বিজ্ঞাপন

শিল্পায়নের মূল্য আমরাই কেন দেবো— প্রশ্ন পরিকল্পনামন্ত্রীর

February 11, 2022 | 5:30 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: উন্নত ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো শিল্পোন্নয়নের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করলেও পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর যে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, বাংলাদেশের মতো দেশকে তার ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে জানিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ইতিহাস বলে— বিশ্বের কথিত উন্নত রাষ্ট্র বা শক্তিশালী দেশগুলোর শিল্প উন্নয়নের ফলে মানুষ ও প্রকৃতির যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। শিল্প বিপ্লবের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যের বস্তি জীবনের কথাও আমরা জানি। এখন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটছে। আমাদের দেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে শিল্পায়ন ঘটছে। এখন তার মূল্য বাংলাদেশকে কেন দিতে হবে?

শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ‘জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন’ শীর্ষক বাপা-বেন বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে সূচনা পর্বে সম্মেলনের মূল বক্তব্য তুলে ধরেন বাপা’র সহসভাপতি ও বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্কের (বেন) প্রতিষ্ঠাতা ড. নজরুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

মূল বক্তব্যে ড. নজরুল দেশের জ্বালানি পরিকল্পনা, সরবরাহ, সরবরাহের সঙ্গে চাহিদার সমন্বয়, জ্বালানির বিকাশ, জ্বালানি বিকাশ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারি ও বেসরকারি খাতের ভূমিকা, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের আকার-স্থান, বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা, জ্বালানি উন্নয়ন ধারার আর্থিক ও পরিবেশগত স্থায়িত্বশীলতা, জ্বালানি উন্নয়ন ধারার ঝুঁকি প্রভৃতি বিষয়ে কথা বলেন। বক্তব্যে কয়লা ও পরমাণুভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি। বিভিন্ন প্রকল্পে দেশের বিশেষজ্ঞদের উপেক্ষা করে বিদেশিদের প্রাধান্য দেওয়ার অভিযোগ করে বলেন, এসব উদ্যোগের ফলে দেশের প্রকৃতি সংরক্ষণের বিষয়টি গুরুত্ব হারাচ্ছে।

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক নির্ভরতা পীড়াদায়ক হলেও এটিই বাস্তবতা। বিদেশ থেকে এখনো আমাদের অর্থনৈতিক সাহায্য নিতে হচ্ছে অনেকটা বাধ্য হয়েই। তবে ধীরে ধীরে বিদেশের ওপর এই নির্ভরতা ক্রমেই কমছে।

বিজ্ঞাপন

বিদেশের ওপর নির্ভরতার পেছনে বিদেশি দখলদারিত্বের ভূমিকা রয়েছে বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। বলেন— শুধু ভূমি নয়, মানসিক ও সাংস্কৃতিক দখলদারিত্ব ইত্যাদি থেকেই এই সাহায্য নির্ভরতা তৈরি হয়েছে। আর সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজনেই বিশেষজ্ঞ পরামর্শও বিদেশিদের থেকেই নেওয়া হয় বলে দাবি তার।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ধ্বংস না করলে সৃষ্টি হবে না— এই নীতির ওপর দাঁড়িয়ে আছে পুঁজিবাদী অর্থনীতি বা গ্রোথ ইকোনমি। অপচয়জনিত এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নীতি বা নৈতিকতার বিষয়টি গৌণ। বাংলাদেশ এখন গ্রোথ ইকোনমির পর্যায়ে আছে। এখানে কয়েক বছর ধরেই বিদ্যুৎ আলোচনার বিষয়। পাশাপাশি রামপাল, জীবাশ্ম জ্বালানি, কয়লা ইত্যাদি শব্দ চলে আসে। কিন্তু সবকিছু ছাড়িয়ে আমরা দেখেছি দেশের কোটি ঘরে আলো জ্বলে উঠেছে, যা দেশের ১৮ কোটি মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।

তিনি বলেন, এই হাসির কাছ অন্য বিষয়গুলো গৌণ হয়ে যায়। এসব রূপান্তরের মূল্য বাংলাদেশসহ সবাইকেই দিতে হচ্ছে। কিন্তু এটি মোকাবিলা না করার মনোভাব গ্রহণযোগ্য নয়। সরকার এটি কমাতে চায়। কিন্তু দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ বেসরকারি খাতে হওয়ায় সরকার তাদের সঙ্গে পেরে ওঠে না। পরিবেশবাদীদের কথা শুনে সরকার আগ্রহী হলেও তাদের কাছে দুর্বল হয়ে যায়।

জ্বালানি দেশের অর্থনীতির একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত হলেও কয়লা ও অন্যান্য জীবাশ্মসূত্রের গ্রিনহাউজ গ্যাস উদগীরণকারী জ্বালানি পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এমন সময়ে দেশের জ্বালানি কৌশল আরও সুচিন্তিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা ও সংকট সমাধানে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করতেই বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এই সম্মেলন আয়োজন করেছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন