বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম নগর আ.লীগের সম্মেলন জুনে

March 22, 2022 | 8:53 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আগামী জুনে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন সাপেক্ষে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২২ মার্চ) সকালে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের পরে মহানগরের অসমাপ্ত ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানায় সম্মেলন শুরু হবে। সেগুলো শেষ করে জুনে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে বলে জানান টিমপ্রধান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।

এদিকে, দুই মাস ধরে ‘আটকে রাখা’ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ১৫টি সাংগঠনিক টিম কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন, সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন নিয়ে অনিয়ম খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় কমিটির গঠিত রিভিউ কমিটি ১৫টি সাংগঠনিক টিম গঠন করেছিল। অভিযোগ আছে, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনাগ্রহের কারণে টিমগুলো দুই মাসেও কাজ শুরু করতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

এদিন বিকেলে সার্কিট হাউজে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং ১৫টি সাংগঠনিক টিমের প্রধানদের নিয়ে বৈঠকে বসে কেন্দ্রীয় নেতারা। কেন্দ্রীয় টিমের প্রধান সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এবং সদস্যদের মধ্যে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর উভয় সভায় ছিলেন।

সার্কিট হাউজে বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘মহানগরে কিছু ইউনিটের সম্মেলন হয়েছে। যেগুলো বাকি আছে সেগুলো ঈদের পরে আমরা শুরু করব। একইসঙ্গে ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন করা হবে। এরপর আমাদের সভানেত্রীর সঙ্গে কথা বলে জুন মাসে আমরা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করতে চাই। সামনে বর্ষা। আগস্টে আমরা কোনো সম্মেলন করি না। সেজন্য আমাদের টার্গেট হচ্ছে জুনের মধ্যে সম্মেলন শেষ করা।’

‘আমরা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ১৫টি সাংগঠনিক থানার জন্য ১৫টি সাংগঠনিক টিম করেছি। তাহলে একদিনে ১৫টি থানা সম্মেলন, একদিনে ১৫টি ওয়ার্ড সম্মেলন কিংবা একদিনে ১৫টি ইউনিট সম্মেলন করতে আমাদের সমস্যা হবে না। সেজন্য আমরা জুনে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করতে পারব বলে আশাবাদী। যদি কোনো দৈব দুর্বিপাক না ঘটে, করোনার সংক্রমণ বা এ জাতীয় অন্য কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা আমাদের কথা দিয়েছেন যে, উনারা সম্মিলিতভাবে কাজ করবেন এবং কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’

বিজ্ঞাপন

১৫টি সাংগঠনিক টিম পূর্ণাঙ্গ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামীকাল (বুধবার) সন্ধ্যায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এবং সহ সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বসে ১৫টি সাংগঠনিক টিমকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেবেন। নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির ৬২ জন সদস্য এখন জীবিত আছেন। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বাদ দেওয়া হলে বাকি ৬০ জনের মধ্যে চারজন করে আমরা ১৫টি সাংগঠনিক টিমে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে নানা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বপন বলেন, ‘১৫টি সাংগঠনিক টিম সংশ্লিষ্ট থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অথবা আহবায়ক-যুগ্ম আহবায়ককে নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ, ব্যত্যয়ের অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন। তারা আলোচনার মাধ্যমে সেটা সমাধানের চেষ্টা করবেন। যদি তারা সমাধান করতে না পারেন, তাহলে সুপারিশমালা প্রণয়ন করে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমের কাছে প্রেরণ করবেন। আমরা এগুলো নিয়ে আবার মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বসব এবং সমাধান করব।’

ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য একমাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।

তিনি আরও বলেন, ‘সাংগঠনিক টিম ইউনিট কাউন্সিল সম্পর্কে অনিয়মের অভিযোগ যেমন খতিয়ে দেখবে, তেমনি সদস্য সংগ্রহ, নবায়ন কার্যক্রমও তদারক করবে। নগর কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে ঢাকা থেকে ফরম এনে সেগুলো বিতরণ করবেন। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার, নতুন প্রজন্মের ভালো মানুষ, যাদের বিরুদ্ধে কোনো অন্যায়, ভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিলে নাশকতা বা অপরাধের কোনো অভিযোগ নেই, গ্রহণযোগ্য সবাইকে আমরা আওয়ামী লীগের সদস্য করতে চাই। কোনো আবর্জনা যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেটা এই টিম দেখবে। আমরা আশা করি, তারা চট্টগ্রামে কোনো খারাপ মানুষ কিংবা অনুপ্রবেশকারীকে আওয়ামী লীগে স্থান দেবেন না এবং ভালো মানুষদের দিয়ে আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’

বিজ্ঞাপন

১৫ সাংগঠনিক টিমের প্রধান হিসেবে যারা দায়িত্ব পেয়েছেন- কোতোয়ালি থানায় সহ-সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ, বন্দর থানায় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক জহুর আহমেদ, পাহাড়তলী থানায় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, ডবলমুরিং থানায় সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী, হালিশহর থানায় সহ-সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, খুলশী থানায় যুগ্ম সম্পাদক বদিউল আলম, পাঁচলাইশ থানায় কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী, বায়েজিদ বোস্তামি থানায় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, সদরঘাট থানায় বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, চকবাজার থানায় সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, ইপিজেড থানায় অর্থ সম্পাদক আবদুচ ছালাম, আকবর শাহ্ থানায় সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, পতেঙ্গা থানায় সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ হাসনী, চান্দগাঁও থানায় সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এবং বাকলিয়া থানায় সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী।

গত বছরের নভেম্বরে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ইউনিট সম্মেলন শুরু হয়। এতে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের অনুসারীদের প্রাধান্যের অভিযোগ তোলেন তার বিরোধী নেতারা। ওই সম্মেলনকে অনিয়মে ভরা একতরফা উল্লেখ করে কয়েকটি ইউনিটে গোলযোগ এবং পাল্টাপাল্টি সম্মেলন হয়। এর মধ্যে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন নিয়েও অভিযোগ উঠতে থাকে। বিষয়টি কেন্দ্র পর্যন্ত গড়ায়। একপর্যায়ে গত ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় নেতারা বসে ছয় সদস্যের একটি রিভিউ কমিটি গঠন করে দেন।

রিভিউ কমিটির সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং সহ সভাপতি নঈমউদ্দিন চৌধুরী ২৭ জানুয়ারি বৈঠকে বসে ১৫ সাংগঠনিক টিমের প্রধানের নাম চূড়ান্ত করেন। কিন্তু এরপর থেকে রিভিউ কমিটি আর বৈঠকে বসতে পারেনি। সাংগঠনিক টিমগুলোও পূর্ণাঙ্গ হয়নি এবং কাজ শুরু করতে পারেনি। টিম প্রধানদের নাম নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঢাকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত থাকলেও গত দুইমাসেও সেগুলো কেন্দ্রে পাঠানো হয়নি বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (২২ মার্চ) অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় নগর আওয়ামী লীগের কাযনির্বাহী কমিটির সব সদস্য এবং ১৫টি থানার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক-যুগ্ম আহ্বায়করা উপস্থিত ছিলেন।

উপস্থিত নেতাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভায় নগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক পরিকল্পিতভাবে নগর কমিটিতে দ্বন্দ্ব তৈরির অভিযোগ এনে বলেন, ‘আমি বিএমএর চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক। ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। জেল-জুলুম সহ্য করেছি। আজ নানাভাবে আমাকে অপমান অপদস্থ করা হচ্ছে। নগর আওয়ামী লীগে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। দ্বন্দ্ব উপর থেকে তৈরি করা হচ্ছে।’

সভায় বিভিন্ন থানা কমিটির কয়েকজন নেতা ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং সাংগঠনিক কোনো সমস্যা নেই দাবি করে বক্তব্য দেন। সাংগঠনিক সমস্যা নিয়ে কেউ প্রথমে খোলাখুলি কোনো কথা বলেননি।

সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী সভা শেষ করতে চাইলে তাকে অনুরোধ করে বক্তব্য রাখতে ওঠেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, সাংগঠনিক সমস্যা নেই, সংগঠন ভালোভাবে চলছে। সংগঠনের যদি দূরবস্থা না থাকত, তাহলে আমাদের তো কেন্দ্রীয় নেতাদের এনে বর্ধিত সভা করতে হতো না। তৃণমূলের সম্মেলন নিয়ে অনিয়ম হয়েছে। সদস্য সংগ্রহ নিয়ে সমস্যা হয়েছে। সদস্য সংগ্রহ বাড়ানো প্রয়োজন। সংগঠনের দুর্বলতা চিহ্নিত করে নিরসন করা দরকার।’

এক পর্যায়ে জবাব দিতে উঠে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে কোনো অনিয়ম হয়নি। খুঁজে খুঁজে অনিয়মের অভিযোগ আনা হচ্ছে। সদস্য সংগ্রহের জন্য কেন্দ্র থেকে যেসব ফরম দেওয়া হয়েছে সেগুলো প্রত্যেক ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। সদস্য সংগ্রহ নিয়েও কোনো সমস্যা নেই।’

সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বক্তব্য দিতে চাইলে সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ১৫টি সাংগঠনিক টিমের সঙ্গে আলাদা বসবেন জানিয়ে সভা শেষ করে দেন। পরে সার্কিট হাউজে সভায় বসে।

এদিকে দুপুরে টিআইসি মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমসহ উপস্থিত সবার জন্য ভাতের আয়োজন করা হয়। কিন্তু নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের অধিকাংশই বিভিন্ন অজুহাতে ভাত না খেয়ে চলে যান। জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের একজন নেতা সবসময় বলেন যে, উনার টাকায় নাকি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ চলছে। উনি সবসময় প্রকাশ্য সভায় এ কথা গত ২-৩ বছর ধরে বলে আসছেন। এতে সিনিয়র নেতারা অপমান বোধ করে ভাত না খেয়ে বেরিয়ে যান। উনাদের দাবি, সংগঠন সংগঠনের নিয়মে চলুক। একজন নেতার পকেটের টাকায় কেন সংগঠন চলবে। সিনিয়রদের দেখে আমরাও আর ভাতের টেবিলে বসিনি।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন