বিজ্ঞাপন

ড. কামালের ঘরে-বাইরে ঘনঘটা

March 15, 2022 | 4:09 pm

মোস্তফা কামাল

প্রেসক্লাবে দুই গ্রুপে সংঘর্ষ এবং কয়েকজন আহতের মধ্য দিয়ে অনেকের মনে পড়েছে গণফোরাম নামে দেশে একটি দল আছে। শনিবার গণফোরামের একাংশের বিশেষ কাউন্সিলেও দুই অংশের সংঘর্ষ ছাড়া দলটির নাম মনে আসার মতো হালে দ্বিতীয় কোনো ঘটনা নেই। সংঘর্ষে ড. কামাল অংশের নির্বাহী সভাপতি মোকাব্বির খানসহ কয়েকজন আহত হন দাবি করে দায়ি করা হয়েছে মোস্তফা মহসীন মন্টুকে। জবাবে মন্টু বলেছেন, তিনি ওই ঘটনার ধারেকাছেও ছিলেন না। তার কোনো অনুসারী ওই কাউন্সিলেও ঢোকেনি। আপাতত এতোটুকুই গণফোরামের বর্তমান। বাকিটা ভবিষ্যত।

বিজ্ঞাপন

গণফোরামও একটি পার্টি, তারও আবার নিজেদের মধ্যে মারামারি -এমন অবস্থার মধ্যে কোনো দলের ভবিষ্যত তালাশ করা কঠিন। সময়ের প্রয়োজনে জন্ম এবং ব্যবহার-অপব্যবহারে নুনের ফ্যাক্টরি বা তেলাপোকার মতো পাখির দশায় এসে ঠেকেছে গণফোরাম নামের দলটি। প্রেসক্লাবে সেদিনের সম্মেলনে সশরীরে ছিলেন না ড. কামাল হোসেন। প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংঘর্ষের ঘটনার পর কাউন্সিলে তাকে পুনরায় গণফোরামের সভাপতি ঘোষণা দেওয়া হয়। ড. কামাল ও মন্টু ছাড়া বাকিরা গণফোরামের কে কোনদিকে, বা এখনও দলটিতে আছেন কি-না? জানা নেই অনেকের।

অথচ কতো আওয়াজে-শোরগোলে, আলিশানে ১৯৯৩ সালের ২৯ আগস্ট ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরামের পথচলা শুরু। গত ২৯ বছরে না কেন্দ্রে, না কোনো বিশেষ অঞ্চলে বিশেষ অবস্থান তৈরি হয়েছে দলটির। মাঝেমধ্যেই ভাঙন, দলত্যাগ, ভিন্ন দল তৈরির মতো ঘটনা লেগেই থাকছে। প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল চেষ্টা করেন সবাইকে এক করার। তা করতে গিয়ে তিনি নিজেও সবার থাকতে না পেরে হয়ে যান কারও না কারও। এখন তিনি মোকাব্বির খান এমপি ও মোস্তাক আহমেদদের। বিপরীত দিকে মোস্তফা মহসীন মন্টু, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীরা। ড. রেজা কিবরিয়া চলে গেছেন উভয়কে ছেড়ে নতুন দলে। তার চলে যাওয়ায় একটা ঝাঁকুনি পড়ে দুই গ্রুপে। দুই গ্রুপকে এক করার তাগিদ দেখা দেয়। দেনদরবার চলে মূল নেতা ড. কামালের বাসায়। ঘোষণা আসে সব ল্যাঠা মিটে গেছে। শিগগিরই কাউন্সিল, আসবে অভিন্ন কমিটি। দিন কয়েকের মধ্যেই আবার বিভক্তি। মন্টু-সুব্রত-সাইয়িদের অংশের বর্ধিত সভা। সেখানে মুরব্বি ড. কামাল হোসেনকেই সভাপতির পদ থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব।

ড. কামাল দেশসেরা আইনবিদ, সংবিধান বিশেষজ্ঞ হলেও কোনো আদর্শিক মোহে জন্ম হয়নি তার দলটির। তাৎক্ষণিক জেদ ও জনাকয়েকের মন-মর্জিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মতো দল থেকে বেরিয়ে নয়া দল করলে যা হয় গণফোরামে তা-ই হয়েছে। সঙ্কটে পড়া, ক্ষমতার স্বাদ ভাগ্যে জোটেনি এমন প্রগতিশীল নেতাদের জন্য ২৯ বছর আগে আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছিল ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম। সিপিবির বড় একটা অংশ, আওয়ামী লীগে গোনায় ধরার মতো নেতাকর্মী, জাসদ-বাসদের কিছু নেতা ড. কামালের পেছনে ভিড়লেও একাট্টা হতে পারেননি। ড. কামালও ইউনিক অভিভাবকত্ব দিয়ে আটকে রাখতে পারেননি ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, আবুল মাল আবদুল মুহিত, শাহজাহান সিরাজ, সাইফুদ্দিন মানিক, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মতিউর রহমান, শেখ আবদুল আজিজ, মোস্তফা মোহসীন মন্টু, ড. রেজা কিবরিয়ার মতো নেতাদের।

বিজ্ঞাপন

তাদের মোহ কাটতে সময় লাগেনি। কারও কারও মূল দল আওয়ামী লীগে ফেরার পথ সংকীর্ণ হয়ে যায়। এরপরও কোনমতে ফিরে গিয়ে কয়েকজন মন্ত্রীত্বসহ ঈর্ষনীয় সাফল্য পেয়েছেন। সবার সেই সুযোগ নেই। আবার বিএনপির সঙ্গে একাকার হয়ে নিরাকারে চলে যাওয়ার অবস্থাও নেই। এর জেরে কখনও ভাঙন, ফের গলাগলি, আবার গালাগালিকে সঙ্গী করেই টিকে থাকা। গণফোরামে চলতি বা সর্বশেষ উথাল-পাতালের বীজ ঐক্যফ্রন্টে। এই ফ্রন্টের ব্যানারে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ড. কামাল। শরীক দল হিসেবে নতুন করে বিশেষ নামডাক ছড়ায় তার গণফোরামের। গায়ে মুজিব কোর্ট, হাতে ধানের শীষ বা সূর্য প্রতীকে এমপি হন সুবিধাবাদী কয়েকজন। তাতে দলগত বা জোটগত কোনো রাজনৈতিক বেনিফিট আসেনি। বরং চূড়ান্ত ক্ষতি নিশ্চিত করেছে। তা প্রকাশ পেতে থাকে নির্বাচনে এই জোটের ভরাডুবি এবং দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নেয়াকে ঘিরে। প্রকাশ্য রূপ নেয় ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর আহ্বান করা একটি বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে। তখনকার কাদা ছোঁড়াছুড়ির বর্তমান রূপ চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ি।

২০১৮ সালের শেষ দিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকেই নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে সুপার পাওয়ার সেজে তৎপর হয়ে ওঠেন গণফোরামের কয়েক নেতা। বাস্তবে নিজ দল বা বিএনপি কোনোদিকেই পজিশন গড়তে পারেননি তারা। উপরন্ত হারাতে হয়েছে ড. রেজা কিবরিয়াকে। কোনঠাসা হতে হতে তিনি গণফোরামই ছেড়ে দেন। এর ‘গণ’ নিয়ে গড়েন নতুন দল গণঅধিকার। সবমিলিয়ে আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে ড. কামাল যে আওয়াজে ফ্যাক্টরি খোলার মতো নতুন দলের বাঁশি ফুঁকেছিলেন আজ তা নিদারুণ চ্যালেঞ্জে। তার সঙ্গ মাড়াচ্ছেন না পরীক্ষিত-বিশ্বস্ত বলে পরিচিত অনেকেও। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে তাকে নিয়ে চরম অ্যালার্জি অনেক দিনের। তারা তাকে বিশ্বাসঘাতক-রাজাকারের কাছাকাছি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নানান কারণে বিএনপিতেও তাকে নিয়ে কেবল অনীহা নয়, বিরক্তিও। বিএনপিকে গত নির্বাচনে এনে পর্যদুস্ত করার পেছনে ড. কামালের এজেন্ডা ছিল- দলটির ভেতরে এমন প্রচারণা রয়েছে। এসবের যোগফলে ঘরে-বাইরে সবদিকে সময় খারাপ যাচ্ছে ড. কামালের।

লেখক: সাংবাদিককলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন