বিজ্ঞাপন

‘নির্মল বায়ু’র উপস্থিতি মাত্র ১০ জেলায়

February 3, 2022 | 4:43 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশের ৬৪ জেলার বায়ুমান বিশ্লেষণে মাত্র ১০টি জেলায় পাওয়া গেছে দূষণমুক্ত তথা নির্মল বায়ুর উপস্থিতি। বাকি ৫৪টি জেলার মধ্যে ৩৬টি জেলার বায়ুতে দূষণের পরিমাণ মধ্যম মানের। আর বাকি ১৮টি জেলায় দূষণের মাত্রা রয়েছে চরমে। অন্যদিকে, যে দশটি জেলায় বায়ুদূষণের মাত্রা সবচেয়ে কম, তার মধ্যে পাঁচটি জেলাই অবস্থিত রাজশাহী বিভাগে।

বিজ্ঞাপন

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) ৬৪ জেলার বায়ুদূষণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সমীক্ষায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চালানো এই সমীক্ষার তথ্য বলছে, দেশে বায়ুদূষণে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে গাজীপুর জেলা। অন্যদিকে মাদারীপুর জেলার বায়ুতে দূষণের মাত্রা সবচেয়ে কম।

বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপসের দেশব্যাপী ৬৪ জেলার বায়ুমান সমীক্ষা ২০২১ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, বায়ুতে পিএম২.৫ অর্থাৎ ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট বস্তুর পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৬৫ মাইক্রোগ্রামের নিচে থাকলে সেই বায়ুর মান ভালো হিসেবে ধরা হয়। এর পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৬৫ মাইক্রোগ্রাসের চেয়ে বেশি ও ১২০ মাইক্রোগ্রামের কম থাকলে সেটিকে মধ্যম মানের দূষিত বায়ু ধরা হয়। আর বায়ুতে প্রতি ঘনমিটারে ১২০ মাইক্রোগ্রামের চেয়ে বেশি ক্ষুদ্র বস্তুকণার উপস্থিতি থাকলে সেটিকে তীব্র দূষণ বিবেচনা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা এবং স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার গবেষণার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ গাজীপুরে, সর্বনিম্ন মাদারীপুর

গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৪টি জেলার মধ্যে কেবল ১০টি জেলা অর্থাৎ পুরো দেশের মাত্র ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ জেলায় বায়ুর মান ভালো পাওয়া যায়। এই জেলাগুলো হলো— মাদারীপুর (প্রতি ঘনমিটারে পিএম২.৫-এর উপস্থিতি ৪৯ দশমিক ০৮ মাইক্রোগ্রাম), পটুয়াখালী (৫১ দশমিক ৪২ মাইক্রোগ্রাম), মেহেরপুর (৫৩ দশমিক ৩৭ মাইক্রোগ্রাম), সিরাজগঞ্জ (৫৫ দশমিক ২ মাইক্রোগ্রাম), পাবনা (৫৬ দশমিক ২২ মাইক্রোগ্রাম), রাজশাহী (৫৬ দশমিক ৪১ মাইক্রোগ্রাম), রাজবাড়ী (৫৮ দশমিক ২২ মাইক্রোগ্রাম), জয়পুরহাট (৫৮ দশমিক ২৪ মাইক্রোগ্রাম), নাটোর (৬৩ দশমিক ১৯ মাইক্রোগ্রাম) এবং কুড়িগ্রাম ৬৩ দশমিক ৩৩ মাইক্রোগ্রাম)।

অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান বলেন, ৬৪টি জেলার মধ্যে কেবল ১০টি জেলায় বায়ুর মান আদর্শ মাত্রার মধ্যে ছিল। এই জেলাগুলোর অবস্থান নদী তীরবর্তী এলাকায়। দূষণের বিস্তৃতি কম হওয়ার এটি একটি কারণ হতে পারে। মূলত বৃষ্টি, প্রাকৃতিক জলাধার ও সবুজায়ন সমন্বিতভাবে বাংলাদেশের বায়ু দূষণ প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের সমন্বিত, বিজ্ঞানভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কোনো ধরনের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৬৪ জেলার জেলা শহরগুলোতে সাত ধরনের ভূমির ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে ৩ হাজার ১৬৩টি স্থানের পিএম২.৫ মান পর্যবেক্ষণ করে তা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালোচনা করা হয়েছে।

এই গবেষণায় ৬৪টি জেলার যেসব এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তার মধ্যে সংবেদনশীল এলাকা ৫৩১টি (১৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ), আবাসিক এলাকা ৪৪০টি (১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ), মিশ্র এলাকা ৪০৭টি (১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ), বাণিজ্যিক এলাকা ৫৭৫টি (১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ), রাস্তার সংযুক্তি এলাকা ৩৫৮টি (১১ দশমিক ৩২ শতাংশ), শিল্প এলাকা ৪৩২টি (১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ) এবং গ্রামীণ এলাকা ৪২০টি (১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ)।

ক্যাপস জানিয়েছে, এই স্থানগুলো থেকে স্বয়ংক্রিয় এয়ার কোয়ালিটি মনিটর (AEROQUAl S-500, New Zealand) ব্যবহার করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তী সময়ে এসপিএসএস ও আর্কজিআইএস সফটওয়্যার ব্যবহার করে বায়ুর মান বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

অধ্যাপক কামরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, গবেষণাটি হেলথ অ্যান্ড পলিউশন নামক বৈজ্ঞানিক জার্নালে পিয়ার রিভিউয়ের জন্য দেওয়া হয়েছে। রিভিউ হলে গবেষণাটি প্রকাশিত হবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন