বিজ্ঞাপন

স্বস্তির খোঁজে দূর দ্বীপ তাড়ুয়ায়

March 31, 2022 | 10:41 pm

মেহেরাজ জেবিন ইফতি

জনবসতিহীন অথচ নিনাদ মুক্ত নয়। হ্যাঁ, চারদিকে তাকালে জনবসতি চোখে পড়বে না ঠিকই তবে প্রকৃতি তো শূন্যস্থান পছন্দ করে না। প্রকৃতি আপন সৌন্দর্য মহিমায় মহিমান্বিত করে সাজিয়েছে ধূ ধূ প্রান্তর দ্বীপ ঢালচর এবং সমুদ্র সৈকত তাড়ুয়া। এটা এমনই এক জায়গা যেখানে গেলে একদিকে কক্সবাজার বা কুয়াকাটার স্বাদও মিলবে অন্যদিকে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলও আস্বাদন করা যাবে। আবার রাতের গভীতা বাড়লে অনুভব হবে শিহরণ জাগানো রোমাঞ্চকর ভৌতিক অনুভূতি।

বিজ্ঞাপন

ভোলার জেলা সদর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় প্রায় দেড়শত বছর আগে মাথাচাড়া দিয়ে জেগে উঠেছিল বিচ্ছিন্ন এই ঢালচর দ্বীপটি। তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকতটিই হলো এখানকার প্রধান আকর্ষণ। তাছাড়া ঢালচরের ৩১.৩১ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ২৮.২০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে সুবিশাল বনাঞ্চল রয়েছে। এর মধ্যে তাড়ুয়ার বন অন্যতম। এই তাড়ুয়া বনে রয়েছে গেওয়া, গড়ান, কেওড়া, বাইন, রেইনট্রিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ। আরো আছে হরিণ, শেয়াল, কুকুর, বনবিড়াল ইত্যাদিসহ বিভিন্ন ধরণের পশু পাখি। শীত মৌসুমে এখানে দেখা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির। এসব পাখির সারিবদ্ধ হয়ে উড়ে যাওয়া চোখে পড়লে চোখ ফেরানো মুশকিল।

শহুরে কোলাহল, কাজের চাপ, জীবনের যান্ত্রিকতায় থেকে থেকে যখন মানুষ বড্ড ক্লান্ত হয়ে যায় তখনই হুটহাট বেরিয়ে পড়তে হয় নিজের জন্য সময় কাটাতে। এক্ষেত্রে সকল ধরণের যান্ত্রিকতা মুক্ত পরিবেশে দুটো দিন কাটিয়ে প্রকৃতির বুকে মিলিয়ে গিয়ে বুক ভরে নিশ্বাস ফুঁকে নিজেকে রিচার্জ করে নেওয়ার জন্য তাড়ুয়ার জুড়ি মেলা ভার। এখানে না আছে কোনো বিলাসবহুলতা,না আছে যান্ত্রিক বাড়াবাড়ি। চারদিকে যতদূর চোখ যায় শুধুই শূন্যতা। ভোরের শুরুতে উঁকি দেয়া সূর্য কর্মমূখর দিনকে আহŸান করে আর গোধূলির সূর্য প্রস্থান রাতের ভয় ভয় শিহরণকে অভ্যার্থনা জানায়।

বিজ্ঞাপন


প্রাতঃকালে শীতার্ত ঝিরিঝিরি বাতাসে সমুদ্রের পাশে হাটতে হাটতে উপভোগ করা যায় হরেক রকমের পাখিদের আপন মনে সমুদ্রস্নান। অনেককে দেখা যায় তাবু খাটিয়ে ক্যাম্পিং করে সমুদ্রের পাশেই রোমাঞ্চকর দিন রাত কাটাচ্ছে। পরিবেশটাই এমন যে সোনা রোদে চিকচিক করা সমুদ্রের পানিও তখন স্বর্গীয় আনন্দ দেয়। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু রূপ, রূপ এবং কেবলই রূপ। এখানে তুচ্ছ কীটকীটাণুও যেন অদ্ভুত সৌন্দর্য নিয়ে আবির্ভাব হয়।

বেলা বাড়ার সাথে সাথে দূর দূরান্তে সমুদ্র বুকে চোখে পড়ে জেলের দুই একটা নৌকা যাউথাল পাথাল ঢেউয়ে দুলতে দুলতে উল্টে পড়ার মতো অবস্থা। একবার যদি ঢেউ উপেক্ষা করে সাহস জুগিয়ে সমুদ্রের বুক হাজির হওয়া যায় তখনই মনে হবে, আহা! বেঁচে থাকতে আর কি লাগে! পৃথিবী এত সুন্দর কেন! মনকে তৃপ্ত করা, চোখ জুড়ানো শান্তি পাবার জন্য হলেও এটুকু ঝুঁকি নেওয়াই যায়। সত্যি বলতে নিজে না অনুভব করলে এ অনুভূতি কাউকে বলে বা লিখে বোঝানো প্রায় অসম্ভব।


এরপর আসা যাক গোধূলির রূপ নিয়ে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে রক্তিম সূর্য ধীরে ধীরে সমুদ্রে নুইয়ে পড়া,পাখির দলে দলে ঘরে ফেরা, শো শো শব্দে উথাল পাথল আছড়ে পড়া ঢেউ, চিকচিক করা বালু আর লাল কাঁকড়া সবমিলিয়ে বাকরদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকার মতো অবস্থা তৈরি হয়।

বিজ্ঞাপন

সময়ের সাথে সাথে বেলা পড়ে যায়। ধীরে ধীরে রাত নামে দ্বীপের বুকে। ছোট্ট টিনের রেস্ট হাউজে সৌর বিদ্যুতের টিমটিমে আলোকে হার মানায় চান্নি-পসর রাতের উথলে পড়া জোছনা। রাত বাড়ার সাথে সাথে মৃদুমন্দ বাতাস রূপ নেয় ঝড়ো বাতাসে। ধুলি বাতাস বাড়ে তাই বাড়ে শীতের তীব্রতাও। তবু কাঁপতে কাঁপতেও শুধু জোছনা মেখে হাঁটতেই ইচ্ছে হয়।


চারদিকে সমুদ্রের শো শো গর্জন, মৃদুমন্দ হাওয়া, সমুদ্র লাগোয়া ম্যানগ্রোভের পশু পাখির আশ্চর্য জাদুকরী ডাক, জনশূন্যতা, শীতের তীব্রতা, কুকুর, শেয়ালের ছোটাছুটি সব মিলিয়ে খানিকটা হলেও ভৌতিক অনুভূতির শিহরণ দেয়। তবুও ঘরে ফেরার তাড়া নেই। শুধুই হাঁটতে এবং অনুভব করতে ইচ্ছে হয়। হয়তো প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের ভালোবাসার বন্ধনে আটকে রাখার মতো বহু জাদু জানা আছে এই দ্বীপের। একটা গানই শুধু মাথায় ঘুরপাক খায়, “আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে! ”

বরিশাল বিভাগের এমন এক সম্পদ আছে যা অনেকেই এখনো অবগত নয়। তাদের বলছি, ‘চলোনা ঘুরে আসি অজানাতে, যেখানে নদী এসে থেমে গেছে” এই গানটা মাথায় রেখে বেড়িয়ে পড়তে পারেন। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে দিতে মনে হতে পারে, ঠকে যাচ্ছি না তো! তবে নিশ্চিত করে বলতে পারি একবার পৌঁছাতে পারলে বুঝতে পারবেন এর জন্য অবলীলায় দুর্গম পথ অতিক্রম করাই যায়। যদিও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ততটা উন্নত নয় তবে সে কারণেই আসল প্রশান্তি। কারণ প্রকৃতির মাঝে বিলাসবহুলতা আসলে পুরোপুরি প্রকৃতি অনুভব করা যায় না। জীবন ধারণের জন্য যতটা প্রয়োজন ততটুকুর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। আবার যারা বেশি রোমাঞ্চ পছন্দ করে তারা তাবু নিয়ে সমুদ্রের পাশে থেকে আরো বেশি উপভোগ করতে পারবেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এজেডএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন