বিজ্ঞাপন

‘এই অর্জন অবিস্মরণীয়’

January 5, 2022 | 4:47 pm

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট

পৌষের শেষভাগে সকালটা একটু বেশিই মিস্টি। ঠান্ডার সকালে সূর্য মাথা চাড়া দিয়ে উঠার সময়টা বড্ডই উপভোগ্য। বাংলাদেশের ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট, সমর্থকদের জন্য আজকের সকালটা নিশ্চয় আরও মিস্টিই ছিল! সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই যে মিলেছে অবিস্মরণীয় এক সংবাদ, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

দুদিন আগেও এ কথাটা কেউ বললে হয়তো পাগলেই প্রলাপই মনে হতো! কারণ সব দিক মিলিয়ে দুদলের পার্থক্য যোজন যোজন। নিউজিল্যান্ড বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। তাদের দলে ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, কাইল জেমিসন, নিল ওয়াগনারের মতো পেসার আছেন, যাদের আক্রমণকে পেচ বান্ধব উইকেটে মনে করা হচ্ছে বিশ্বসেরা। অন্যদিকে বাংলাদেশের অবস্থা যাচ্ছে-তা।

সেরা তিন পারফরমার সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নেই দলে। মাহমুদউল্লাহ অবসরই নিয়ে নিয়েছেন টেস্ট থেকেই। তামিম নেই ইনজুরির কারণে। সাকিব ছুটি নিয়েছেন এই সিরিজ থেকে। টেস্টে বরাবরই বাজে ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশের দুর্বলতা তাতে আরও বেড়েছিল।

ব্যাটিং অর্ডার নিয়েই ছিল বড় চিন্তাটা। তারুণ্যনির্ভর টপ অর্ডার বারবার ব্যর্থ। রান পাচ্ছিলেন না অভিজ্ঞ মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিমও। তাছাড়া সিরিজের আগে ৭ দিনের বদলে ১১ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রুমবন্দি থাকতে হয় ক্রিকেটারদের। পরিসংখ্যানও ছিল বিপক্ষে। এর আগে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে নিউজিল্যান্ডে দলটির বিপক্ষে ৩২ ম্যাচ খেলে একটিও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। গত এক দশক এশিয়ার কোনো দল নিউজিল্যান্ডে টেস্ট জিতেনি। ২০১৭ সালের মার্চ থেকে ঘরের মাঠে ১৭ ম্যাচ খেলে অপরাজিত ছিল নিউজিল্যান্ড। এতোকিছুর পরও কে-ই বা ভেবেছিল মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডকে হারাবে বাংলাদেশ। কিন্তু মুমিনুল হকের দল সেটিই করে দেখিয়েছে। এই জয় অবিস্মরণীয়।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলাকে তেমনটিই বলছিলেন সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক প্যানেলের সদস্য হাবিবুল বাশার সুমন। তিনি বলেন, ‘এটা নিশ্বন্দেহে অবিস্মরণীয় জয়। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে তাদেরকে হারানো অনেক কঠিন একটা কাজ। এই জয়টা আমাদের ভবিষ্যত ক্রিকেটকে অনেক অনেক আত্মবিশ্বাস দিবে। এসব জয় ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়াতে বড় ভূমিকা রাখে।

আপনি নির্বাচক প্যানেলে যুক্ত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ অনেক ম্যাচই জিতেছে। তার মধ্য থেকে এই জয়কে কোথায় রাখবেন? এমন প্রশ্নে হাবিবুল বাশার বলেন, ‘এটাকে (নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়) সবার সেরা অবস্থানে রাখব। আমি নির্বাচক হওয়ার পর থেকে দল যতো জয় পেয়েছে তার মধ্য থেকে এটা সেরা।’

দুই ইনিংস মিলিয়ে ৭ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় জয়ের মূল কারিগর ইবাদত হোসেন। অথচ এই ম্যাচের আগে ১০ টেস্ট খেলে মাত্র ১১ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ইবাদত প্রসঙ্গে হাবিবুল বলেন, ‘ইবাদতের যে সামর্থ আছে সেটা সে প্রমাণ করেছে। দেখেন উইকেট নেওয়ার সামর্থ আছে কিনা সেটা বিবেচনা করেই কিন্তু একজন বোলারকে নেওয়া হয়, কারণ টেস্ট ক্রিকেটে উইকেট নিতেই হবে। ইবাদত দিনের পর দিন উইকেট না পেলেও আমরা তাকে সমর্থন দিয়ে রেখেছি কারণ তার সামর্থ আছে। সেটার একটা প্রতিফলন দেখতে পেলাম এই ম্যাচে। আমি বলব তিনজন পেসারই (ইবাদত, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম) ভালো বোলিং করেছে। এবং বাংলাদেশকে টেস্টে ভালো করতে হলে এই তিনজনকেই ভালো করতে হবে। তাদের সামর্থও আছে।’

বিজ্ঞাপন

সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলটের মতে, এই জয় কোনো ট্রফি জয়ের চেয়ে কম নয়। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এই জয় কোনো ট্রফি জয়ের চেয়ে কম না। দেশের মাটিতে আমরা যে সিরিজ জিতি, সেগুলোর চেয়ে এই জয়টা বড় আমার মনে হয়। দুই ডিপার্টমেন্টেই (ব্যাটিং-বোলিং) দারুণ খেলেছে। সব মিলিয়ে এটা মনে রাখার মতো এক জয়।’

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ২১ বছরের ইতিহাসে যতো সাফল্য তা দেশের মাটিতেই। দেশের মাটিতে নিজেদের মতো করে স্পিনবান্ধব উইকেট বানিয়ে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ক্রিকেটের এই সংস্করণে বিদেশের মাটিতে টেস্ট মানেই ভরাডুবি। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে পাওয়া স্মরণীয় জয় সেই ব্যর্থতার ইতিহাস পাল্টাতে সাহায্য করবে হয়তো।

সারাবাংলা/এসএইচএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন