বিজ্ঞাপন

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রতিবেদন— বিজিএমইএ’র স্পষ্টীকরণ বিবৃতি

February 2, 2022 | 9:17 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের পোশাক খাত নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোকে ‘অনুমাননির্ভর’ বলে আখ্যা দিয়েছে পোশাক খাতের কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। ওই সব প্রতিবেদনকে ‘বিভ্রান্তিকর তথ্যসম্বলিত’ উল্লেখ করে বিজিএমইএ বলছে, বিশ্ববাজারে দেশের পোশাক খাতের যে খ্যাতি রয়েছে তা ধরে রাখতে সংগঠনটি বদ্ধপরিকর।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিজিএমইএ থেকে পাঠানো এক স্পষ্টীকরণ বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে। বিজিএমইএ’র মহাসচিব মো. ফয়জুর রহমান ওই স্পষ্টীকরণ বিবৃতিতে সই করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিজিএমইএ লক্ষ করেছে— মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তথাকথিত নিষেধাজ্ঞা এবং বাণিজ্য ও ক্রস বর্ডার লেনদেনের প্রভাব বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্যসম্বলিত অনুমাননির্ভর মিডিয়া প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিছু কাহিনী ছাড়া এ প্রতিবেদনের পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। বিজিএমইএ তার সাধারণ সদস্যদের স্বার্থে এবং পাশাপাশি অর্থনীতির স্বার্থে এই বিবৃতি জারি করছে।

বিবৃতে বলা হয়, ৩১ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস গণমাধ্যমের জন্য একটি বিবৃতি জারি করে। তাতে প্রভাবশালী মার্কিন কংগ্রেসম্যান এবং চেয়ার অব দ্য হাউজ কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্স জর্জ ডব্লিউ মিক্সের উদ্ধৃতি রয়েছে— ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই, আমরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নই (যেকোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ) এবং আমরা এখনও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করছি।’

বিজ্ঞাপন

বিজিএমইএ বলছে, একটি বাংলা ট্যাবলয়েড পত্রিকা একটি ঋণপত্রের (লেটার অব ক্রেডিট) একটি ধারাকে উদ্ধৃত করে একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। স্বতন্ত্র ক্রেতাদের নিজস্ব নীতিমালা থাকতেই পারে, এ বিষয়ে আমরা শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু একটি ঋণপত্রের কপি কখনই একটি দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আনুষ্ঠানিক উপকরণ বা উপায় হতে পারে না। এমনকি কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষেও এ ধরনের একটি স্পর্শকাতর ঘোষণা প্রদান তার এখতিয়ারেও পড়ে না, যেখানে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান।

এতে আরও বলা হয়, বিজিএমইএ এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত সদস্য অথবা সহযোগী সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য পায়নি অথবা জিজ্ঞাসার সম্মুখীনও হয়নি এবং এ বিষয়ে কেউ কোনো উদ্বেগও প্রকাশ করেনি। অ্যাপারেল ডিপ্লোম্যাসির অংশ হিসেবে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে আমরা মার্কিন সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তা এবং অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম। সেখানে তারা আমাদের পোশাক শিল্প ও শিল্পের রূপান্তর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা তাদের অবহিত করেছি, কীভাবে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে এই শিল্পটি ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢেলে পুনর্বিন্যস্ত করেছে এবং নিরাপদ শিল্পের রোল মডেল হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক গ্রিন কারখানার আবাসস্থল বাংলাদেশ, যেখানে ইউএসজিবিসি প্রত্যয়িত লিড (লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন) পোশাক কারখানার সংখ্যা ১৫৭টি। এগুলোর মধ্যে ৪৭টি লিড প্লাটিনাম-রেটেড এবং ৯৬টি লিড গোল্ড-রেটেড। ৫০০টিরও বেশি কারখানা লিড সনদপত্র পাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন অর্জনের ক্ষেত্রে শিল্প যে অগ্রগতি সাধন করেছে, তারা তার প্রশংসাও করেছে।

বিজ্ঞাপন

বিজিএমইএ বলছে, বলার অপেক্ষা রাখে না যে কোভিড মহামারি সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আমরা সফলতার সঙ্গে বৈশ্বিক ক্রেতাদের আস্থা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। ফলে আমরা ব্যবসায় উল্লেখযোগ্যভাবে ফিরে এসেছি, যদিও খরচ মেটাতে এবং সাপ্লাই চেইন পরিচালনার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। ২০২১ সালে মার্কিন বাজারে আমাদের রফতানি ২০২০ সালের তুলনায় ৪৩ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে একই সময়ে ইইউ বাজারে প্রবৃদ্ধি ছিল ২৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ২০২০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় ২০২১ সালের একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি ৭৫ দশমিক ৭১ শতাংশ বৃদ্ধির রেকর্ড হয়েছে, যা আমাদের প্রতি ক্রেতাদের আস্থার সাক্ষ্য দেয়। ফলে এ ধরনের প্রতিবেদন সত্যিই আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক, যখন আমরা মহামারির কারণে সৃষ্ট নজিরবিহীন প্রভাব থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছি এবং আমাদের রফতানি ধারাবাহিকভাবে রেকর্ড ভাঙছে।

বিজিএমইএ বিবৃতিতে আরও বলছে, প্রথমবারের মতো আমরা ২০২১ সালের অক্টোবরে- একক মাসে আমাদের রফতানি ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছি। তারপর ডিসেম্বরে আমরা ৪ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছি এবং এক মাস পরে অর্থাৎ ২০২২ সালের জানুয়ারিতে আমাদের রফতানি আরও বেড়ে ৪ দশমিক শূন্য আট বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। আমরা আমাদের উদ্যোক্তাদের সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে টিকে থাকার লড়াকু মনোভাব ও প্রচেষ্টাকে অভিনন্দন জানাই।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমি বিশ্বাস করি যে ২০২২ সাল একটি উল্লখযোগ্য ল্যান্ডমার্ক দিয়ে শেষ হবে এবং ২০২৩ সাল আরও ভালো হবে। আমরা যেহেতু একটি উচ্চতর প্রবৃদ্ধির রূপকল্প অনুসরণ করছি, তাই শিল্প ব্যবসার পুনর্কাঠামো নির্ধারণ, উদ্ভাবনের মাধ্যমে মূল্য সংযোজন, পণ্য বৈচিত্র্যকরণ, প্রযুক্তির আপগ্রেডেশন প্রভৃতি বিষয়ে মনোযোগ ক্রমাগত বাড়াচ্ছে এবং কারখানাগুলোও এসব খাতে বিনিয়োগ করছে। বিশ্বে পোশাক তৈরির একটি নিরাপদ, টেকসই ও প্রতিযোগিতামূলক গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশের পোশাক খাতের খ্যাতি ধরে রাখার জন্য আমরা আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন