বিজ্ঞাপন

ভোট চুরি করলে জনগণ ছেড়ে দেয় না: শেখ হাসিনা

January 12, 2022 | 12:13 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ওই নির্বাচনই প্রমাণ করে— ভোট চুরি করলে জনগণ কাউকে ছাড় দেয় না।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, আজ যারা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার পদত্যাগের কথা। তাদের তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী তো দেড় মাসেও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। কারণ ভোট চুরির অপরাধে নাকে খত দিয়ে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। পদত্যাগ করতে যাবে রাষ্ট্রপতি ভবনে, জনগণের পারমিশনে তাকে যেতে হয়েছিল। ভোট চুরি করলে জনগণ ছেড়ে দেয় না।

মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস এবং দেশের ইতিহাসের নির্বাচনগুলোর কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জাতির পিতার দেশ গড়ার সংগ্রাম এবং স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির হাতে তার নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ‘ভোটের অধিকার নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলেছে, তারা শাস্তি পেয়েছে’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যেন কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে, পরনির্ভরশীল না হয়ে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারে, আত্মমর্যাদাশীল হয়ে বাঁচতে পারে, সেই চেষ্টাই করেছিলেন জাতির পিতা। ঘুণে ধরা সমাজ ভেঙে একটি নতুন সমাজ বিনিমার্ণের পদক্ষেপ যখনই নিতে গেলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। যে মানুষটার বুকভরা ভালোবাসা ছিল বাংলাদেশের মানুষের জন্য, যে মানুষগুলো আমাদের ঘরে বসে খেয়ে-পরে গেল, তারা কীভাবে ওই বুকে গুলি চালায়? বাংলাদেশের মাটি তো অনেক উর্বর। এখানে যেমন ভালো মানুষও জন্মে, অনেক পরগাছাও জন্মে। তেমনি বেঈমান-পরগাছাও এ দেশে ছিল। তাদের ইচ্ছা ছিল এ দেশ যেন আর উন্নতি করতে না পারে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল এরা।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু ফিরে এলেন। তারপর থেকেই কিছু কিছু লোকের ‍শুরু হলো নানা ধরনের সমালোচনা। এই হচ্ছে না, সেই হচ্ছে না। তারা একবারও ভেবে দেখল না, এই দেশটি ছিল পরাধীন। ব্রিটিশের গোলামি করেছে, তারপর ২৩ বছর পাকিস্তানিদের গোলামি করতে হয়েছে। এরপর আমাদের মুক্তিযুদ্ধ করতে হয়েছে। একটি প্রদেশকে তিনি রাষ্ট্রে উন্নীত করেছেন। ধীরে ধরে সেই দেশকে তিনি উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাকে সময় দেওয়া হল না। যারা সেই সময় এরকম কলাম লিখেছেন বা আন্দোলন ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে এ ধরনের পরিস্থিতির তৈরি করেছেন, তারা কী ভেবেছিলেন? তারা কী করতে চাচ্ছিলেন? সে প্রশ্নের উত্তর এখনো পাই না!

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পর হত্যা-ক্যু ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা কী দিয়েছে দেশকে? আমি জানি, অনেকেই গালভরা বুলি দিয়েছে। কিন্তু তারা গণতন্ত্র দিয়েছে? আজ নির্বাচন নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন থাকলো। পঁচাত্তরে পর তো সংবিধান লঙ্ঘন করে মার্শাল ল’ জারি করে ক্ষমতা দখল করা হয়েছিল। বারবার ক্যু হয়েছে। সেনাদের হত্যা করা হয়েছে। এরপর রাজনীতি করার শখ। সেই রাজনীতির খায়েশ মেটানোর জন্য মিলিটারি ডিটেকটররা প্রথমে ‘হ্যাঁ – না’ ভোট করল। সেই ভোটের বাক্সে কি ‘না’ ভোট পড়ার সুযোগ ছিল? সবই তো ‘হ্যাঁ’ পড়ার ছিল। সেই ‘হ্যাঁ’-ই পড়েছে।

এরপর ১৯৭৭ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বলেন, একদিকে আমাদের সংবিধান লঙ্ঘন করেছে, আরেকদিকে সেনা আইন ভঙ্গ করেছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছে ক্ষমতায় বসে, একদিকে উর্দি পরা সেনাপ্রধান, আরেক দিকে রাষ্ট্রপতি। স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি, অবৈধভাব ক্ষমতা দখলকারী। সেই নির্বাচনে জনগণ কি ভোট দিতে পেরেছিল? সেখানে ভোট ছিল কোথায়? তারপর আবার দল গঠন করা হলো। ক্ষমতায় বসে ক্ষমতার উচ্ছ্বিষ্ট বিলিয়ে গঠন করা সেই দলেরই নাম বিএনপি।

এরপর ১৯৮১ সালের নির্বাচন, ১৯৮৬ সালের নির্বাচন এবং ১৯৯১ সালের নির্বাচনের কথাও তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বলেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না। রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন সাহেব প্রস্তাব দিয়েছিলেন, জামায়াত আর জাতীয় পার্টি সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে হবে। কিন্তু মেজরিটি পাইনি দেখে আমি প্রস্তাবে রাজি হইনি। আমি বলেছি, এই দুর্বল অবস্থায় আমি ক্ষমতায় যেতে চাই না। কারণ আমার ক্ষমতার প্রয়োজন দেশের উন্নয়ন করা। ওই সময় জামায়াতের সহযোগিতায় সরকার গঠন করে বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই নির্বাচনের কথা মানুষ ভুলে যায় কীভাবে? আজ আমাদের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে যারা, ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন যারা করে, তাদের আমি জিজ্ঞাসা করি— ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া কেমন নির্বাচন করেছিল? কয় পার্সেন্ট ভোট পড়েছিল? ৪ পার্সেন্ট ভোটও পড়েনি। সব জায়গায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করে দিয়ে ভোটের বাক্স সিল দিয়ে ভরে খালেদা জিয়া নাকি তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী! কিন্তু জনগণের ভোট চুরি করেছিল বলে কী হয়েছিল তার পরিণতি? অভ্যুত্থান হয়েছিল, আন্দোলন হয়েছিল, সংগ্রাম হয়েছিল। সেই সংগ্রাম-আন্দোলনের মধ্যে খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে। ১৫ ফেব্রুয়ারি হয় নির্বাচন, আর ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় গণআন্দোলনের মুখে।

এরপর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে দেশে স্বর্ণযুগ এসেছিল বলে মন্তব্য করেছে শেখ হাসিনা। তবে ২০০১ সালের নির্বাচন ঘিরে ফের চক্রান্তের শিকার হয়ে ক্ষমতা থেকে আওয়ামী লীগকে ছিটকে পড়তে হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এর পেছনে আন্তর্জাতিক মহল জড়িত ছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, কারণ ছিল একটাই— গ্যাস ফিল্ড থেকে আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন করে আমেরিকান কোম্পানি, ভারতের কাছে সেই গ্যাস বিক্রির অনুমতি দিতে হবে। আমি রাজি হইনি। দেশের সম্পদ জনগণের কাজে না লাগিয়ে অন্যের কাছে বিক্রি করব— এটি আমর নীতির বিরুদ্ধে। এই শিক্ষা আমার বাবা আমাদের দেয়নি। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটন এলেন। একই প্রস্তাব দিলেন। তাকেও আমি একই উত্তর দিয়েছি। আমাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গেলেন আমেরিকায়। আমি সেখানেও একই উত্তর দিয়েছি। এর পরিণতিতেই আওয়ামী লীগ ওই নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে পারেনি বলে শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান ও রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম; কেন্দ্রীয় সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া; সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম; এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও আবু আহমেদ মান্নাফী। গণভবন প্রান্ত থেকে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন