এশার ওপর হামলাকারীদের বিচার চান ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা

।। ইব্রাহীম মল্লিক সুজন, নিউজরুম এডিটর।।

ঢাকা: ছাত্রী নিপীড়নের অভিযোগে বহিষ্কৃত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগ সভাপতি ইফাত জাহান এশাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা।

বৃহস্পতিবার (১২ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টার সময় এশার বনশ্রীর ই-ব্লকের বাসায় তাকে দেখতে যান ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতারা। এসময় তারা এশার উপর হামলাকারীদের বিচারের দাবি জানান।

সেখানে উপস্থিত একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাবেক নেতাদের দেখে এশা হাউমাউ করে কান্নাকাটি শুরু করেন। তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, তাকে ঘটনার সময় কোনো কথাই বলতে দেওয়া হয়নি। তার বক্তব্য না শুনেই প্রক্টর স্যার তাকে সব ছাত্রীর সামনে গালি-গালাজ শুরু করে। এতে তিনি সবার সামনে অপরাধী প্রমাণিত হয়ে যান এবং পরিস্থিতি তার প্রতিকূলে চলে যায়। এরপর তিনি নিজের বক্তব্য দেয়ার আর সুযোগ পাননি।

এসময় এশা সাবেক নেতাদের কাছে অভিযোগ করেন, ‘আমার অপরাধ প্রমাণিত হলে আমাকে যে শাস্তি দেয়া হতো তা আমি মাথা পেতে নিতাম। কিন্তু ঘটনার পর আমার কোনো কথাই শোনা হয়নি। আমাকে ব্যাপকভাবে শারীরিক ও মানসিক টর্চার করা হয়েছে। কোনো অপরাধ না করেই আমাকে সংগঠন, হল এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সব থেকে কষ্টের বিষয় হলো-যে বিশ্ববিদ্যালয় ও হলকে আমি আমার প্রাণের থেকে বেশি ভালবাসতাম, তার ছাত্রীরাই আমার গলায় জুতার মালা পড়িয়েছে। একটি বারও আমার কথা শোনার প্রয়োজন মনে করেননি। অপরাধ না করেও আজ আমার এবং আমার পরিবারের যে সম্মানহানি হলো এই সম্মান আমাকে কে ফিরিয়ে দেবে বলে প্রশ্ন করেন তিনি।

এসময় এশার বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন- ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি জয়দেব নন্দী, শাহিনুর রশিদ সোহেল, ওয়ারেছি চঞ্চল, আব্দুর রহমান জীবন, জিসান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, সাবেক যুগ্ম সাধারণ ও যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি, শামসুল কবির রাহাত, হাসানুজ্জামান তারেক, মামুনুর রশিদ সর্দার, এস এম তরিকুল ইসলাম, রেজাউল হাফিজ রেশিম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শিহাবুজ্জামান শিহাব, আফরিন নুসরাত, সাবেক গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক নবেন্দু সাহা নব, সাবেক দফতর সম্পাদক শেখ রাসেল, সাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ, সাবেক সহসম্পাদক শারমিন সুলতানা তনমী ও জাকিয়া নিপাসহ আরও অনেকে।

এ বিষয়ে সংগঠনের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি সারাবাংলাকে বলেন, এশাকে যে চক্রান্ত করে হল থেকে বের করা হয়েছে এটি এখন প্রমাণিত হয়েছে। এই ঘটনার অনেকগুলো ভিডিও ক্লিপ বের হয়েছে। যা দেখে স্পষ্টতই বোঝা যায় এশা ঘটনার শিকার। তাকে যেসব বহিষ্কারাদেশ দেয়া হয়েছে, সেগুলো অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক। যারা তার সম্মানহানির জন্য ‘প্রোপাগান্ডা’ ছড়িয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানাই।

সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আশিক রণ বলেন, একজন ছাত্র নিহত হয়েছেন এমন একটি গুজবের উপর ভিত্তি করে ভিসির বাসায় হামলা হলো। আমরা আবারও দেখলাম যে ‘ছাত্রলীগ নেত্রী আরেক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটেছেন’ এমন আরেকটি গুজবের উপর ভিত্তি করে একজন ছাত্রীকে হাজার হাজার মানুষের সামনে মারধোর করে অপমান করা হলো। কোনো তদন্ত ছাড়াই তাকে বহিষ্কার করা হলো। সব দায়ভার চাপিয়ে দেয়া হলো ছাত্রলীগের উপরে। আমরা ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ তাই আমাদের বোন এশার জুতোর মালা নিজেদের কাধে নিয়ে তাকে ফুলের মালা দিলাম। এশাকে যারা ফাঁসিয়েছে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। গুজবের উপর ভিত্তি করে যারা ভিসির বাসায় যারা হামলা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হলে এশার বিরুদ্ধে যারা গুজব ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করে বিচার করা উচিত।

গত মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল) দিবাগত রাতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি সুফিয়া কামাল হলের কয়েকজন ছাত্রীকে রাতে মারধর করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে হলটির সভাপতি ইফাত জাহান এশাকে হল, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। ‘আন্দোলনে অংশ নেয়ায় ছাত্রীর রগ কেটে দেয়া হয়েছে’ এমন তথ্য সামাজিক যোগাযোগে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন হল থেকে ছাত্ররা এসে হলটির সামনে জড়ো হয় এবং ঘটনার প্রতিবাদ জানান।

সারাবাংলা/এমআইএস/জেডএফ