমু খান। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। কোনো ব্যবসায়িক উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত নন, তবে বেশকিছু আইডিয়া রয়েছে মাথায়। সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সেটি শিখতেই এসেছেন বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) আয়োজিত বুট ক্যাম্পে। নেটওয়ার্কিং তৈরিও তার আরেকটি উদ্দেশ্য। কার কার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ালে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন, সেটিও জানতে পারছেন এখানে থেকে।

বিজ্ঞাপন

হিমু খান বলছেন, প্রযুক্তিনির্ভর আইডিয়া আর ব্যবসায়িক পরিকল্পনা— এ দুইয়ের সমন্বয় শিখতে চান। তার ইচ্ছা, সরকারের অ্যানালগ পদ্ধতি যা বর্তমানে পেপারবেজড, তাকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথা মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে রূপান্তর করা। সেই পরিকল্পনা কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সেটিই এই বুটক্যাম্প থেকে শিখতে চান তিনি।

কারুশিল্পী সালমা জাহান নিপা এসেছেন সিরাজগঞ্জ থেকে। নিপা’স ক্রিয়েশন নামে অনলাইন ও ঘরোয়া বুটিকসের মাধ্যমে হ্যান্ড পেইন্টের পোশাক বিক্রি করেন। ছেলেদের পাঞ্জাবি, কাতোয়া ছাড়াও মেয়েদের শাড়ি, থ্রিপিস ইত্যাদিতে হ্যান্ড পেইন্টের কাজ করেন। বুটক্যাম্পে এসেছেন প্রথমবারের মতো। অনলাইনে বুটক্যাম্পের খবর দেখে ভেবেছিলেন, এখানে এসে ডিজিটাল মার্কেটিংসহ অনলাইনে নিজের ব্যবসা সম্প্রসারণ নিয়ে নতুন কিছু শিখতে পারবেন। পাশাপাশি অনেকের সঙ্গে যোগাযোগও তৈরি হবে। তিন দিনের প্রশিক্ষণ শেষে নিজের ব্যবসাকে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের বাজারে নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি।

চট্টগ্রাম থেকে আসা নাসরিন দু’টি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী— একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত, অন্যটি রেডি টু কুক ফুড নিয়ে। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ালেখা করে এখন আইটি নিয়ে কাজ করছেন। এসএন আইটি সল্যুশন্সের মাধ্যমে টালি অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করছেন। আবার ‘রকমারি ঘরোয়া পণ্য’ দিয়ে কর্মজীবী দম্পতিদের জন্য সরাসরি রান্নার উপযোগী খাদ্য উপকরণ সরবরাহ করছেন। দুইটি ব্যবসাকেই আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা তার।

বিজ্ঞাপন

জানালেন, বুট ক্যাম্প থেকে ব্যবসা পরিচালনা সংক্রান্ত বিভিন্ন আইনি সমস্যা মোকাবিলা করার উপায় জানতে পারছেন। ব্যবসায়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন সংগ্রহ এবং মানবসম্পদ সামলানোর উপায়ও শিখছেন। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের কাছে নিজের আইডিয়া পিচ করার পদ্ধতিও শিখছেন। এর সঙ্গে নিজেদের উদ্যোগকে টেকসই ও বিশ্বাসযোগ্য করার উপায়ও জানতে পারছেন এই বুট ক্যাম্প থেকে।

উত্তরাঞ্চলের জেলা নীলফামারী থেকে বুটক্যাম্পে এসেছেন মুনজিবা আফরীন। কাজ করছেন অ্যাপ ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন ও অ্যাপ তৈরি নিয়ে। নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করার পর নিজ জেলাতেই সরকারের আইসিটি বিভাগের আয়োজন থেকে আইটি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখন বুটক্যাম্পে পাওয়া শিক্ষা কাজে লাগিয়ে এলাকার অন্যান্য মেয়েদের জন্য প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তুলতে চান। বাল্যবিয়েসহ নানা কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে যাওয়া যেসব মেধাবী মেয়ে কিছু একটা করতে চায়, তাদের সুযোগ তৈরি করে দিতে চান মুনজিবা।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে এসেছেন শারমিন আলম। এর আগে অনলাইনে অনুষ্ঠিত বুটক্যাম্প থ্রি-তেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তার ব্যবসায়ের শুরুতে অফলাইনে হলেও কোভিড-১৯ মহামারি পরবর্তী সময়ে অনলাইনে শুরু করেন। শুরুতে কেবল বেচাবিক্রিটুকুই বুঝতেন। এখন বুটক্যাম্পে অংশ নিয়ে একটি ব্যবসা কীভাবে চালাতে হয়, তার প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান অর্জন করেছেন তিনি। সেটি কাজে লাগিয়ে তার উদ্যোগকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যেতে চান তিনি।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা শিল্পী তালুকদার মূলত বগুড়ার মানুষ। পুরোপুরি গৃহিণী থেকে উদ্যোক্তা বনে গেছেন। বগুড়া ব্র্যান্ড পেজের মাধ্যমে বগুড়ার দই, ঘরে তৈরি ঘি, খেজুর গুড় বিক্রির পাশাপাশি অনলাইনে টেইলারিং সেবা দিচ্ছেন। বুটক্যাম্পের মাধ্যমে ব্যবসাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার শিক্ষা পাচ্ছেন তিনিও। ব্যবসায়ের আইনি প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে আরও নানা আনুষঙ্গিক বিষয়ে পাচ্ছেন হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ, যা দিয়ে তার ব্যবসাকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন শিল্পী।

হিমু, নিপা, নাসরিন, মুনজিবা, শারমিন ও শিল্পীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল বিডিওএসএন আয়োজিত তিন দিনের বুটক্যাম্পের দ্বিতীয় দিনে। ‘গার্লস ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনার’ শিরোনামের বুটক্যাম্পটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে লালমাটিয়ার আপন উদ্যোগ ফাউন্ডেশনে।

বিজ্ঞাপন

ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তিখাতের নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করে বিডিওএসএন। তারই ধারাবাহিকতায় তরুণ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য তিন দিনের এই বুটক্যাম্পে আইটি খাতের শীর্ষ কয়েকজন নারী ছাড়াও আইসিটি এক্সপার্ট, নীতিনির্ধারকসহ অনেকেই তাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও দিক নির্দেশনার মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

তিন দিনের ক্যাম্পে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ৩৩ জন নারী উদ্যোক্তা অংশ নিচ্ছেন। আবাসিক সুবিধাসম্বলিত এই বুটক্যাম্পের মাধ্যমে স্টার্টআপ শুরুর বেসিক আইডিয়া থেকে শুরু করে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম পার্টনার সম্পর্কে জানা ও বিনিয়োগকারী সম্পর্কে ধারণা রাখা ছাড়াও এসব নতুন উদ্যোক্তাদের আইডিয়াগুলো সঠিক নির্দেশনা দেওয়া, গ্যাপগুলো খুঁজে বের করে সে অনুয়ায়ী সমাধানের উপায় শেখানো হচ্ছে।

বিডিওএসনের প্রোজেক্ট ইএসডিজি ফর বিডি’র আন্ডারে চলছে এই বুটক্যাম্প। তরুণ নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে এটি তাদের চতুর্থ উদ্যোগ। প্রজেক্ট ম্যানেজার জাহানারা আমির সারাবাংলাকে বলেন, তরুণ উদ্যোক্তারা মূলত মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোগ নিয়ে কাজ করেন, যারা বড় পরিসরে যাওয়ার সুযোগ পান না বা জানেন না কীভাবে ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে হবে। এখানে ব্যাবসায়িক পরিকল্পনা করা, সেগুলো বাস্তাবায়নের উপায় শেখানোর পাশাপাশি ফান্ডিং পেতেও সাহায্য করা হয়।

প্রশিক্ষক হিসেবে বুটক্যাম্পের দ্বিতীয় দিন এসেছেন গ্রামীণফোনের শেয়ারড সার্ভিসেস ও পিপল অ্যান্ড অরগানাইজেশন ডিভিশনের ডেপুটি ডিরেক্টর শায়লা রহমান। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, এই বুটক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী তরুণরা অনেক কিছু জানেন ও বোঝেন। আমরা কেবল তাদের মাথায় সাফল্য পাওয়ার জন্য আরও কিছু শব্দ গেঁথে দিচ্ছি, যেন তারা সঠিক দিকনির্দেশনা পান। ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে আমাকে যেসব বাধা ও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে, সেগুলো তাদের সঙ্গে শেয়ার করছি, যেন তারা শুরুতেই সেগুলো সম্পর্কে জেনে সেগুলো এড়িয়ে যাওয়ার পথ বের করতে পারেন। এতে তাদের চলার পথ আরও মসৃণ হবে।

চার-পাঁচ বছর ধরে এমন প্রশিক্ষণ করাচ্ছেন শায়লা। তার অভিজ্ঞতা বলছে, ঢাকার বাইরে থেকে আসা মেয়েরা কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। কিছু অনভিজ্ঞতা, দক্ষতার ঘাটতি বা ইন্টারনেট সংযোগসহ যোগাযোগের সমস্যা থাকলেও মেধা, ইচ্ছা, চেষ্টা ও আগ্রহে ঘাটতি নেই তাদের। সুযোগ পেলে বরং তারা সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবেন বলেই মনে করেন গ্রামীণফোনের এই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন