বিজ্ঞাপন

রাজশাহীতে মাধ্যমিক বইয়ের ঘাটতি ১২ লাখ ৮৪ হাজার

February 7, 2022 | 10:59 pm

মাহী ইলাহি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: রাজশাহীর সরকারি পিএন বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া রহমান। নতুন বছরের এক মাসে পেরিয়ে গেলেও এখনো হাতে পায়নি বাংলা ও গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বই। স্কুল খোলা থাকা অবস্থায় বই ছাড়াই ক্লাস করেছে চার দিন। সম্প্রতি স্কুল বন্ধ থাকার করণে এখন সে বাড়িতে।

বিজ্ঞাপন

সামিয়া জানায়, বই না পেয়ে এখনো পড়া শুরু হয়নি তার। বই পেলেই শুরু হবে সেসব বিষয়ের পড়ালেখা। তবে অন্য বিষয়গুলোর বই পেয়ে যাওয়ায় আপাতত সেগুলোই পড়ছে।

পিএন বালিকা বিদ্যালয়ে সামিয়ার সহপাঠীদের অবস্থাও একই। অন্যদিকে একই চিত্র দেখা গেছে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে অ্যান্ড কলেজেও। সেখানে অষ্টম শ্রেণির বই আসেনি। পুরনো বই ‘ম্যানেজ করে’ পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। পিএন ও কলিজিয়েট স্কুলই নয়, এরকম বইয়ের ঘাটতির শিকার রাজশাহীর অনেক স্কুলই। জেলায় ১২ লাখ ৮৪ হাজার ৭৬৫টি বই এখনো হাতে পায়নি শিক্ষার্থীরা।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, রাজশাহী নগরী ও জেলার ৯ উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে মোট বইয়ের চাহিদা ৩৩ লাখ ১২ হাজার ৭৭৫টি। এর মধ্যে ২২ লাখ ১০ হাজার ৫১৫টি বই এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। ঘাটতি আছে ১১ লাখ ২ হাজার ২৬০টি বই। সে হিসাবে মাধ্যমিকের বই পাওয়া গেছে ৬৭ শতাংশ বই পাওয়া গেছে। অর্থাৎ এখনো এক-তৃতীয়াংশই বই-ই বাকি আছে।

বিজ্ঞাপন

রাজশাহীর উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯০ শতাংশ বই বিতরণ করা গেছে গোদাগাড়ী উপজেলায়। অন্যদিকে পবা উপজেলার শিক্ষার্থীদের অবস্থা বেহাল। তারা পেয়েছে সবচেয়ে কম ৫০ শতাংশ বই।

শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় জানাচ্ছে, জেলায় দাখিল পর্যায়ে চাহিদা ছিল ৬ লাখ ১০ হাজার ৮৯৫টি বইয়ের। এর মধ্যে বই পাওয়া গেছে ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৩২০টি। সে হিসাবে ৯৬ শতাংশ বই এসেছে এই জেলায়। পবায় ৯৩ শতাংশ ও মোহনপুরে ৬৮ শতাংশ ছাড়া অন্য উপজেলাগুলোতে শিক্ষার্থীদের কাছে শতভাগ বই পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। এই দুই উপজেলায় দাখিল পর্যায়ে এখনো ২৩ হাজার ৫৭৫টি বইয়ের ঘাটতি রয়েছে।

অন্যদিকে ইবতেদায়ি পর্যায়ের ৮৫ শতাংশ বই পৌঁছেছে রাজশাহী জেলায়। জেলা ও মহানগর মিলিয়ে এই পর্যায়ের ২ লাখ ৬৮ হাজার ৯৪০টি বইয়ের চাহিদা ছিল। এর মধ্যে বই পৌঁছেছে ২ লাখ ২৯ হাজার ২৮০টি। ঘাটতি রয়েছে ৩৯ হাজার ৬৬০টি বই। তবে মোহনপুর উপজেলায় ইবতেদায়ি পর্যায়ের একটি বই-ও পৌঁছেনি। এ উপজেলায় বইয়ের চাহিদা ১৯ হাজার ২০০টি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, এসএসসি ভোকেশনালে রাজশাহীতে বই পৌঁছেছে মাত্র ৩৭ শতাংশ। জেলায় এই পর্যায়ের বইয়ের চাহিদা ১ লাখ ৭৮ হাজার ২০০টি। এর মধ্যে পাওয়া গেছে মাত্র ৬৫ হাজার ৪৬৫টি। এখনো ১ লাখ ১২ হাজার ৭৩৫টি বইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে শিক্ষার্থীরা।

অন্যদিকে ইংরেজি ভার্সনের বই পাওয়া গেছে সর্বনিম্ন ২২ শতাংশ। রাজশাহীতে এই বইয়ের চাহিদা ১১ হাজার ৫৭৫টি। এর মধ্যে মাত্র ২ হাজার ৫২০টি বই পাওয়া গেছে। বাকি ৯ হাজার ৫৫টি বই এখনো পৌঁছেনি।

সবশেষ রোববারের (৬ ফেব্রুয়ারি) হিসাব অনুযায়ী, রাজশাহীতে সব মিলিয়ে বই প্রয়োজন ৪৩ লাখ ৮২ হাজার ৩৮৫টি। এর মধ্যে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ৬২০টি বই পাওয়া গেছে। বাকি ১২ লাখ ৮৪ হাজার ৭৬৫টি বই এখনো পৌঁছেনি। বই না পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা।

রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নুরজাহান বেগম সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের এখানে অষ্টম শ্রেণির কিছু বই আসেনি। বই না পেলে তো শিক্ষার্থীদের ক্ষতি। তাই আমার পুরনো কিছু বই তাদের ব্যবস্থা করে নিতে বলেছি। অনলাইনে সেই অনুযায়ী ক্লাস হচ্ছে। তবে বই না পাওয়ার শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের অষ্টম শ্রেণির কিছু বই বাকি ছিল। সপ্তম শ্রেণির বইও কিছু কিছু উপজেলায় বাকি আছে। তবে কোন উপজেলায় কী কী বই পৌঁছানো বাকি, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না।

নাসির উদ্দীন আরও বলেন, বই আসছে। আজ (সোমবার) সকালেও ইংরেজি মিডিয়ামের কিছু বই এসেছে। অনান্য বই এখনো আসেনি। এলে পর্যায়ক্রমে সেগুলো বিতরণ করা হবে।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন