বিজ্ঞাপন

ভোটের আগের রাতেই ইভিএমে ফলাফল চূড়ান্ত!

February 16, 2022 | 1:09 pm

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ভোটের আগের দিন রাতেই একটি কেন্দ্রের ফলাফল চূড়ান্ত করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হচ্ছে, আগের রাতে ফল চূড়ান্ত করার পরদিন ভোটগ্রহণ শেষে একই ফল হাতে লিখে দেওয়া হয়েছে প্রার্থীদের। ‘গুরুতর’ অভিযোগটি উত্থাপন করেছেন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ জাহান আলী।

বিজ্ঞাপন

ষষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শাহ জাহান আলী কাজলা ইউনিয়ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে পরাজিত হয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে। অভিযোগে তিনি বলছেন, ইভিএমের মাধ্যমে ভোট জালিয়াতি করে কাজলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর পাকুরিয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ইসিতে জমা দিয়ে নির্বাচন বাতিল করে সেখানে পুনঃনির্বাচনের দাবি করেছেন তিনি।

ইভিএমে ভোটগ্রহণ সংক্রান্ত এ ধরনের কোনো অভিযোগ এটিই প্রথম। নির্বাচন কমিশন অভিযোগটিকে ‘গুরুতর’ উল্লেখ করে বলছে, তারা অভিযোগটি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে।

শাহ জাহান আলীর অভিযোগের একটি কপি সারাবাংলার হাতে এসেছে। অভিযোগে তিনি বলেছেন, ইভিএমের মাধ্যমে ভোট জালিয়াতি করে নির্বাচনের আগের দিন রাতেই একটি কেন্দ্রের ফলাফল চূড়ান্ত করে প্রিন্ট বের করে রাখা হয়। পরদিন ওই একই ফলাফল হাতে লিখে সরবরাহ করা হয়। ইভিএম থেকে বের হওয়া ফলাফলের প্রিন্ট কপি প্রার্থীদের মাঝে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও ফলাফল হাতে লিখে বিতরণ করা হয়। এতে দেখা গেছে, আগের রাতে ইভিএম থেকে প্রিন্ট করা ফলাফলের সঙ্গে হাতে লিখে বিতরণ করা ফলাফল হুবহু মিলে গেছে।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগে বলা হয়েছে, হাতে লেখা ফলাফল ৩১ তারিখের হলেও ইভিএমের যে ফলাফলটি পাওয়া গেছে তা ছিল ৩০ জানুয়ারি রাত ১০টা ৫৮ মিনিটে প্রিন্ট বের করা একটি কপি। ইভিএমের প্রিন্ট কপিতে তারিখ ও সময় উল্লেখ থাকায় নির্বাচনি এলাকায় এটি নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে সারাবাংলাকে বলেন, অভিযোগটি এখনো হাতে আসেনি। তবে আপনার কাছে শুনে মনে হচ্ছে অভিযোগটি গুরুতর। তাই অভিযোগটি ফাইল আকারে কমিশনে ওঠাব। তবে বর্তমানে কমিশন না থাকায় নতুন কমিশন আসার আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাব না।

নির্বাচন কমিশনের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইভিএমে এ ধরনের ঘটনা হওয়ার কথা না। তারপরও যেহেতু অভিযোগ এসেছে এবং তথ্য-প্রমাণসহ আবেদন করা হয়েছে, তাই আমরা বিষযটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখব।

বিজ্ঞাপন

বাঁয়ে ইভিএম থেকে প্রিন্ট দেওয়া ফল ও ডানে ভোটকেন্দ্র থেকে দেওয়া হাতে লেখা ফল একই দেখা গেছে; ইভিএমে তারিখ দেখাচ্ছে ৩০ জানুয়ারি রাত ১০টা ৫৮ মিনিট

মো. শাহ জাহান আলী বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ষষ্ঠ ধাপে এই ইউনিয়নে গত ৩১ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। নির্বাচনের আগে থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলামের বাড়ি সংলগ্ন ২০, ৫০ ও ৭০ গজের মধ্যে তিনটি ভোটকেন্দ্র হওয়ায় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে এর আগে লিখিত অভিযোগও করেছিলেন তিনি।

অভিযোগে শাহ জাহান আলী লিখেছেন, পাশাপাশি ৭ নম্বর পাকুরিয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং অফিসার মতিয়ার রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকুল ইসলামের নিকট আত্মীয় হওয়ায় তাকে প্রিজাইডিং অফিসার হিসাবে দায়িত্ব না দেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছিলাম। কিন্তু ভোটে প্রভাব বিস্তারসহ আমার কোনো অভিযোগই আমলে নেওয়া হয়নি।

ইসি সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগে আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী বলেন, কাজলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর পাকুরিয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রের ফলাফল প্রকাশিত হলে দেখা যায়, ৩১ জানুয়ারি নির্বাচনে যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে সেটি ছিল মূলত ৩০ জানুয়ারি রাত ১০টা ৫৮ মিনিটে ইভিএম থেকে প্রিন্ট বের করা একটি ফলাফল। এতে প্রতীয়মান হয়, ৭ নম্বর পাকুরিয়ার চর কেন্দ্রের নির্বাচন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সম্পন্ন করে গত ৩১ জানুয়ারি তারিখের নির্বাচনের ফলাফল আগের রাতে চূড়ান্ত করে বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলামকে বিজয়ী করা হয়েছে।

সারাবাংলার কাছে অভিযোগের কথা জানিয়ে শাহ জাহান আলী বলেন, ওই কেন্দ্রে ১২০৪ ভোটের মধ্যে ৯১৪ ভোট (৭৬ শতাংশ) কাস্ট দেখানো হয়েছে। আমি মাত্র ১৩০ ভোট পেয়েছি দেখানো হয়েছে। নির্বাচন শেষে সব কেন্দ্রের ফল মিলিয়ে চূড়ান্ত ফলাফলে আমার চেয়ে মাত্র ৪২ ভোট দেখিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে বিজয়ী দেখানো হয়েছে। এ অবস্থায় আগের রাতে ফলাফল নির্ধারিত হওয়া ৭ নম্বর পাকুরিয়ার চর ভোট কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের দাবি করছি।

বিজ্ঞাপন

পাকুরিয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দায়িত্বপালনকারী প্রিজাইডিং অফিসার মতিয়ার রহমান অবশ্য ভোটের আগের রাতে ইভিএমে ফল চূড়ান্ত করার অভিযোগ অস্বীকার করছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগের রাতে ইভিএমে ফলাফল চূড়ান্ত করার অভিযোগটি সত্য নয়।’ তবে ইভিএমের ফলাফলের প্রিন্ট কপি প্রার্থীদের দেওয়ার পরিবর্তে হাতে লিখে ফলাফল প্রকাশ করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি।

অন্যদিকে সারিয়াকান্দি উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, আগের রাতে ইভিএমে ভোটে ফলাফল দেওয়া সংক্রান্ত একটি কাগজ আমি দেখেছি। যে প্রিন্ট কপিটি দেখানো হয়েছে, তা সঠিক। তবে এটি কিভাবে সম্ভব হলো, তা আমি বলতে পারব না।

তিনি বলেন, সাধারণ ভোটের আগের দিন এক্সপার্টরা কেন্দ্রে গিয়ে ইভিএমে ভোট নেওয়ার সেটআপ দিয়ে আসেন। সেটআপের সময় তারিখে কোনো ভুল হয়েছে কি না, সেটি এক্সপার্টরা বলতে পারবেন।

সারাবাংলা/জিএস/এএম/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন