বিজ্ঞাপন

২০২১ সালে ধর্ষণের শিকার ৮১৮ শিশু, ২০২০ সালের চেয়ে ৩০% বেশি

February 22, 2022 | 7:40 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ২০২১ সালে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮১৮টি শিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা গেছে ১৪ জন। এছাড়াও ৯৪টি শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে আরও ১১০টি শিশু।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে ২০২১ সালের পরিস্থিতি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)। সংস্থাটি বলছে, ২০২০ সালে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল ৬২৬টি শিশু। সে হিসাবে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে শিশু ধর্ষণ বেড়েছে ৩০ শতাংশ।

অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২১’ প্রতিবেদন উপস্থাপন করে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। এসময় জানানো হয়, পাঁচটি জাতীয় বাংলা দৈনিক এবং তিনটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত শিশু অধিকার বিষয়ক সংবাদ পর্যালোচনা করে তারা এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

শিশু নির্যাতন পরিস্থিতি

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিস্থিতি প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ সালে ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে বাল্যবিয়ে। ২০২০ সালে ১০১টি শিশুর বাল্যবিয়ে হলেও ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৩ হাজার ৫৪টি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব রেখেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ৩৪ শিশুর বিপরীতে গত বছরটিতে আত্মহত্যা করেছে ৭৮টি শিশু। এর মধ্যে ছেলে ৫৭টি, মেয়ে ২১টি। এসব আত্মহত্যার পেছনে পরীক্ষায় ফল বিপর্যয়, পরিবারের ওপর রাগ, প্রেম, উত্ত্যক্ত হওয়া, ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার শিকার হওয়া, ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির বিচার না পাওয়া এবং সাইবার অপরাধ বা ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকারের মতো ঘটনাগুলো কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।

শিশু হত্যাকাণ্ডও ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে বেড়েছে। প্রতিবেদন বলছে, আগের বছর ১৪৫টি শিশুকে হত্যা করা হয়েছিল। ২০২১ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮৩। এছাড়া আরও ১৩৫টি শিশুকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।

২০২১ সালে অবশ্য ২০২০ সালের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু হতাহতের সংখ্যা কমেছে। ২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল ১৫৮টি শিশু। ২০২১ সালে এই সংখ্যা কমে হয়েছে ৬৯।

বিজ্ঞাপন

এর বাইরেও নানা ধরনের নির্যাতনে আহত হয়েছে ২৫৪টি শিশু। হারিয়ে গেছে ৩৮টি শিশু। অপহরণের শিকার হয়েছে ২২টি শিশু। অপহরণের পেছনে টাকা, প্রেম, বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, প্রতিশোধ, পাচার, মুক্তিপণের দাবির মতো কারণগুলো উঠে এসেছে।

এছাড়া ২০২১ সালে পানিতে ডুবে মারা গেছে ৫৭০টি শিশু। ২০২০ সালে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া শিশুর তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন গুণ। ওই বছর পানিতে ডুবে ১৬৫টি শিশু মরা গিয়েছিল।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২১ সালে অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশুর সংখ্যা ছিল ১২০। এ বছর শিশুদের নিয়ে ২৫টি বিষয়ের ওপর নেতিবাচক খবর ছাপা হয়েছে ১ হাজার ৯৩০টি। এর বিপরীতে ইতিবাচক খবর ছাপা হয়েছে ১২টি বিষয়ের ওপর ১০৬টি।

পরিবারে নিরাপদ নয় শিশু

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন সংবাদ পর্যালোচনায় তৈরি করা প্রতিবেদনে বলছে, বাংলাদেশের শিশুরা পরিবারেই অর্থাৎ নিজেদের ঘরেই নিরাপদ নয়। শিশু ধর্ষণের অধিকাংশ ঘটনা পরিবারিক পরিবেশে পরিচিতদের দ্বারাই সংঘটিত হয়েছে। এর বাইরে প্রতিবেশীদের হাতে ধর্ষণের বড় অংশের ঘটনা ঘটছে। পারিবারিক কারণেই বাল্যাবিয়েও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

সংস্থাটি পর্যবেক্ষণে আরও বলছে, বেশিরভাগ শিশুকে লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ করছে পরিচিতজনরা। মূলত কম বয়সী শিশুরাই এরকম ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। কিশোরীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে প্রেম করতে গিয়ে। স্কুল ও মাদরাসাশিক্ষার্থীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে শিক্ষক ও মাদরাসার হুজুরদের হাতে।

শিশু সুরক্ষায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানকে সহৃদয়বান হওয়ার আহ্বান

অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শিশু ও সমন্বয় উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব মুহিবুজ্জামান বলেন, পত্রিকা থেকে পাওয়া তথ্য অপরাধ প্রবণতার ধারণামাত্র। ১৫টি পত্রিকা থেকে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় তথ্য গ্রহণ করে। ১০৯ হটলাইন নম্বরেও প্রতিদিন অসংখ্য ফোন আসে। সেখান থেকে আমরা অপরাধের ডাটাবেজ তৈরি করি।

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। তিনি বলেন, এমজেএফের বিশ্লেষণ অনুযায় শিশুরা নিজেদের বাসায় নিরাপদ নয়। শিশু ধর্ষণ ও শিশুর যৌন হয়রানি বন্ধ করতে সবাইকে এখনই জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। শিশু সুরক্ষায় নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও বেশি সহৃদয়বান হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি শিশু অধিকার রক্ষায় সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বানও জানান।

সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহবুবা বিলকিস। এমজেএফের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের প্রতিনিধিরাও আলোচনায় অংশ নেন। এসময় শিশু পরিস্থিতি প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সংস্থার কো-অর্ডিনেটর রাফেজা শাহীন।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন