বিজ্ঞাপন

ডানে-বামে জোট জটে বিএনপি

February 11, 2022 | 5:08 pm

মোস্তফা কামাল

আগের জোট-ফ্রন্ট রাখা, না রাখার ফয়সালা না করেই জোটের নয়া অভিযাত্রায় নেমেছে বিএনপি।  সংসদে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন পাসের পরদিনই লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভার্চুয়াল সভাপতিত্বে দলটির স্থায়ী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। তাদের দফা হবে মাত্র একটি। নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়। কোন ভরসায় বিএনপি এমন সাহস করছে?- তা এখনো প্রশ্নযুক্ত।

বিজ্ঞাপন

আগে থেকেই বিএনপির ২০–দলীয় ঐক্য জোট নামে একটি জোট আছে। জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট—নামে আছে আরেকটি। শক্তিতে না হলেও সংখ্যায় এবং আওয়াজে আলিশান দুটি জোটসঙ্গী থেকে কিভাবে বিএনপি আরেকটি জোটের অংক মেলাবে দলের কর্মীদের কাছেই তা ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। এর আগে, জামায়াতকে নিয়ে আপত্তির মধ্যেই ড. কামাল, আসম রব, মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো নেতাদের নিয়ে অনেকটা গোঁজামিলে ফ্রন্ট করেছে বিএনপি। আবহ এবারও আগের মতোই। ২০ দল এবং ঐক্যফ্রন্ট জিন্দা রেখেই এখন বৃহত্তর ঐক্যের নতুন ফর্মুলা। এতে সরকারবিরোধী সবপক্ষকে এক সুতায় গাঁথার আকাঙ্খা।

এদিকে, ২০-এর সংখ্যাতত্ব শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। তবে, আঙুলে গুনলে ঠিক আছে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত আটটি দল বিভিন্ন সময়ে ২০-দলীয় জোটকে ‘বাই বাই’ দিয়ে সরে গেছে। সেগুলোও ব্র্যাকেটবন্দি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- খেলাফত মজলিস (ইসহাক), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (জিয়াউদ্দিন আহমদ), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি (আন্দালিব রহমান), বাংলাদেশ ন্যাপ ( জেবেল রহমান), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি ( গোলাম মর্ত্তুজা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি (শওকত হোসেন নিলু), ইসলামী ঐক্যজোট (মুফতি আমিনী) ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (শায়খুল হাদিস)। তাদের খন্ডিত অংশকে যোগ করে ২০ সংখ্যা ঠিক রাখার চেষ্টা রয়েছে। তবে, খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের খন্ডিত অংশ নেই। তা হিসাবে নিলে জোটে শরীকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮টি।

উল্লিখিত ১৮টি দলের মধ্যে নিবন্ধন আছে কেবল কেবল বিএনপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) । এই ৩ দলের বাইরে বাকি সঙ্গীরা হচ্ছে- জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা, জাতীয় পার্টি (জাফর), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ইসলামী ঐক্যজোট (আবদুর রকিব), এনডিপি, পিপলস লীগ, সাম্যবাদী দল, জাতীয় দল, ডেমোক্রেটিক লীগ, ন্যাপ ভাসানী, ইসলামিক পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, লেবার পার্টি। কেবল নিবন্ধন নয়, এসব দলের পার্টি অফিসেরও ঠিকঠিকানা নেই। কয়েকটি আবার প্যাডে একই ঠিকানা ব্যবহার করে। এলডিপির আবার দুই ব্র্যাকেট। অলি-আব্বাসী। কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত অলি আহমেদ আবার ‘মুক্তিমঞ্চ’ নামে একটি জোট করে দম নিচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

সংখ্যা বিচারে ২০ দলীয় জোটের মোটামুটি অস্তিত্ব থাকলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দশা আরো করুণ। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মনোমালিন্য ও  বিভক্তি তুঙ্গে। কাদের সিদ্দিকীর দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ তো বেরিয়ে গেছে আগেভাগেই। আ স ম আবদুর রবের জেএসডি দুই ভাগ হয়ে গেছে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের ভাগ মেলানো জটিল। এসবের বাইরে আর কে আছে, যাদের নিয়ে জোট পাকিয়ে বৃহৎ বা বৃহত্তর নাম দেয়া সম্ভব? – জবাব নেই বিএনপির কাছেও। তবে, আকাঙ্খা আছে। দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন ডান-বামের অনেকেই আসবেন। লাইন দিচ্ছেন। তারা কারা? এ জিজ্ঞাসারও জবাব নেই। জবাব খুঁজতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে বঙ্গভবনের সংলাপ বর্জনকারী দলগুলোর কথা ভাবলে ডান-বাম মিলিয়ে সামনে আসে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি -সিপিবি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির নাম। সিপিবি-বাসদ বিএনপির সঙ্গে জোটগত মিতালি করবে তেমন নূন্যতম আভাসও নেই। তাহলে ডান-বাম বা উত্তর-দক্ষিণে আর কে আছে যাদের নিয়ে সংখ্যায় হলেও বৃহৎ জোট নামে এগুবে বিএনপি?

মোস্তফা কামাল: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন