January 29, 2022 | 9:33 pm
আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনবিদ ও সংবিধান প্রণেতা, গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন আইনটি হচ্ছে- যে লাউ, সেই কদু। আইনের উপরটি দেখে বোঝা যাবে না যে, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করতে আইনটিতে কী ঘাটতি আছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, কে নিয়োগ দিচ্ছে, সেটির উপর বোঝা যাবে। শুধু তাই নয়, যারা আইনটি প্রণয়ন করেছেন তাদের উদ্দেশ্য লক্ষ্য স্পষ্ট কি না; দেশের মালিক জনগণ, সেই জনগণ আইনটি গ্রহণ করেছে কি না। আর তা না হলে এই আইন হবে কালো আইন।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) মতিঝিল ল চেম্বারে বসে একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. কামাল এ সব কথা বলেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘পাকিস্তান আমল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আমল থেকে নির্বাচন ব্যবস্থা দেখেছি, পর্যবেক্ষণ করেছি। আমি দেখছি ক্রমাগতভাবে নির্বাচন পদ্ধতি বিতর্কিত হচ্ছে। সৎ এবং যোগ্য লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয় না। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয় তারা একদিকে যেমন অসৎ অন্যদিকে অযোগ্য এবং আজ্ঞাবাহক। তারা সাংবিধানিক পদটিকে কলঙ্কিত করেছে। যারা দেশের দায়িত্ব আছেন তাদের ইঙ্গিত পেয়ে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে অযোগ্য ব্যক্তিদের নির্বাচনে জিতিয়ে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। স্বাধীন দেশে এটি কাম্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘লোক দেখানোর জন্য আইনটি করা হয়েছে। সার্চ কমিটিকে আইনটিতে রাখা হয়েছে। তবে সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আইনটি করা হলে স্বাগত জানানো হবে। আমি মনে করি, আইনটি প্রণয়নের আগে বিষয়বস্তু নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করলে উত্তম হতো। আমি মনে করি এই আইন দিয়ে সুষ্ঠু-অবাধ-নিরপেক্ষ সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। সুষ্ঠু-অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হলে রাজনৈতিক মহলের সবার সঙ্গে বৈঠক করে ঐক্যমতে পৌঁছে জাতীয় সরকার কিংবা অন্য যেকোনো নামের সরকার গঠন করে নির্বাচন করতে হবে। রাজনৈতিক মহলের একমত এবং রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন না হলে সুষ্ঠু-অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন আইন প্রণয়ন করে সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক মহলে এমন গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে যেন, সৎ মানুষ নির্বাচন করতে পারে, নির্বাচনে কালো টাকা, পেশিশক্তির প্রভাব না পড়ে, জনগণ যেন নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে পারে। তাহলেই দেশে সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। আজ দেশে সুশাসন নেই, গণতন্ত্র নেই।’
গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে সবকিছুতে স্বাধীনভাবে সংবিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করা হলে আজ জাতীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি উঠত না। যেহেতু সাংবিধানিকভাবে সবকিছু চলছে না, সেহেতু জনগণের পক্ষ থেকে এবং রাজনৈতিক মহল থেকে জাতীয় সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি স্বাভাবিক।’
তিনি বলেন, ‘আমি চাই দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হোক, সৎ মানুষ রাজনীতিতে আসুক। আমি চাই নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে তার কার্যক্রম চালাক। দেশ পরিচালনায় যারা থাকবেন তাদের হস্তক্ষেপ থাকবে না। ফলে দেশে সৎ মানুষের একটি সরকার গঠন হোক। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ হোক।’
ড. কামাল বলেন, ‘যারা দেশ পরিচালনায় থাকেন, তাদের যদি দায়িত্ববোধ থাকে, তারা যদি সত্যিকার অর্থে একটি ভালো নির্বাচন চায় তাহলে নির্বাচন কমিশন দ্বারা সুষ্ঠু-অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব। আর রাষ্ট্র পরিচালনা যারা থাকেন তারা যদি না চান তাহলে আইন অথবা পদ্ধতিগত সংস্কারের মধ্য দিয়ে সব কিছু আশা করা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘সংসদে যে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে ঘাটতি রয়ে গেছে। ঘাটতি দিয়ে আইন প্রণয়ন করা হলে সেই আইন তার কার্যক্রমকে আর কত বিকশিত করতে পারবে?’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সুষ্ঠু-অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য সংবিধান সংশোধন করা সম্ভব। আর দেশের জনগণ আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরিচালনার জন্য আন্দোলনের দিকে যাবে। আন্দোলন তো জমে উঠেছিল। ওমিক্রনের কারণে থেমে গেছে। আন্দোলন দানা বেঁধে উঠলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে মেনে নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন করে বহির্বিশ্বে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বলে যে কথা উঠেছে তা ঠিক। তবে বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ড এবং নির্বাচনি ব্যবস্থার কারণে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি তো আগেই ক্ষুণ্ন হয়েছে।’
ড. কামাল বলেন, ‘আন্দোলন কার্যকর হলেই একটি পরিবর্তন আসবে। আন্দোলন হলেই নির্বাচন কমিশনার যেনতেনভাবে নিয়োগ দিতে পারবে না- সে রকম একটি চাপ সৃষ্টি করতে হবে। আশা করি, দেশের রাজনৈতিক মহল জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অচিরেই চাপ সৃষ্টি করবে। তবে সরকারের বিপক্ষে চাপ সৃষ্টি করা কঠিন হলেও পরিবেশ পরিস্থিতি আগামীতে সহজ করে দেবে।’
দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে গণফোরামের অংশগ্রহণ সম্পর্কে ড. কামাল বলেন, ‘নির্বাচনে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হলে আমার দল অংশগ্রহণ করবে।’ নির্বাচনি জোট করার বিষয়টিও পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর পদক্ষেপ নেবেন তিনি।
আরও পড়ুন:
ইসি গঠন আইনের খসড়ায় যে দুটি পরিবর্তনের সুপারিশ
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে