বিজ্ঞাপন

উদ্ভাবনী মেধাশক্তিতে জনসেবা করবেন, কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী

April 3, 2022 | 2:51 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: একটি প্রশিক্ষিত দক্ষ সিভিল সার্ভিস সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অন্যতম সহায়ক শক্তি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা যা প্রতিশ্রুতি দেই সেটি বাস্তবায়নের দায়িত্বটা কিন্তু আমাদের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। আপনাদের জ্ঞান মেধা এবং উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এবং জনগণের সেবা করবেন।’

বিজ্ঞাপন

রোববার (৩ এপ্রিল) সকালে ১২১, ১২২, ১২৩ তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহের সমাপণী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গনভবন থেকে ভার্চুয়ালি শাহবাগ বিসিএস প্রশাসন একাডেমী প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।

মাঠ প্রশাসনের প্রশিক্ষণার্থী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা নেবেন। কারণ আমরা চাই এদেশ এগিয়ে যাক।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ তারা যেন কখনো সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। কারণ তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই তো আমাদের স্বাধীনতা। যখনি যে যেখানে দায়িত্ব পালন করবেন অবশ্যই মানুষের কথা চিন্তা করবেন। যে এলাকায় কাজ করবেন সেই এলাকা সম্পর্কে জানতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

সেখানকার মানুষের আচার-আচরণ, জীবন-জীবিকা সম্পর্কে জানতে হবে এবং কীভাবে তাদের উন্নতি করা যায় সে বিষয়ে আপনাদেরও সব থেকে ভালো সুযোগ রয়েছে বলেও অবহিত করেন তিনি।

মাঠ প্রশাসনের কাজগুলো যাতে সুপরিকল্পিতভাবে হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে সবাইকে কাজ সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

জনগণের সার্বিক উন্নয়নটাই আমাদের লক্ষ্য জানিয়ে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭৫’র পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তাদের কাছে ক্ষমতাটা ছিল ভোগের বস্তু। তারা সেটি দিয়ে নিজের ভাগ্য গড়তে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শুধু প্রধানমন্ত্রী না। আমার দায়িত্ব হচ্ছে এদেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো সুনিশ্চিত করা। তাদের জীবনমান উন্নত করা।’

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতার সুফল দেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছে দিয়ে উন্নয়ন তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত করাই তার সরকারের লক্ষ্য বলে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ বিষয়ে করোনাভাইরাসের সময় দেশের তৃণমূলের সকলস্তরের মানুষ যেন ভালো থাকে সে লক্ষ্যে সরকারের ব্যাপক কর্মসূচি প্রণয়ন, প্রণোদনা দিয়েছিসহ বিনা পয়সার ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেনে এবং তার সকারের কাজ সবসময় মানুষকে ঘিরে বলে অবহিত করেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭৫ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় এই গরিব কৃষক, আপনার মাইনে দেয় ওই গরিব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ওই টাকায়। আমি গাড়ি চলি ওই টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন ইজ্জত করে কথা বলুন। ওরাই মালিক।’

কাজেই সংবিধানে তিনি শুধু সেটি বলেননি। সেটি তিনি অন্তর থেকে বিশ্বাস করতেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। একই জনসভায় তিনি (বঙ্গবন্ধু) আরও উল্লেখ করেন, জনগণের পেটে খাবার নেই। তাদের উপর ট্যাক্স বসিয়ে আমি আপনাদের পুষতে পারব না। প্রডাকশন বাড়লে আপনাদেরও উন্নত হবে।

বিজ্ঞাপন

‘অর্থ্যাৎ আমরা যদি উৎপাদন বাড়াতে পারি। আমরা যদি দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করতে পারি। তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবে সবার বেতন ভাতা সুযোগ সুবিধা অনেক কিছু বাড়ানো যায়। যেমন ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কারণ ৯৬ সালে যেটুকু করেছিলাম তার সবি ধ্বংস করা হয়েছিল। তার কারণ ৯৬ সালে আমি যখন সরকার গঠন করি তখন ৪০লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতির দেশ ছিল বাংলাদেশ। আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে সেই বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। ২০০১ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করে আসি। তখন আমাদের খাদ্য আমি ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ রেখে আসি।’

১৯৯৬ সালে তার সরকারের মেয়াদে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়। কারণ তার কথা ছিল এটা যদি চালু থাকে। তাহলে বাংলাদেশের মানুষ নাকি শুধু মাত্র নৌকায় ভোট দেবে। আর কাউকে ভোট দেবে না।’

‘মানুষের কল্যাণটা বড় না। ক্ষমতায় টিকে থাকাটা বড়; আমি এই নীতিতে বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি মানুষের কল্যাণ কিভাবে করব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করব’ বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তার সরকারের মেয়াদে বেতনভাতা বৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামনের দিকে আমরা আরও যত শক্তিশালি হবে। ততো আমরা এগিয়ে যেতে পারব। আরও সুবিধা আমরা দিতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা অল্প সংখ্যক ভাগ্যবান ব্যক্তি আজকে দেশ সেবার সুযোগ পাচ্ছেন, কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন এবং আপনারা বিভিন্নভাবে মানুষের সেবা করার একটা সুযোগ পেয়েছেন। তাই আপনাদেরও চিন্তাচেতনা সেই জনকল্যাণমূলই হতে হবে।’

‘আমরা জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে জনপ্রশাসন পদক প্রবর্তন করেছি। বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক প্রদানের ব্যবস্থা নিয়েছি। দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছি। যেটা জাতির পিতার চালু করেছিলেন। কিন্তু মিলিটারি ডিটেকটরা এসে সেটাও বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা আবার সেটার ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ইনস্টিটিউট থেকে আপনাদের সকলের প্রশিক্ষণ নিতে সুযোগ পাচ্ছে সেই ব্যবস্থাও আমরা করে দিয়েছি।’

গ্রামের প্রতিটি মানুষকে নাগরিক সুবিধা দিতে চাই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। রাস্তাঘাট তৈরি করে দিচ্ছি। কর্মসংস্থানের জন্য ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। আপনারা যে যেখানে কাজ করবেন সেই এলাকাভিত্তিক কোন কোন জিনিসগুলো উৎপাদন হয়, সেগুলি কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেগুলি প্রক্রিয়াজাত করা যায় এবং আমাদের অর্থনীতির কাজে ব্যবহার করা যায়, এ বিষয়গুলো দেখতে হবে এবং সেভাবেই আপনাদের পরিকল্পনা নিতে হবে কাজ করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা প্রশিক্ষিত দক্ষ সিভিল সার্ভিস সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অন্যতম সহায়ক শক্তি বলে আমি মনে করি। আমরা যা প্রতিশ্রুতি দেই সেটা বাস্তবায়নের দায়িত্বটা কিন্তু আমাদের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ‘

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, আধুনিক যুগের ছেলেমেয়েদের মেধা, শক্তি, জ্ঞান এবং উদ্ভাবনী শক্তি আরও বেশি স্বচ্চ এবং শক্তিশালি। কাজেই আপনাদের জ্ঞান মেধা এবং উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে এই দেশকে আপনারা এগিয়ে নিয়ে যাবেন এবং জনগণের সেবা করবেন, সেটাই আমরা চাই।’

কক্সবাজারে বড় জায়গা নিয়ে সুন্দর বিসিএস প্রশিক্ষণ একাডেমি করে দেওয়া হবে যাতে সেখানে সবাই আন্তরিকভাবে সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিতে পারবে এবং সেটার কাজ খুব তাড়াতাড়ি শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারার আপসোস করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সময় আমাকে গ্রেফতার হতে হয়েছে। বিশেষ জেলে থাকতে হয়েছে। সেগুলি ছিল সাবজেল। ছোট কারাগার। আর এখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে বড় কারাগারে আছি। সেই জন্য সবসময় আমার যাতায়াতটা এতো সীমিত এতো সীমাবদ্ধতা। কাজেই সরাসরি আপনাদের কাছে আসতে পারলাম না, নিজের হাতে সনদ দিতে পারলাম না।’

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী প্রশিক্ষর্ণাথীদের হাতে সনদ, ক্রেস্ট ও মেডেল তুলে দেন।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান, জনপ্রশাসন সচিব আলী আজম, বিসিএস প্রশাসন একাডেমীর মোমিনুর রশিদ আমিন।

সারাবাংলা/এনআর/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন