বিজ্ঞাপন

ফেব্রুয়ারিতে ধর্ষণ জানুয়ারির দেড় গুণ, বেড়েছে আত্মহত্যা

February 28, 2022 | 7:23 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১০৩টি। জানুয়ারি মাসে এই সংখ্যা ছিল ৬৫টি। সে হিসাবে জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দেড় গুণেরও বেশি। শুধু তাই নয়, আগের মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে নারী ও শিশু আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে বেশি। একইসঙ্গে বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতনের সার্বিক সংখ্যাও।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) ফেব্রুয়ারি মাসে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার চিত্র তুলে ধরেছে। ১২টি জাতীয় দৈনিক ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের পাশাপাশি হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারদের মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করে তারা মাসিক এই মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এমএসএফের প্রতিবেদন বলছে, ফেব্রুয়ারি মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৩৫৬টি। জানুয়ারি মাসে এই সংখ্যা ছিল ৩২৫টি। সে হিসাবে জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।

আরও পড়ুন- ৪৫ শিশু-কিশোরীসহ জানুয়ারি মাসে ৬৫ ধর্ষণ

বিজ্ঞাপন

সার্বিকভাবে নারী-শিশু নির্যাতন ১০ শতাংশ বাড়লেও জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে প্রায় ৫৮ শতাংশ। জানুয়ারি মাসে এই সংখ্যা ছিল ৬৫টি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয়েছে ১০৩টি।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্ষণের ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৩টি দলবেঁধে ধর্ষণ এবং একটি ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ছয়টি প্রতিবন্ধী শিশু ও কিশোরী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এ মাসে। ধর্ষণের শিকার যারা তাদের মধ্যে সাত কিশোরীকে দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৫টি ধর্ষণচেষ্টা, ১১টি যৌন হয়রানি ও ৫৩টি শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে এ মাসে। ধর্ষণের দুইটি ঘটনা অবৈধ সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়েছে।

এদিকে, দেশে জানুয়ারি মাসে ৬২ জন নারী ও শিশু আত্মহত্যা করেছিলেন। ফেব্রুয়ারি মাসে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৭টি। এমএসএফ বলছে, পরীক্ষায় ফল বিপর্যয়, পরিবারের ওপর রাগ, প্রেম, উত্ত্যক্তের শিকার হওয়া, ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার শিকার হওয়া, শ্লীলতাহানির বিচার না পাওয়া এবং সাইবার অপরাধ ও প্রতারণার শিকার হয়ে আত্মহত্যার এসব ঘটনা ঘটেছে।

বিজ্ঞাপন

এর বাইরে ফেব্রুয়ারি মাসে অপহরণের শিকার হয়েছে দুইটি শিশু। নিখোঁজ হয়েছে আটটি শিশু ও দুইটি কিশোরী। আর এ মাসে হত্যার শিকার হয়েছেন ৭৮ জন নারী ও শিশু। এর মধ্যে ১৬ জনের মৃত্যু ছিল অস্বাভাবিক। গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে এমএসএফ বলছে, পারিবারিক বিরোধ, যৌতুক, তালাক ইত্যাদি কারণে এ হত্যকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে।

এছাড়া মৃত অবস্থায় ১১টি ও জীবিত অবস্থায় চারটিসহ মোট ১৫টি নবজাতককে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে ফেব্রুয়ারি মাসে। অন্যদিকে চিকিৎসার অবহেলায় কমপক্ষে চার জন নবজাতক ও প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগও পাওয়া গেছে এ মাসে। অন্য একটি ঘটনায় বরিশালের গৌরনদীতে একটি নবজাতককে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে, ১৩ টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ফেব্রুয়ারি মাসের নারী ও কন্যাশিশু পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ মাসে মোট ২৬৫ নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮৮ জন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার কন্যাশিশু ৪৬টি। এছাড়া তিনটি কন্যাশিশুসহ দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ১২। এর মধ্যে একটি শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও ছয় কন্যাশিশুসহ আট জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। একজন কন্যাশিশুসহ চার জন শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন। এক শিশুসহ যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তিন জন। এসিডদগ্ধের শিকার হয়েছে এক জন।

মহিলা পরিষদের প্রতিবেদন আরও বলছে, ফেব্রুয়ারি মাসে পাঁচ কন্যাশিশুসহ আট জনকে উত্ত্যক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে এক কন্যাশিশুসহ দু’জন এ কারণে আত্মহত্যাও করেছেন। এ মাসে অপহরণের শিকার হয়েছেন ১০ শিশুসহ ১৩ জন। দুই জনকে পতিতালয়ে বিক্রি করা হয়েছে। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২১ জন। সাত জনকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক শিশুসহ ১২ জন। বিভিন্ন কারণে ১০ শিশুসহ ২৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও ১৫ জনকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এর বাইরেও ১২ শিশুসহ ৩৭ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে। এছাড়া ছয় কন্যাশিশুসহ ১৩ জন আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন আরও তিন জন। এক শিশুসহ সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছে পাঁচ জন। এ মাসে বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে তিনটি।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন