বিজ্ঞাপন

৪ জেলায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ ৫০%-এর নিচে, সবচেয়ে কম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়

February 2, 2022 | 11:59 pm

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি চলছে জোরদমে। গত বছরের জানুয়ারিতে উদ্বোধনের পর ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পর্যায়ে শুরু হয় ভ্যাকসিন প্রয়োগ। এরপর প্রায় এক বছর পেরিয়ে এসে ভ্যাকসিন প্রয়োগে সাফল্যের হার নেহায়েত কম নয়। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক— ৯ কোটি ৭৬ লাখেরও বেশি মানুষ এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, সার্বিকভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগের সাফল্য মোটামুটি সন্তোষজনক হলেও এখনো দেশের চারটি জেলায় ভ্যাকসিন প্রয়োগের হার ৫০ শতাংশের নিচে। এর মধ্যেসবচেয়ে কম ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অধিবাসীরা। এই জেলায় ভ্যাকসিন প্রয়োগের হার ৪৫ দশমিক ০৭ শতাংশ। আর এর বিপরীতে সর্বোচ্চ প্রায় ৮১ শতাংশ ভ্যাকসিন নিয়েছেন গাজীপুর জেলার বাসিন্দারা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সেন্টার (এমআইএস) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অন্তত এক ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৯ কোটি ৭৬ লাখ ৩৪ হাজার ৭০৯ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৮০ দশমিক ৬৮ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন গাজীপুর জেলায়। সরকারি হিসেবে এই জেলার মোট জনসংখ্যা ৪০ লাখ ৩৪ হাজার ৮২৩ জন। এর মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৩২ লাখ ৫৫ হাজার ১৬৬ জন।

আরও পড়ুন- ওমিক্রনের প্রভাবে বেড়েছে আগ্রহ, রেকর্ড ভ্যাকসিনেশন জানুয়ারিতে

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, সবচেয়ে কম পরিমাণে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ প্রয়োগ হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এই জেলায় ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১৫ লাখ ১৩ হাজার ৬৩৭ জন, সরকারি তথ্য অনুযায়ী এই জেলার মোট জনসংখ্যা ৩৩ লাখ ৫৮ হাজার ৩০৭ জন।

ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ প্রয়োগের হার কম যেসব জেলায়

ভ্যাকসিন নেওয়ার হারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মতোই পিছিয়ে রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা। এই জেলার মোট জনসংখ্যা ২৯ লাখ ১৬ হাজার ৩৩৭ জন। এর মধ্যে অন্তত এক ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন ১৩ লাখ ২৮ হাজার ৮৩৯ জন। অর্থাৎ এই জেলায় এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণের হার ৪৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

নেত্রকোনা জেলার মোট জনসংখ্যা ২৬ লাখ ৩৫ হাজার ৪৭ জন। এর মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়েছেন ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৫৮৪ জন। অর্থাৎ এই জেলায় এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণের হার ৪৯ দশমিক ০৯১ শতাংশ। এটি দেশে এখন পর্যন্ত তৃতীয় সর্বনিম্ম ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণের হার।

বিজ্ঞাপন

শেরপুর জেলার ১৬ লাখ ছয় হাজার ৩৭৩ জনের মধ্যে এক ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন সাত লাখ ৯৬ হাজার ৫৭১ জন। জেলাটিতে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার হার ৪৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ, যা চতুর্থ সর্বনিম্ন।

আরও পড়ুন- জানুয়ারি মাসে করোনায় মৃতদের ৭৩ শতাংশই ভ্যাকসিন নেননি

এর পরের অবস্থানেই রয়েছে ভোলা। এই জেলায় ২০ লাখ ৯৯ হাজার ৬১৪ জনের মধ্যে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন ১০ লাখ ৫১ হাজার ৫৪৫ জন, যা মোট জনসংখ্যার ৫০ দশমিক ০৯ শতাংশ।

এছাড়াও লক্ষ্মীপুরে ৫০ দশমিক ২১ শতাংশ, কিশোরগঞ্জে ৫০ দশমিক ৪৯ শতাংশ, হবিগঞ্জে ৫১ দশমিক ১৩৮ শতাংশ, ময়মনসিংহ জেলায় ৫১ দশমিক ১৫৪ শতাংশ ও সিলেট জেলায় ৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশ জনসংখ্যা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ ভ্যাকসিনের আওতায় এসেছেন।

বিজ্ঞাপন

ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ প্রয়োগে শীর্ষ যে জেলাগুলো

দেশে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ প্রয়োগের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে গাজীপুর জেলা। এই জেলায় ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৩২ লাখ ৫৫ হাজার ১৬৬ জন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী এই জেলার মোট জনসংখ্যা ৪০ লাখ ৩৪ হাজার ৮২৩ জন। সে হিসাবে এই জেলার ৮০ দশমিক ৬৮ শতাংশ জনগণ প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন।

অন্যদিকে জয়পুরহাট জেলার ১০ লাখ ৮০ হাজার ৮১৫ জনের মধ্যে ভ্যাকসিনের অন্তত এক ডোজ নিয়েছেন সাত লাখ ৩০ হাজার ৬৬১ জন। এই জেলায় এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণের হার ৬৭ দশমিক ৬০৩ শতাংশ, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণের হারে তৃতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী। এই জেলার ৩০ লাখ ৭০ হাজার ১২ জনের মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়েছেন ২০ লাখ ১৯ হাজার ৬৯ জন। অর্থাৎ এই জেলায় এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণের হার ৬৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

আরও পড়ুন- ‘জনসনের ভ্যাকসিন পাবে ভ্রাম্যমাণ মানুষেরা’

অন্যদিকে বাগেরহাট জেলার ১৭ লাখ ৪৪ হাজার ৪৩৯ জনের মধ্যে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৪৮৪ জন। এই জেলায় ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণের হার ৬৫ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা চতুর্থ সর্বোচ্চ।

অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গায় ১৩ লাখ ৩৫ হাজার ৯৭২ জনের মধ্যে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৮৪৬ জন। সে হিসাবে এই জেলায় এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণের হার ৬৫ দশমিক ১১০ শতাংশ, যা পঞ্চম সর্বোচ্চ।

এছাড়া মেহেরপুরে ৬৫ দশমিক ১১ শতাংশ, পঞ্চগড়ে ৬৪ দশমিক ৮০ শতাংশ, মাগুরায় ৬৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ, ঢাকা জেলায় ৬৪ দশমিক ৩১ শতাংশ ও খুলনা জেলায় ৬২ দশমিক ৯৯ শতাংশ নাগরিক ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন।

কর্তৃপক্ষ যা বলছে

ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণের হারের কম হওয়ার মূল কারণ হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের এখানকার অনেকেই রাজধানীতে গিয়ে ভ্যাকসিন নিয়েছেন। প্রবাসী হিসেবেও অনেকে ঢাকায় গিয়ে ভ্যাকসিন নিয়েছেন। তাই সেগুলো আমাদের জেলার হিসেবে যোগ হয়নি। সে হিসাব বাদ দিলে ভ্যাকসিন প্রয়োগের হার খুব একটা কম না।

তবে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ এখনো যাদের বাকি আছে, তাদের দ্রুত এই কার্যক্রমে আনার পরিকল্পনা চলছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। ডা. একরাম উল্লাহ বলেন, আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছি। ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মেম্বার যারা রয়েছেন, তাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। জেলার কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কমিটির সভাপতি হিসেবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই আমরা প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন প্রয়োগের গতি আরও বাড়াতে পারব। একইসঙ্গে অন্যান্য ডোজের ভ্যাকসিন প্রয়োগও চলমান থাকবে।

আরও পড়ুন- ১২ বছর বয়সীরাও পাবে ভ্যাকসিন: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বলেন, সরকার সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। মূলত জানুয়ারি মাসে যে পরিমাণ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, তা আমাদের সক্ষমতারই প্রমাণ দেয়। আমরা আরও দ্রুত নতুন পরিকল্পনা নিয়ে দেশের সব জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে চাই।

যেসব স্থানে এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন দেওয়ার হার কম, সেসব এলাকাকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ভ্যাকসিন কর্মসূচি যেসব এলাকায় একটু শ্লথ গতিতে আছে, সেখানেও আমরা গতি বাড়ানোর চেষ্টা করে যাব। সেসব এলাকার প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডা. শামসুল আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা ধাপে ধাপে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। সবশেষ আমরা ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছি। যারা এখন পর্যন্ত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারেনি বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে গেছে, তাদেরও আমরা ভ্যাকসিনের আওতায় আনব। আর পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যদি কোনো পরামর্শ দেয়, তাহলেও আমরা সেই পরামর্শ ও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাব। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে।

আরও পড়ুন- ঢামেক হাসপাতালে ১ বছরে করোনার ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৫ লাখ মানুষ

এর আগে, গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ভারত থেকে ভ্যাকসিন সরবরাহ বন্ধ হলে কিছুদিন ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে ভ্যাকসিন কিনতে শুরু করে সরকার। কোভ্যাক্সের আওতাতেও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভ্যাকসিন আসতে থাকে। তাতে করে সুরক্ষায় নিবন্ধনের পাশাপাশি গণহারে ভ্যাকসিন প্রয়োগের বেশ কয়েকটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে সরকার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগও শুরু হয়েছে দেশে। এরই মধ্যে এই বয়সী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়াদের প্রায় শতভাগকেই প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, যারা দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাদের তৃতীয় তথা বুস্টার ডোজও প্রয়োগ করছে সরকার।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন