বিজ্ঞাপন

পানি না পেয়ে ২ কৃষকের আত্মহত্যা: অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে কমিটি

April 4, 2022 | 8:15 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: গোদাগাড়ী উপজেলায় গভীর নলকূপে সেচের পানি না পেয়ে দুই সাঁওতাল কৃষক আত্মহত্যা করেছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তার সত্যতা পেয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) আলাদা তদন্তেও সেখানে অনিয়মের বিষয়টি উঠে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৩ মার্চ) বিকেলে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলামের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান মো. আবু জুবাইর হোসেন বাবলু। এই তদন্ত প্রতিবেদনে বিএমডিএ’র ঈশ্বরীপুর-২ গভীর নলকূপের সেচ ব্যবস্থাপনায় নানা অনিয়ম উঠে এসেছে।

পানি দিতে অপারেটরের স্বজনপ্রীতি, দুর্ব্যবহার এবং অতিরিক্ত টাকা আদায়েরও অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তদন্তে। তবে ওই দুই কৃষকের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে কোনো মন্তব্য দেয়নি।

তদন্ত কমিটির প্রধান কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং) মো. আবু জুবাইর হোসেন বাবলু এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে দিয়েছি। ওখানে আমরা বেশকিছু অনিয়ম পেয়েছি। পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো রেজিস্ট্রার মানা করা হয় না। তদারকির অভাব ছিল। আমরা এগুলোই প্রতিবেদনে লিখে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশসহ সচিব স্যারকে দিয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

তবে দুই কৃষক কেন বিষপান করলেন সে বিষয়ে প্রতিবেদনে লেখা হয়নি বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান। তিনি বলেন, ‘এটা তো পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ছাড়া বলা যায় না। আমরা বলতে পারি না। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। তবে দুই জনের পরিবার যে অভিযোগ করছে সেটা আমাদের প্রতিবেদনে আছে। পাশাপাশি এলাকার অন্য কৃষকদেরও বক্তব্য আছে।’

গত ২৩ মার্চ গোদাগাড়ীর নিমঘুটু গ্রামের সাঁওতাল কৃষক অভিনাথ মারান্ডি (৩৭) ও তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি (২৭) বিষপান করেন। এতে অভিনাথ সেদিনই মারা যান। রবি মারা যান ২৫ মার্চ। পরিবারের দাবি, নলকূপের অপারেটর ও ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি সাখাওয়াত এ দুই কৃষককে বোরো ধানের জমিতে পানি না দিয়ে বিষ খেতে বলেছিলেন। তাই তারা দু’জনে গভীর নলকূপের সামনেই বিষপান করেন। দুই কৃষক বিষপানের পর রাতে তাদের জমিতে পানি দিয়েছিলেন সাখাওয়াত।

বিজ্ঞাপন

মৃত্যুর পরদিন বাড়ি থেকে অভিনাথের মরদেহ উদ্ধারের সময় পরিবারের পক্ষ থেকে সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে পানি না দিয়ে হয়রানির অভিযোগ করা হয়। তারপরেও পুলিশ সাদা কাগজে কৃষক অভিনাথের স্ত্রী রোজিনা হেমব্রমের সই নিয়ে অপমৃত্যুর মামলা করে। পরের দিন অভিনাথের স্ত্রী গোদাগাড়ী থানায় গিয়ে সাখাওয়াতকে একমাত্র আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেন। পরে হাসপাতালে রবি মারা গেলে তার ভাই সুশীল মারান্ডি বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন।

সেচের পানি না পেয়ে ২ কৃষকের আত্মহত্যা: মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি

এরপর ২ এপ্রিল দিবাগত রাতে পুলিশ সাখাওয়াতকে গ্রেফতার করে। পরদিন ৩ এপ্রিল বিএমডিএ সাখাওয়াতকে চাকরিচ্যুত করে। এদিন সাখাওয়াতকে আদালতে হাজির করে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। আদালত সাখাওয়াতকে কারাগারে পাঠালেও সেদিন রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়নি।

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার রিমান্ড আবেদনের শুনানি হতে পারে।

সারাবাংলা ডটনেটে ‘জমিতে পানি দেয়নি পাম্প অপারেটর, ক্ষোভে কৃষকের আত্মহত্যা’ শিরোনামের সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ মার্চ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তাসনিম জেবিন বিনতে শেখ চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দেন। ২৯ মার্চ কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে তদন্ত করে যান।

বিজ্ঞাপন

মৃত দুই কৃষকের পরিবার ছাড়াও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অন্য কৃষকেরা তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ করেন যে জমিতে পানি না পাওয়ার কারণে অভিনাথ ও রবি বিষপান করেন। অপারেটর সাখাওয়াত পানি দিতে স্বজনপ্রীতি করতেন। সাঁওতাল কৃষকদের ঘোরাতেন। তবে সাখাওয়াতের অনুসারি কিছু কৃষক বলেছিলেন পানি নিয়ে কোন সমস্যা নেই।

এদিকে ঘটনা তদন্তে বিএমডিএও আলাদা একটি তদন্ত কমিটি করেছিল। সেই প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতেই রোববার গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াতকে স্থায়ী বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘তদন্তে কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে।’

কী অনিয়ম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১২৫ টাকা ঘণ্টার পানিতে ১৩৫ টাকা নিতেন অপারেটর। এখন বিএমডিএ চেয়ারম্যান নেই। তিনি আসার পর বিস্তারিত জানানো হবে।’

আরও পড়ুন:
সেচের পানি দেওয়াতে গাফিলতি হলে কঠোর ব্যবস্থা: কৃষিসচিব

জমিতে পানি না দেওয়ায় বিষপান করা আরেক কৃষকেরও মৃত্যু

সারাবাংলা/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন