বিজ্ঞাপন

এই উন্নয়ন মানুষ, প্রকৃতি কারও জন্যই উপকারী নয়: রিজওয়ানা হাসান

February 11, 2022 | 11:53 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর নির্বিচার করা হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা হচ্ছে। এই উন্নয়ন মানুষ, প্রকৃতি কারও জন্য উপকারী নয়।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ‘জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন’ শীর্ষক বাপা-বেন বার্ষিক সম্মেলনে প্রথমদিনে প্যারালাল জেনারেল সেশনের সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

এতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে সূচনা পর্বে সম্মেলনের মূল বক্তব্য তুলে ধরেন বাপা’র সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্কের (বেন) প্রতিষ্ঠাতা ড. নজরুল ইসলাম।

মূল বক্তব্যে ড. নজরুল দেশের জ্বালানি পরিকল্পনা, সরবরাহ, সরবরাহের সঙ্গে চাহিদার সমন্বয়, জ্বালানির বিকাশ, জ্বালানি বিকাশ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারি ও বেসরকারি খাতের ভূমিকা, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের আকার-স্থান, বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা, জ্বালানি উন্নয়ন ধারার আর্থিক ও পরিবেশগত স্থায়িত্বশীলতা, জ্বালানি উন্নয়ন ধারার ঝুঁকি প্রভৃতি বিষয়ে কথা বলেন। বক্তব্যে কয়লা ও পরমাণুভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

পরে আলোচনায় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পরিবেশ বিষয়ক নানারকম আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান খুবই খারাপ। ১৮০টি দেশের মধ্যে গত দুইবছর আগে আমাদের অবস্থান ছিল ১৭৯। গত দুই বছরে কেমন করে আমরা ১৬২/১৬৪ তে চলে এসেছি। কীভাবে এসেছি তা জানি না। এসব সমীক্ষায় যেসব ক্রাইটেরিয়া সেট করা থাকে সেই অনুযায়ী হয়। আমাদের ‘ইউনিক’ অবস্থা বিবেচনা করে তো আর সার্ভে হয় না।’

রিজওয়ানা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের সবসময় উন্নয়নের একটি প্রবোধ দিয়ে রাখা হচ্ছে। উন্নয়ন হলে পরিবেশকে ধ্বংস করে হতে হবে, পরিবেশের ক্ষতি হবে, উন্নয়ন আর পরিবেশ সাংঘর্ষিক- এমন মনোভাব আমাদের মানতে বলা হচ্ছে। কিন্তু আমার ২৬/২৭ বছরের কাজের অভিজ্ঞতায় দেখছি এই প্রচারণাটা ভ্রান্ত। আমরা যদি পদ্ধতি ঠিক করি তাহলে উন্নয়ন আর পরিবেশকে সাংঘর্ষিক বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আমাদের নেই।’

তিনি বলেন, ‘বন-গ্রাম নামক কনসেপ্টে ছোট-বড় গাছের পাশাপাশি জলাধার ও প্রাণীর উপস্থিতি থাকবে। কিন্তু সরকারের বন ব্যবস্থাপনা কর্মসূচিতে বন রক্ষা করা যাচ্ছে না। সেখানে গাছ থাকলেও, পানি, বন্যপ্রাণী, খাদ্য ও চিকিৎসার (ভেষজ) সংস্থান নেই।’

বিজ্ঞাপন

বেলার প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘আমাদের উন্নয়নের ন্যারেটিভকে প্রশ্ন করতে হবে। ২৯টি নদী বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত, আমাদের বাতাস বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাস, আমরা সবচেয়ে অবসবাসযোগ্য নগরীতে বসবাস করি। তার মানে আমাদের ওপর যে উন্নয়ন চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে তা আমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নয়। এতে আমাদের কোনো অংশগ্রহণ নেই, আমাদের জেলের নেই, কৃষকের নেই সেটি আমাদের বুঝতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশি বনে বিদেশি পশু আনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমি বলব, ২০২১ সাল বাংলাদশের ইতিহাসের একটি কলঙ্কিত বর্ষ। এই এক বছরে আমরা ৩২টি হাতিকে হত্যা করেছি। হাতির চলাচলের পথকে আমরা কৃষিজমিতে রূপান্তর করেছি।’

এর আগে, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সম্পাদক শরীফ জামিল তার বক্তব্য ও প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়নের ধারণা দূর হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন। রিজওয়ানা হাসান এই বক্তব্যের সমর্থনে বলেন, ‘টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততার যে বিষয়টি জড়িত তা আমাদের দেশে একদমই মানা হয় না। পরিবেশ বিধিতে উল্লেখ থাকলেও তা মানা হয়নি।’

রিজওয়ানা বলেন, ‘আমাদের তাই উন্নয়নকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। শুধু ব্যক্তির ওপর না, সিস্টেমের ওপর নির্ভর করতে হবে। আগে সিস্টেম ঠিক করতে হবে, কথা বলতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত, জ্বালানি দেশের অর্থনীতির একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত হলেও কয়লা ও অন্যান্য জীবাশ্মসূত্রের গ্রিনহাউজ গ্যাস উদগীরণকারী জ্বালানি পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এমন সময়ে দেশের জ্বালানি কৌশল আরও সুচিন্তিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা ও সংকট সমাধানে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করতেই বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এই সম্মেলন আয়োজন করেছে।

সারাবাংলা/আরএফ/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন