বিজ্ঞাপন

পরিপাটি মেলার খুঁটিনাটি ত্রুটিগুলো

February 24, 2022 | 8:53 pm

আসাদ জামান

২৪ ফেব্রুয়ারি। বিকেল ৩টা ৬ মিনিট। টিএসসিসংলগ্ন গেট দিয়ে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানাংশে প্রবেশের পর ঘোষণা মঞ্চের মাইক থেকে ভেসে এলো ‘খান মুহম্মদ মঈনুদ্দীন রচনা সংগ্রহ, সম্পাদক আহসান হাবীব, মূল্য ৩৪০ টাকা, আবু হেনা মোস্তফাকামাল রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড, আনিসুজ্জামান-বিশ্বজিৎঘোষ যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন মূল্য ৪৫০ টাকা… ব্যাস এতটুকুই!!

বিজ্ঞাপন

প্রকাশক, প্রকাশনী, স্টল বা প্যাভিলিয়নের নাম ও নম্বর কিছুই নেই। সুতরাং ঘোষণা মঞ্চ থেকে পাওয়া ওই তথ্যটুকু পুঁজি করে কেউ যদি বই দু’টি কিনতে চায় তাহলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে সাত লাখ বর্গফুট জায়গা ঘুরে ৩৫টি প্যাভিলিয়ন এবং ৪৩২টি স্টলে খোঁজ করতে হবে। তবেই মিলবে- ‘অনেক বৃষ্টি ঝরে তুমি এলে/যেন একমুঠো রোদ্দুর আমার দু’চোখ ভরে তুমি এলে/কত বেদনার বিষন্ন মেঘে ভেসে ভেসে/ এলে তুমি অবশেষে/ তাই বাতায়নে ময়ূরেরও ঝিলিমিলি ঝিলিমিলি/ আজ সারাদিন ধরে, আমার দু’চোখ ভরে/ তুমি এলে/ আমি যেন এই আলোর খেয়ায়/ আনমনে ভেসে যাই/ কোনো স্বপ্নেরও দেশে যাই’ অথবা ‘তুমি যে আমার কবিতা/ আমারো বাঁশীর রাগিনী/ আমারো স্বপন আধ-জাগরণ/ চিরদিন তোমারে চিনি/ তুমি যে আমার কবিতা/ আমারো বাঁশীর রাগিনী/ আমারো স্বপন আধ-জাগরণ/ চিরদিন তোমারে চিনি/তুমি যে আমার কবিতা’র অমর স্রষ্টা আবু হেনা মোস্তফা কামাল রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড। ভাগ্য আরও ভালো হলে মিলে যেতে পারে ‘ঐ দেখা যায় তাল গাছ/ ঐ আমাগের গাঁ/ ঐ খানেতে বাস করে/ কানা বগীর ছা/ ও বগী তুই খাস কী? পানতা ভাত চাস কি? পানতা আমি খাই না/ পুঁটি পাছ পাই না/ একটা যদি পাই/অমনি ধরে গাপুস গুপুস খাই-এর স্রষ্টা খান মুহম্মদ মঈনুদ্দীন রচনা সংগ্রহ।

না, কোনো অনুযোগ নয়, করোনা মহামারির মধ্যেও বিস্তৃত পরিসরে পরিপাটি আয়োজন- এ জন্য মেলা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলাই যায়- ঘোষণা মঞ্চ থেকে বইয়ের নাম, লেখকের নাম এবং বইয়ের মূল্য জানানোর পাশাপাশি প্রকাশক, প্রকাশনী, স্টল বা প্যাভিলয়ন নম্বরটা বলে দিলে পাঠক আরও উপকৃত হবে বৈকি!

বিজ্ঞাপন

পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে বইমেলা শুরু হওয়ার রীতি থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার দুই সপ্তাহ দেরিতে শুরু হয়েছে। ফলে ফেব্রুয়ারির ২৪তম দিনে এসে মেলার বয়স মাত্র ১০ দিন। এই দশম দিনে বইমেলার পর্দা ওঠার পরই ভেতরে ভীষণ ভীর লক্ষ্য করা গেল। মেলা বৃত্তের মধ্যে শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত মঞ্চের প্রবেশ মুখে দাঁড়িয়ে দেদারসে ছবি তুলছিলেন পাঁচ তরুণ-তরুণী। তাদের মধ্যে বইপ্রেম কতটা আছে-বোঝা মুশকিল হলেও সেলফি ও ফটোশুটের প্রতি যে গভীর প্রেম, সেটা বুঝতে মোটেও কষ্ট হলো না।

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বইমেলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথসহ পুরো এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো থাকলেও ‘অতি প্রিয়জনকে’ নিয়ে মেলায় আসা তরুণটির সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। উন্মুক্ত মঞ্চ এবং মেলা প্রচাীরের সন্ধিস্থলে দাঁড়িয়ে প্রেম বিনিময়ের ন্যূনতম সুযোগটুকু হাতছাড়া করতে রাজি নয় সে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের নবীন সদস্যরাও বিষয়টিকে যে খুব করেই দেখছে- সেটা বোঝা গেল তাদের না দেখার ভান থেকেই।

মেলার যেহেতু দশম দিন, সেহেতু বেচা-বিক্রির একটু খোঁজ-খবর নিতে ঢুঁ মারলাম কয়েকটি বিখ্যাত প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নে। বাদ পড়ল না বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়নও। মানসম্মত বই, চমৎকার বাঁধাই, সাশ্রয়ী মূল্যের কথা মাথায় রেখে অনেক পাঠকই আসেন বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়নে। কিন্তু ‘সাশ্রয়ী মূল্য’র সেই ধারণা থেকে রাষ্ট্রীয় (শ্বায়ত্বশাসিত) এ প্রতিষ্ঠানটি অনেক আগেই সরে গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘আমার দেখা নয়া চীন’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ বই দুইটির গায়ের মূল্য ধরা হয়েছে ৪০০+৪০০= ৮০০ (আট শত) টাকা। প্রকাশের পর থেকে ‘বেস্টসেলার’- এর তালিকায় থাকা এই বই দু’টি যথারীতি ১৫% ছাড়ে বিক্রি করছে বাংলা একাডেমি। গুরুত্ব বিবেচনায় সর্ব সাধারণের কাছে বই দু’টি পৌঁছাতে দাম আরেকটু কম রাখলে খুব বেশি ক্ষতি হতো না বোধ হয়।

বিজ্ঞাপন

১২ খণ্ডের নজরুল সমগ্রের দাম ২৬০০ টাকা। জনপ্রিয় এই সিরিজটিও ১৫ ছাড়ে বিক্রি করছে বাংলা একাডেমি। বিক্রয়কর্মীদের দাবি- মেলার বাইরে বইগুলো কিনতে গেলে একসাথে ১২ খণ্ড পাওয়া মুশকিল। তাই যারা নজরুলকে ঘরে রাখতে চান, তাদের জন্য ‘বইমেলা’ একটা সুবর্ণ সুযোগ।

বরাবরই ভালো বই এনে থাকেন ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)। দেশের বনেদি, ঐতিহ্যবাহী এবং প্রভাবশালী এই প্রকাশনী এবার মেলায় এনেছে জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাকের ‘পলিটিক্যাল পার্টিজ ইন ইন্ডিয়া’ (Political parties in India) বইটি। ইউপিএল’র বিক্রয়কর্মীদের দেওয়া তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত মেলায় সর্বাধিক বিক্রিত বই এটি।

জাতীয় অধ্যাপক জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাকের State of the Nation (জাতির অবস্থা) বই’র পর পলিটিক্যাল পার্টিজ ইন ইন্ডিয়া’ (Political parties in India) এটিই বোধ হয় উপমহাদেশের রাজনীতির ওপর আরেকটি আলোচিত বই হতে যাচ্ছে। ইংরেজি ভাষায় লেখা এই বইটি বোদ্ধা শ্রেণির পাঠক আনন্দ চিত্তেই কিনছে বলে জানান ইউপিএলের প্রধান বিক্রয় কর্মকর্তা আবু ইউসুফ।

বিজ্ঞাপন

মেলার অন্যান্য স্টল ও প্যাভিলিয়নেও ভিড়। আবার কিছু কিছু স্টল একেবারেই ফাঁকা। তবে স্বাধীনতা টাওয়ার বেষ্টন করে রাখা জলাধারের তিন ধারে তীল ধারণের ঠাঁই নেই! ফাল্গুনের গরমে আইসক্রিম আর সেলফিবাজিতে বুঁদ হয়ে আছে তরুণ-তরুণীরা। মেলার আয়ুষ্কাল বাড়লে আইসক্রিমের চাহিদাও বাড়বে। বাড়বে তরুণ-তরুণীর ভিড়। তাতে কোনো সমস্য নেই। চাওয়া শুধু সৃজনশীল বই, বইয়ের বিক্রি আর পাঠাভ্যাস।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন