বিজ্ঞাপন

টিকার বদলে জুটছে লাঠিপেটা, বিশৃঙ্খলায় চলছে ভ্যাকসিন কার্যক্রম

February 18, 2022 | 5:03 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর উপজেলায় করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিতে আসা স্কুলের শিক্ষার্থীরা লাঠিপেটার শিকার হয়েছেন। কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরাই তাদের লাঠিপেটা করেছেন, এতে প্রায় ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলা, হুড়োহুড়ি আর লাঠিপেটার ঘটনায় ভ্যাকসিন না পেরে অনেক শিক্ষার্থীই হতাশ হয়ে বাড়িতে ফিরে যান। গত বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ওই কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের উপর স্বেচ্ছাসেবকরা লাঠিপেটার ঘটনার সত্যতাও পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলায় ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৫৯ জন শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর থেকে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়।

চলতি বছরের বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত জেলায় ১ লাখ ৫১ হাজার ৫০২ জন শিক্ষার্থীকে প্রথম ডোজ এবং ৬২ হাজার ৮৮ শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে গত বুধবার পর্যন্ত (১৬ ফেব্রুয়ারি) ৫১ জনকে প্রথম ডোজ এবং ৩ হাজার ১১৭ শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়। ওই দিন সকাল নয়টা থেকে শিক্ষার্থীরা ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে আসতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ভিড়ও বাড়তে থাকে।

বিজ্ঞাপন

ভ্যাকসিন নিতে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। সকাল ১০টার দিকে টিকা দেওয়া শুরু হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রে নিয়োজিত ১০/১২ জনের ভলান্টিয়ার লাঠি হাতে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা শুরু করে। লাঠিপেটা থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীরা এদিক ওদিক ছুটোছুটি করতে থাকে।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রের বাইরে উপচে পড়া ভিড়। ভেতরে বাঁ পাশের লাইনে ছাত্র ও ডান পাশে ছাত্রীরা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। ভিড়ের মধ্যে শিক্ষার্থীরা গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। কারও কারও মুখে মাস্ক নেই। বাইরে অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীরা হুড়োহুড়ি করে ভেতরে প্রবেশ করছে।

বিজ্ঞাপন

কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা অনেকেই প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার দূর থেকে ভ্যাকসিন নিতে এসেছেন। অথচ ভ্যাকসিন নিতে এসে যদি মার খেতে হচ্ছে। এর জন্য দায়ী কর্তৃপক্ষ।

ভেলাজান উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আহসান হাবিব বলেন, ‘শুরু থেকে সারি করেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। ভিড় বাড়ায় বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। এ সময় ভিড় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করেই টিকাদান কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিপেটা শুরু করেন। এতে ৮ থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। এসময় মেয়েদেরও মারধর করা হয়েছে।’

আখানগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এহসানুল হক বলেন, ‘একদিনে একসঙ্গে এত শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনা ঠিক হয়নি। এব্যাপারে ভ্যাকসিন বাস্তবায়ন কমিটির পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল।’

ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন নূর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা হচ্ছে, এটা ঠিক না। তবে এখানে ভ্যাকসিন নিতে এক দিনে বেশি শিক্ষার্থী চলে এসেছে। ভ্যাকসিন গ্রহীতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের মধ্যে ঠেলাঠেলি হয়েছে। এটা সামাল দিতে স্বেচ্ছাসেবকেরা হয়তো হাতে লাঠি নিয়েছিলেন। এটা শোনার পরে লাঠি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘করোনার ভ্যাকসিন নিতে আসা শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা কেন ঘটলো তা খতিয়ে দেখা হবে। আর শিক্ষার্থীদের সুশৃঙ্খলভাবে টিকা দিতে কেন্দ্র বাড়ানোর বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে।’

সারাবাংলা/এমও

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন