বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মধ্য রাতে ঢাকায় আসছেন মিয়ানমারের মন্ত্রী

April 10, 2018 | 9:21 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: রোহিঙ্গা ইস্যূতে মিয়ানমারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী ড. উইন মায়াত আতায় মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঢাকায় আসছেন। গেল বছরের মাঝামাঝি রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরু হওয়ার পর এবারই কোনো মন্ত্রীকে এ ইস্যুতে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে দেশটি। এর আগে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরে এলেও সে সময় আলোচনার বিষয় ছিলো নিরাপত্তা সংক্রান্ত।

ঢাকা-নেপিডো সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে বুধবার সকালে বিশেষ বিমানে তিনি কক্সবাজার যাবেন। সেখানে রোহিঙ্গা শিবিরগুলো পরিদর্শন করবেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশের শরণার্থী, ত্রাণ এবং পূর্ণবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম মিয়ানমারের মন্ত্রী ড. উইন মায়াত আতায়ের সঙ্গে থাকবেন।

পরদিন বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পররাষ্টমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে পৃথক দুইটি বৈঠক করবেন মন্ত্রী ড. উইন মায়াত আতায়। এদিন দিবাগত রাত ১২ টা ৫০ মিনিটে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাখাইনে মুসলমান রোহিঙ্গাদের পুড়িয়ে দেয়া বসত ভিটা দখল নিতে বাংলাদেশের বৌদ্ধদের প্রলুব্ধ করছে নেপিডো।  এরই মধ্যে বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ৫৫ উপজাতি পরিবারকে রাখাইনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বৌদ্ধদের খাবার, বাসস্থান এবং জীবন-যাপনের লোভনীয় প্রস্তাব দেয়ার কথা বলে হচ্ছে। সে অনুযায়ি মিয়ানমার কাজ করছে বলে জানা গেছে।

থানচির স্থানীয় কাউন্সিলর মুই শৈ থুই আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানান, গত মার্চে অত্যন্ত দরিদ্র ২২ টি বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান ধর্মীয় উপজাতি পরিবার তাদের গ্রাম ছেড়ে রাখাইনে চলে গেছে। দরিদ্র উপজাতি পরিবারগুলোকে উন্নত জীপন-যাপনের নিশ্চয়তার কথা বলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নিয়ে গেছে।

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানান, বিনামূল্যে বসতবাড়ি এবং কমপক্ষে ৭ বছর বিনামূল্যে খাবার দেয়া হবে, এই বলে ৫৫টি আদিবাসী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পরিবারকে রাখাইনে নিয়ে গেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, মিয়ানমারের সমাজ কল্যান মন্ত্রী ড. উইন মায়াত আতায়’র সফরে এই বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নেপিডোর পক্ষ থেকে এখনো আন্তরিক কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তবে বিভিন্ন অজুহাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অকার্যকর করতে মিয়ানমারের নেয়া কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করার মতো।

প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা কয়েকমাস আগেই ঢাকা থেকে নেপিডোকে দেয়া হয়েছে। এতো বড় তালিকা কেন, এই বলে তালিকাটি প্রথম দেয়ার পর নেপিডো থেকে ঢাকাকে নেতিবাচক বার্তা দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ঢাকা থেকে যথাযথ জবাব দেয়া হলে নেপিডো ওই তালিকা গ্রহণ করে এবং জানায় যে তারা এই তালিকা যাচাই-বাছাই করবে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসেরন তালিকা থেকে নেপিডো দুই দফায় মাত্র ৯০০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার তথ্য ঢাকাকে জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

নিরাপদ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে এই কার্যক্রমে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনকে (ইউএনএইচসিআর) অনেক আগেই যুক্ত করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমার ইউএনএইচসিআর’কে যুক্ত করতে গড়িমসি করে। শেষ পর্যন্ত গত সপ্তাহে নেপিডো থেকে ঢাকাকে জানান হয় যে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমে ইউএনএইচসিআরকে যুক্ত করবে মিয়ানমার।

এদিকে, গত ২ এপ্রিল মস্কোতে এক প্রেস কনফারেন্সে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা ইস্যূতে মিয়ানমারের সমাজ কল্যান মন্ত্রী আগামী ১১ এপ্রিল বাংলাদেশ সফরে আসবেন বলে নেপিডো জানিয়েছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে শতভাগ আন্তরিক। কিন্তু মিয়ানমারের কার্যকর সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টো মিয়ানমারের সৃষ্ট এই সঙ্কট বাংলাদেশের উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে।

গত বছরের আগস্ট থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর নির্যাতন শুরু হলে সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে থাকে। মানবিক কারনে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বর্তমানে কক্সবাজারের একাধিক শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।

সারাবাংলা/জেআইএল/এমএস

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন