বিজ্ঞাপন

ডা. বুলবুলের হত্যাকারীরা পেশাদার ছিনতাইকারী

March 30, 2022 | 6:14 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: গরিবের চিকিৎসকখ্যাত ডা. বুলবুলের হত্যাকারীরা সবাই পেশাদার ছিনতাইকারী ছিলেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আকতার।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, বুধবার (৩০ মার্চ) ভোরে মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যেহেতু মামলাটি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে তাই গ্রেফতারের পর বেশি সময় না নিয়েই সংবাদ সম্মেলন করা হলো। গ্রেফতাকৃতরা স্বীকার করেছে যে, তারা সবাই ওই এলাকার পেশাদার ছিনতাইকারী।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- রায়হান সোহেল ওরফে আপন (২৭), রাসেল হোসেন হাওলাদার(২৫), আরিয়ান খান হৃদয় (২৩) ও সোলায়মান (২৩)।

বুধবার বিকেল সোয়া ৩ টার দিকে ডিএমপির গণমাধ্যম সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার ডিবি প্রধান একেএম হাফিজ আকতার এসব তথ্য জানান।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘ডা. বুলবুল চিকিৎসার পাশাপাশি ঠিকাদারি ব্যবসাও করতেন। ১৫ দিন আগে সরকারি কাজের টেন্ডার পান। গত ২৭ মার্চ ভোরে নোয়াখালী যাওয়ার জন্য ভোর পাঁচ টার দিকে বের হন। রিকশাযোগে কাজীপাড়া বেগম রোকেয়া স্মরণীতে নাভানা শোরুমের সামনে পৌঁছালে কয়কেজন তার রিকশার গতিরোধ করে আটকে দেয়। এরপর বুলবুলের কাছে থাকা স্মার্ট মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে চাইলে বুলবুল বাধা দেন। এ সময় ধ্বস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে সুইচ গিয়ার চাকু বের করে বুলবুলের ডান উড়ুতে আঘাত করে। এতে রক্ত বের হতে থাকে। তখন তারা ফোনটি নিয়েই পালিয়ে যায়।’

তিনি জানান, এরপর বিহঙ্গ গাড়ির এক হেলপার ভোর পৌনে ছয়টার দিকে সড়কে পড়ে থাকা বুলবুলকে উদ্ধার করে আল হেলাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পুলিশ কেস বলে চিকিৎসা না দেওয়ায় তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. বুলবুলকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ডিবি পুলিশ মামলার ভিত্তিতে তদন্তে নামে।

তদন্তের এক পর্যায়ে বুধবার (৩০ মার্চ) ভোরে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাকৃতরা জানায়, ঘটনার দিন তারা সেখানে পাঁচ জন ভোর চারটা থেকে ওঁত পেতে ছিল। এর মধ্যে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি এক জনকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান হাফিজ আকতার।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘তারা জানিয়েছে, এই ছিনতাইকারী দলের নেতা হলেন রায়হান সোহেল। সোহেল গত বছর অন্য একটি ছিনতাই মামলায় ডিবির হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। কয়েকদিন আগে সে জামিনে বের হয়েছে। আর রাসেল হোসেন হাওলাদারও অন্য আরেকটি মামলায় গত ১২ মার্চ জামিনে জেল থেকে বের হন। তারা সবাই পেশাদার ছিনতাইকারী।’

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, ‘যেহেতু ডা. বুলবুল চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি ঠিকাদারির কাজও করতেন, সেহেতু শুরু থেকেই আমরা দু’টি বিষয় নিয়ে তদন্ত শুরু করি। কিন্তু দেখা গেল, পেশাদার ছিনতাইকারী দলের হাতে নির্মমভাবে প্রাণ হারাতে হলো তাকে।’

ছুরিকাঘাত করা হলো, পকেটের টাকা নিল না, শুধু ফোনটা নিয়ে গেল- এটাকে কেন আপনারা নিছক ছিনতাই ঘটনা বলে দাবি করছেন? জানতে চাইলে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘আমরা আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতেই বলছি যে, ঘটনাটি ছিল ছিনতাইয়ের। তাছাড়া ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত সুইচ গিয়ার চাকু ও ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোনও উদ্ধার করা হয়েছে। এর বাইরে কিছু আছে কি না তা তদন্ত করা হবে। আসামিদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অন্য কোনো ঘটনা থাকলেও বের করা হবে।’

চিকিৎসক বুলবুলের সঙ্গে নোয়াখালী যাওয়ার কথা ছিল রংমিস্ত্রি সোহরাবের। সোহরাবকে ঘটনার দিন ভোরে বুলবুল ফোন করে ফার্মগেট যেতে বলেন। সেখান থেকে দুজন একসঙ্গে নোয়াখালী যেতে চেয়েছিল। পরিবারের দাবি, চিকিৎসক বুলুলের পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বাসা থেকে বের হলে মেট্রোরেলের ৩০৫ নম্বর পিলার, সেখান থেকে ফার্মগেটের দিকে যাওয়ার কথা। বুলবুল আহত অবস্থায় উল্টো দিকে পশ্চিম কাজীপাড়া ২৭৮ নম্বর পিলারের কাছে পড়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

সেখানে বুলবুল কীভাবে গেলেন? কোনো সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখেছেন কি না? জানতে চাইলে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তদন্তের একেবারে শুরুর দিকে রয়েছি। সবার আগে আসামি গ্রেফতার করেছি। এখনও পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। আমরা সবকিছুই তদন্তের আওতায় নিয়ে আসব।’

অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ কেসের কারণে আল হেলাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা. বুলবুলকে কোনো চিকিৎসা দেননি। ফেলে রেখেছিলেন। অথচ তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলে তিনি বেঁচেও যেতে পারতেন। আল হেলাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আপনারা তদন্তের আওতায় আনবেন কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমরা হাসতালের বিষয়টিও তদন্তে আনব। আমরা জিজ্ঞেস করব, তারা কেন এরকম করেছিল।’

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন