বিজ্ঞাপন

বর্ষপণ্যের ঘোষণা সফল করতে ব্যবসা সম্প্রসারণে প্রাধান্য দেবো

January 13, 2022 | 11:41 pm

রাসেল টি আহমেদ। দেশের সফটওয়্যার খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) নবনির্বাচিত সভাপতি। বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) অভিষেক ঘটেছে তার এবং নবনির্বাচিত বেসিস কমিটির। এর আগেও বেসিসের সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর বেসিসের উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টার প্রত্যয় জানিয়েছেন। বলেছেন— নিয়মিত শুনতে চান সদস্যদের কথা, কমিয়ে আনতে চান দূরত্ব। আইসিটি পণ্য ও সেবাকে সরকার বর্ষপণ্য ঘোষণা দেওয়ায় সে অনুযায়ী বছরব্যাপী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চান বেসিস সভাপতি। সে পরিকল্পনায় প্রাধান্য পাবে আইসিটি খাতের ব্যবসা সম্প্রসারণ।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ জানিয়েছেন এসব কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারাবাংলার সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট এমদাদুল হক তুহিন। ছবি তুলেছেন সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট হাবিবুর রহমান

সারাবাংলা: প্রথমেই আপনাকে অভিনন্দন। নতুন পথচলায় কেমন লাগছে?
রাসেল টি আহমেদ: সারাবাংলাকেও ধন্যবাদ। নতুন পথচলায় অবশ্যই ভালো লাগছে। তবে আমার মনে হয় ভালো লাগার চেয়েও দায়িত্বের বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ ও পুরো আইসিটি শিল্পের প্রতি এটি একটি গুরুদায়িত্ব। একইসঙ্গে আমাদের যে ১৬শ সদস্য, তাদের প্রতিও দায়িত্ববোধ আছে। সেই দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করতে হবে। এর জন্য আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।

সারাবাংলা: বেসিস সদস্যদের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা কী?
রাসেল টি আহমেদ: যা কিছু করব, সবই বেসিস সদস্যদের উন্নয়নে। বেসিস সদস্যদের উন্নয়ন মানেই বেসিসের উন্নয়ন। অথবা এভাবেও দেখা যায়— বেসিসের উন্নয়ন মানেই বেসিস সদস্যদের উন্নয়ন। সেই সঙ্গে এটি কিন্তু আইসিটি খাতেরও উন্নয়ন। প্রতিটি কোম্পানির মার্কেট সাইজ বাড়লে আইটি ইন্ড্রাস্ট্রির মার্কেটও বাড়বে। অর্থনীতিতে আমাদের অবদান বাড়বে। তাই বেসিস সদস্যদের জন্য ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য যে নীতিসহায়তা প্রয়োজন, সেগুলো মাথায় রাখাই আমাদের মূল টার্গেট। আমরা নিয়মিত সদস্যদের কথা শুনতে চাই। আমরা চেষ্টা করব আমাদের সঙ্গে সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে নিতে, যেন সদস্যরা চাইলেই সহজে এবং যেকোনো সময়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন। তাদের কথা শুনতে পারলেই আমাদের জন্য কাজ করাটা সহজ হবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: প্রথম ১০০ দিনের কর্মসূচিতে কোন কোন বিষয়কে প্রাধান্য দিচ্ছেন?
রাসেল টি আহমেদ: প্রথম ১০০ দিনের কর্মসূচিতে একক কোনো বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়ার কিছু নেই। সবকিছুকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া হবে। কোনোটা বেশি, কোনোটা কম— এরকম কিছু নেই। আমরা পাঁচটি পয়েন্ট বলেছিলাম। আমরা বেসিসে প্রধান নির্বাহী বা নির্বাহী পরিচালক নিয়োগের কথা বলেছিলাম। এরই মধ্যে আমরা সেই পদে যোগ্য ব্যক্তিকে খুঁজতে শুরু করেছি। সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরির পর্যায়ে আছি। দ্রুতই আমরা সাক্ষাৎকারও শুরু করব।

আমরা বিভিন্ন কমিটি তৈরির কথা বলেছি। সেই কমিটি তৈরির কাজ বা হোমওয়ার্ক শুরু হয়ে গেছে। সামনে দুই বা তিনটি ইসি মিটিংয়ের পর এগুলো অনুমোদন পাবে। আমরা কলসেন্টারের কথা বলেছি। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে যেসব প্রশ্ন পাই, কলসেন্টার থেকে যেন প্রাথমিকভাবে সেই তথ্যগুলো দিয়ে দিতে পারি— এটিই লক্ষ্য। এর জন্য কলসেন্টারে যারা বসবে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এসব বিষয় আমরা গুছাতে শুরু করেছি।

বিজ্ঞাপন

আমরা আরও বলেছি একটি ডিজিটাল প্রমোশনাল সেল করব। সেখানে আমরা প্রথম পর্যায়ে হোমওয়ার্ক করার জন্য কিছু লোককে নিয়োগ করেছি। তবে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তা নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি। মার্চের মধ্যে আমরা সফটএক্সপো করতে চাই। তবে সেটি করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।

সারাবাংলা: সরকার আইসিটি পণ্য ও সেবাকে বর্ষপণ্য ঘোষণা করেছে। বেসিসের পক্ষ থেকে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরির কথা বলেছিলেন। বিস্তারিত যদি বলতেন…
রাসেল টি আহমেদ: আইসিটিকে বর্ষপণ্য ঘোষণা পুরো আইসিটি শিল্পের জন্য দারুণ আনন্দের একটি খবর। কিন্তু বেসিস নেতৃত্ব হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ববোধ রয়েছে। সেই দায়িত্ব হলো প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে সফল করে তোলা। আমরা বছরব্যাপী একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করব। সেই সময়ে আমাদের কিছু প্রত্যাশা থাকবে। সেই সঙ্গে এই কার্যক্রমে কিছু ধারাবাহিকতাও থাকবে। দেখা যাবে আমরা ২০২২ সালে যে কাজগুলো করছি, এর কোনোটির ফল দৃশ্যমান হবে দুই বছরে, কোনোটির পাঁচ বছরে। আমরা প্রথমত একটি কমিটি তৈরি করার চেষ্টা করছি। একটি প্রোপার রিসার্চ পেপার তৈরি করে শিগগিরই আপনাদের সামনে নিয়ে আসব।

বর্ষপণ্যের ঘোষণা সফল করতে আমাদের কর্মপরিকল্পনায় মূল লক্ষ্য বাজার সম্প্রসারণ। কেননা বর্ষপণ্য হিসেবে সফল হওয়ার অর্থই হলো ব্যবসা বাড়ানো। ব্যবসা বাড়লেই এটি বর্ষপণ্য হিসেবে সফল হবে। আর তার জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক— দুই বাজারই সম্প্রসারণ করতে হবে। এর জন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন, নীতি সহায়তা, আইসিটি শিল্প খাতের ব্র্যান্ডিং করতে হবে। আমরা সে অনুযায়ী একটি কর্মপরিকল্পনা আপনাদের সামনে তুলে ধরব।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: আইসিটি শিল্প খাতের জন্য বেসিস কোন কোন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে? এমন কী পদক্ষেপ আছে যা এর আগের বেসিস কমিটিগুলো নেয়নি?
রাসেল টি আহমেদ: আগের কমিটি উদ্যোগ নিয়েছে বা নেয়নি— আমরা বিষয়গুলোকে সেভাবে দেখছি না। বরং আমাদের ভাবনায় রয়েছে প্রয়োজনীয় সব কাজ অগ্রাধিকার নির্ধারণের মাধ্যমে একে একে শেষ করা। এর আগের দুই বা তিন বছরে সদস্যদের সঙ্গে বেসিস কমিটির একটি দূরত্ব আমরা দেখেছি। এই দূরত্ব কমিয়ে আনা আমাদের প্রথম কাজ। আমরা ১০০ দিনের যে কার্যক্রম ঘোষণা করেছিলাম, সেটিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আমরা যেভাবে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছি, এর আগে কেউ এভাবে ইশতেহার ঘোষণা করেনি। সেই ইশতেহারের কাজগুলো রয়েছে। তার ওপর বর্ষপণ্যের ঘোষণা রয়েছে। সব মিলিয়ে আমাদের কাজের পরিধিটা বেশ বিস্তৃত। আমরা একে খুব আনন্দের সঙ্গেই নিয়েছি। আমাদের কাজ করার আগ্রহ আছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে একাত্মতা তো আগেই ঘোষণা করেছি। ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে বর্ষপণ্যের ঘোষণাও একইসঙ্গে এগুবে। আমরা চেষ্টা করব এই লক্ষ্যমাত্রা যেন সময়ের আগে অর্জন করতে পারি।

সারাবাংলা: করোনাকালে আইসিটি খাতের কমবেশি সব কোম্পানিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বড় বড় কোম্পানি ব্যাংকঋণ পেলেও ছোট কোম্পানিগুলো এখনো সংকটে রয়েছে। সেই সংকট নিরসনে কী পদক্ষেপের কথা ভাবছেন?
রাসেল টি আহমেদ: সরকারের যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল, সেটি আমাদের নতুন করে দেখতে হবে। প্রণোদনা স্কিমের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। আমরা এ বিষয়ে খুবই ইতিবাচক। তবে এই মুহূর্তে আমি এটি নিয়ে বলতে পারব না। যাই করি না কেন, ছোট-বড় বলে আলাদা কিছু নেই। সবাইকে যেন তার অবস্থান অনুযায়ী সহায়তা করতে পারি, আমরা সেই চেষ্টা করব।

সারাবাংলা: দেশীয় কোম্পানিকে সরকারি কাজে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে বেসিস সবসময় সোচ্চার। সেক্ষেত্রে দেশি কোম্পানির সক্ষমতা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে বেসিস কী উদ্যোগ নেবে?
রাসেল টি আহমেদ: প্রথমত, আমি দু‘টি বিষয়কে মেনেও নিচ্ছি, আবার মেনে নিচ্ছিও না। প্রথম বিষয় হচ্ছে— বেসিস সবসময় বলে আসছে সরকারি কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে বেসিস সদস্যদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমাদের কোম্পানিগুলোই কিন্তু উন্নত বিশ্বের কাজ করছে। তার মানে আমাদের সক্ষমতা আছে। কিন্তু যেকোনো বাজারে সবার সক্ষমতা সমান হয় না। ছোট-বড় থাকবেই। তাহলে আমাদের কী করতে হবে? সরকারি ক্রয়ে যেন স্বচ্ছতা থাকে, নিরপেক্ষতা থাক, যেন যথাযথ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে, সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সঠিক কোম্পানিটি কাজ পায়, সেটি নিশ্চিত করাটা হবে আমাদের প্রচেষ্টা।

সারাবাংলা: সরকারি কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে বেসিসের কয়েকটি কোম্পানির যে সিন্ডিকেট রয়েছে, সেই সিন্ডিকেট নিষ্ক্রিয় করতে কী উদ্যোগ নেবেন?
রাসেল টি আহমেদ: সিন্ডিকেট বলে আসলে কোনো শব্দ নেই। একীভূত হয়ে তো কাজ করাই যায়। সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে যৌথ অংশীদারিত্ব থাকে। সরকারি ক্রয় নীতিমালা অনুযায়ী যদি সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সেটি হয়, তাহলে আসলে আমার-আপনার কারও কিছু বলার নেই। সেটাকে আমরা স্বাগত জানাই। সরকারি ক্রয় নীতিমালার বাইরে গিয়ে ‍যদি একটি গোষ্ঠীই কাজ পায়, সেই বিষয়ে কেউ পদক্ষেপ নিতে চাইলে বেসিস সভাপতি হিসেবে আমি বিষয়টির সঙ্গে থাকব। কোনো ধরনের অস্বচ্ছতা বা পক্ষপাতিত্ব যেন না হয়, সেদিকে আমার খেয়াল অবশ্যই থাকবে।

সারাবাংলা: দেশি কোম্পানিগুলোর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো কর্মপরিকল্পনা আছে?
রাসেল টি আহমেদ: প্রতিনিয়ত আমরা মানবসম্পদ উন্নয়ন নিয়ে কাজ করব। আমরা আন্তর্জাতিক ডেস্কের সঙ্গে বসব। সামনেই বেশকিছু সংগঠনের সঙ্গে মিটিং আছে।  বিভিন্ন দেশের অনেকের সঙ্গে বৈঠক আছে। আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে যাচ্ছি। এখন কিন্তু পঞ্চম শিল্প বিপ্লবও আলোচনায়। আমাদের প্রতিযোগিতা আছে। মানসম্পন্ন মানবসম্পদও রয়েছে, কিন্তু পরিমাণে কম। আমরা আরও বেশি মানসম্পন্ন মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করব। এর জন্য বিআইটিএমকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাব। এর সঙ্গে বিভিন্ন এইচআর সংগঠনের কোলাবেরশন করার ইচ্ছা আছে।

সারাবাংলা: চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সামনে রেখে সময়োপযোগী প্রযুক্তিগুলো আত্মীকরণের মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক একটি শিল্প খাত গঠনে বেসিস কী কী পদক্ষেপ নেবে?
রাসেল টি আহমেদ: চতুর্থ শিল্প বিল্পবকে সামনে রেখে ঠিক এক সপ্তাহ আগেই আমি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের আমন্ত্রণে একটি সভায় অংশ নিয়েছি। সেখানে অন্যান্য শিল্পের সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, ফুটওয়্যারের নেতারা ছিলেন। প্রত্যেকেই চতুর্থ শিল্প বিল্পবের দিকে যেতে চান। সেখানে আমি একটি প্রস্তাবনা রেখেছি— আমাদের কিছু বেসিস সদস্য ব্লকচেইন, আইওটি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং, বিগ ডেটার মতো চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। ফলে আমরা কিন্তু ক্রস ইন্ডাস্ট্রি ম্যাচমেকিংয়ের কাজটিও করতে পারি। বিজিএমইএ’র প্রয়োজন বা ফুটওয়্যারের প্রয়োজন— আমরা এগিয়ে যেতে পারি। ওই বৈঠকে আমার প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়েছে। আবার এটুআইয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ফুটওয়্যার ইন্ড্রাস্ট্রির সঙ্গে বসেছি। শুরু হিসেবে এটি খুবই ভালো। এরকম বিভিন্ন সংগঠন ও খাতের সঙ্গে আমরা বসব।

সারাবাংলা: দেশে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে উঠেনি। নেই কোনো ইনস্টিটিউট। এ বিষয়ে কোনো ভাবনা আছে কি?
রাসেল টি আহমেদ: অর্থনীতিতে ফ্রিল্যান্সারদের অবদান খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারা দেশের জন্য আয় করছে। ফ্রিল্যান্সার তৈরি হয় একা একা। তারা এক ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতার মধ্য দিয়ে আসেন। তারপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের বিআইটিএমের (বেসিস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট) কিছু ভূমিকা রয়েছে। তবে ফ্রিল্যান্সাররা কিন্তু একক ব্যক্তি। আর বেসিস একটি ট্রেড বডি, যেটি লাইসেন্সধারী কোম্পানিদের নিয়ে কাজ করে। সেক্ষেত্রে যারা ফ্রিল্যান্সিং করছেন, আমরা তাদের কোম্পানি করতে উৎসাহিত করি। কারণ কোম্পানি হয়ে গেলে তার জন্য কাজ করার ম্যান্ডেট আমার রয়েছে। এর বাইরে ফ্রিল্যান্সারের জন্য আমরা হয়তো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারি বিআইটিএমের মাধ্যমে। আমরা পুরস্কার দিয়েও উৎসাহিত করছি। কিন্তু ট্রেড বডি হিসেবে এর চেয়ে বেশি কিছু করা সম্ভব না।

সারাবাংলা: দেশের আইসিটি খাতে দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত পেপ্যাল। এটি নিয়ে যদি কিছু বলেন।
রাসেল টি আহমেদ: পেপ্যালের অবস্থানটা আগে জানত হবে। তাদের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা করে বুঝতে হবে তাদের অবস্থানটা কী। এখন টাকা আনার অনেক বিকল্প পদ্ধতিও আছে। আউটসোর্সিং যারা করছেন, তারা সহজেই ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা আনতে পারছেন। কিন্তু পেপ্যালের মতো একটি পেমেন্ট চ্যানেলের প্রয়োজন আছে বাংলাদেশে। আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করব।

সারাবাংলা: ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে অভিজ্ঞ বা পর্যাপ্ত জ্ঞানসম্পন্ন লোকবল পাওয়া যাচ্ছে না— এমন অভিযোগ রয়েছে।
রাসেল টি আহমেদ: আসলে এগুলোতে একাডেমিয়ার বিষয়। একাডেমিয়া থেকেই তো পড়ালেখা করে শ্রমবাজারে আসে। বেসিসের একটি ইনস্টিটিউট আছে, যার মাধ্যমে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। আমাদের লক্ষ্য, তারা যেন চাকরির বাজারের উপযোগী হয়ে ওঠে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ওপরও একটি কোর্স আছে। আমাদের এই কোর্স করে সবাই ভালো চাকরিও করছে। বেসিস থেকে আমরা স্বতন্ত্র ব্যক্তির জন্য এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাটি করতে পারি। এর সঙ্গে আমরা একাডেমির সঙ্গেও বসব। আমরা পাঠ্যক্রম নিয়ে কথা বলব। তবে সেটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এই বিষয়গুলো নিয়ে ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়ার মধ্যেকার দূরত্ব যথাসম্ভব কমিয়ে আনা হবে আমাদের লক্ষ্য।

সারাবাংলা: বেসিসের এমওইউতে অ্যাডভাইজরি বোর্ড, বর্ধিত ইসি— এগুলোর কোনো প্রবিধান দেখা যায়নি। বর্তমান কাঠামোর বাইরে এগুলো কি কাঠামোগত দুর্বলতাকে নির্দেশ করে?
রাসেল টি আহমেদ: অবশ্যই না। এগুলোর জন্য প্রকৃতপক্ষে কোনো গঠনতন্ত্র প্রয়োজন নেই। কার্যকরী পরিষদ তার মতো করে অ্যাপয়েন্ট করতে পারে। আমাদের অনেকগুলো স্ট্যান্ডিং কমিটি হয়। আমাদের অনেকগুলো ফোরাম হয়। সেই ফোরামগুলোর জন্য আসলে গঠনতন্ত্রের প্রয়োজন হয় না। কার্যকরী পরিষদ বা ইসি তাদের মতো করে কমিটি গঠন করতে পারেন। সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারেন। আমরা এবার খুব শক্তিশালী কিছু কমিটি করব। সেই কমিটিগুলো যেন ফাংশনাল থাকে, সেই কমিটিগুলো যেন ইনক্লুসিভ হয় এবং কাজের মধ্যে থাকে— এসব নিশ্চিত করতে চেষ্টা করব।

সারাবাংলা: বেসিসের সেক্রেটারিয়েট শক্তিশালী করার কথা বলছিলেন…
রাসেল টি আহমেদ: বেসিসের সচিবালয় নিয়ে আমরা এরই মধ্যেই বসেছি। গত কয়েকদিন ধরেই কাজ করছি। আমরা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী পরিচালক নেওয়ার চেষ্টা করছি। পুরো সচিবালয়ের প্রতিটি মানুষের দক্ষতা বাড়াতে, যার যার দায়িত্ব ধরে ধরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। আমরা সদস্যসেবার মান বাড়াতে সেবাদাতাদের প্রশিক্ষণ দেবো। এভাবেই সচিবালয়কে একটি জায়গায় নিয়ে যাব।

সারাবাংলা: ‘ওয়ান বেসিস’ আপনাদের নির্বাচনের মুখ্য প্রতিশ্রুতিগুলার একটি। অতীতে বিভিন্ন প্যানেলে ট্রেড বডিগুলোর নির্বাচনে বিজয়ী ও বিজিত দলের প্রতিনিধিদের মধ্যে ভারসাম্য দেখা যায়নি। এবার তাও দেখা যাচ্ছে…
রাসেল টি আহমেদ: কোন টিমের কে— এরকম কিছু নেই। কোনো একটি পদের জন্য সঠিক ব্যক্তিকেই নিযুক্ত করতে হবে— এটিই আমার কাছে মুখ্য। আমি যেমন একটি টিম থেকে নির্বাচন করেছি, আরেকটি টিম থেকে করিম ভাই (হাবিবুল্লাহ এন করিম) নির্বাচন করেছেন। দু’টি টিমকে আমরা লিড করেছি। কিন্তু নির্বাচনের পর আমরা দু’জন প্রথম মিটিংয়েই ঘোষণা দিয়েছি— আমরা একসঙ্গে আছি ও একসঙ্গে কাজ করব। নির্বাচনের পরে আর কোনো টিম নেই, কোনো প্যানেল নেই। নির্বাচনে পরে যারা জিতেছি, তারাই সবাই মিলে একটি টিম, একটি প্যানেল।

সারাবাংলা: আপনার বোর্ডে তিনটি ভাইস প্রেসিডেন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ চারটি পদেই ‘টিম ওয়ানে’র সদস্যদের দেখা যাচ্ছে। সিনার্জি থেকে নির্বাচিত হওয়া একজনও নেই। অথচ ওয়ান টিমের পক্ষ থেকে সমতার কথা বলা হচ্ছিল…
রাসেল টি আহমেদ: বোর্ড বোর্ডের মতোই হয়েছে। বেসিসের সদস্যরা তাদের (টিম সিনার্জির সদস্য) পরিচালক হিসেবেই নির্বাচিত করেছেন। এখন বোর্ডে যে চারটি পজিশন রয়েছে, সেগুলোতে কিন্তু দক্ষতা, সক্ষমতা, সরবরাহ করার ক্ষমতা, প্রতিশ্রুতি— সবকিছু মাথায় রেখেই এক জন প্রেসিডেন্ট, এক জন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও দুই জন ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ করা হয়েছে। এর সঙ্গে পরিচালকের যে বাকি সাতটি পদ, তারাও কিন্তু সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বোর্ডকে ফাংশনাল রাখতে হলে ১১ জন সদস্যই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আমরা একটি ফাংশনাল টিম করার চেষ্টা করেছি।

সারাবাংলা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
রাসেল টি আহমেদ: সারাবাংলাকেও ধন্যবাদ।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন