আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ৩ জনকে গ্রেফতারের নির্দেশ
২০ মার্চ ২০২২ ১৬:১৯ | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২২ ১৮:২১
ঢাকা: নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। এ ছাড়া মামলার বাদী সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধেও অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
রোববার (২০ মার্চ) দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জাকির হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন।
গ্রেফতারি পরোয়ানা পাওয়া আসামিরা হলেন ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ ও সেলিম খান ও ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম।
এদিন মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীকে সাক্ষ্য দিতে আদালত থেকে সমন পাঠানো হয়। কিন্তু তারপরও তিনি আদালতে হাজির হননি। এ জন্য আদালত তার বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। আগামী ২৪ মার্চ সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন আদালত।
এদিকে আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বান্টি ইসলাম ও সেলিম খান এ মামলায় জামিনে ছিলেন। এদিন তিন আসামির আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ ছিল। কিন্তু তারা আদালতে হাজির হননি। এ জন্য আদালত তাদের জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
দুই আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী এ মামলায় শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন।
আসামি তারিক সাঈদ মামুনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়নি। হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন এই মামলায় কারাগারে থাকলেও তাকে উপস্থিত করা হয়নি। আসামি আদনান সিদ্দিকী, ফারুক আব্বাসী জামিন রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সাদিয়া আফরিন শিল্পী এসব তথ্য জানান।
জানা যায়, মামলাটি উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে দীর্ঘ দিন ধরে বিচার কাজই বন্ধ ছিল বিচারিক আদালতে। চলতি বছরের গত ২৭ ফেব্রুয়ারি স্থগিতাদেশ শেষে বিচারক আদালতে নথি আসে।
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী ভালোবেসে বিয়ে করে ছিলেন ওই সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পারভিন সুলতানা দিতিকে। বিয়ের কিছু দিন পর তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। ওই সময় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সোহেল চৌধুরী। জড়িয়ে পড়েন নেশার জগতে। একপর্যায়ে নেশা ও জুয়ায় ডুবে থাকতেন তিনি। সেই অন্ধকার জগতের অপরাধীদের সঙ্গে শুরু হয় বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে দ্বন্দ্ব। সেই দ্বন্দ্বের রেশ ধরেই অবসান ঘটে তার জীবনের। বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান নায়ক সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলাটির তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন এজাহার নামীয় আদনান সিদ্দিকী, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, ফারুক আব্বাসী, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। এর দুই বছর পর মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ওই সময় আসামিদের মধ্যে একজন হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেন।
হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এম এ মতিন ও সৈয়দ রিফাত আহমদের বেঞ্চ ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর ওই রিট আবেদনে প্রথমে তিন মাসের জন্য নিম্ন আদালতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। এরপর ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রিটের রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত ছিল।
সারাবাংলা/এআই/একে