বিজ্ঞাপন

জলাবদ্ধতা কিছুটা কমবে— আশা রেজাউল-দোভাষের

April 6, 2022 | 9:45 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সামনের বর্ষায় নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে না পারলেও এর তীব্রতা ‘কিছুটা কমবে’ বলে আশাবাদের কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ। তবে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় সংস্কার হওয়া খাল-নালা রক্ষণাবেক্ষণে ১০০ কোটি টাকা দাবি করেছে সিটি করপোরেশন। অন্যথায় সিটি করপোরেশনের পক্ষে এই বোঝা ঘাড়ে নেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন মেয়র।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে নগরীর টাইগার পাসে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে সামনের বর্ষায় জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ লাঘব নিয়ে সমন্বয় সভায় বসেছিল সিটি করপোরেশন ও সিডিএ। এতে উপস্থিত ছিলেন জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ’র নেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের কর্মকর্তারাও।

চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৭ সালে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি হাতে নেয় সিডিএ। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। এরই মধ্যে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে ৯ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সভায় প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ মো. আলী জানিয়েছেন, সাতটি খালের সংস্কার কাজ এরই মধ্যে শেষ করা হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে ১৮টি খালের সংস্কার কাজ শেষ হবে। খালে সহজে পানি পৌঁছানোর জন্য ৫০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। খালের পাড়ে ১৭৮ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের পুরোপুরি সুফল পেতে আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে তিনি জানান।

বিজ্ঞাপন

সভায় সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘বর্ষা এলে চট্টগ্রামের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। খালে প্রতিরোধ দেওয়াল নির্মাণের জন্য দেওয়া বাঁধগুলো বর্ষার আগে অপসারণ করতে হবে। খালের মাটি উত্তোলন করতে হবে। পানি উঠবে। কিন্তু পানি যেন দ্রুত নিষ্কাশন হয়, এ জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। যেখানে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই, সেখানে বর্ষা মৌসুমের আগে পানি চলাচলের জায়গা করে দিতে হবে। সিটি করপোরেশনের অধীনে খাল-নালাগুলো মাটি উত্তোলনের কাজ চলছে। বর্ষার আগে শেষ করা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় খাল-নালাগুলোর সব প্রতিবন্ধকতা যেন বর্ষার আগে অপসারণ করা হয়। মানুষকে যেন দীর্ঘ মেয়াদে কষ্ট ভোগ করতে না হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’

নিজ নিজ সংস্থার অধীনে থাকা খাল-নালাগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে বর্ষার আগে নিরাপত্তা বেষ্টনি দেওয়ার ওপরও জোর দেন তিনি।

সিটি মেয়র বলেন, ‘নালায়-খালে মানুষ পড়েছে। মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগে যার যার অধীনে যে নালা খালগুলো আছে, সেগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে নিরাপত্তা বেষ্টনির ব্যবস্থা করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

সভায় সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘জলাবদ্ধতা থেকে যেন মানুষ রক্ষা পায়, সমন্বয়ের মাধ্যমে সে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ পুরো শেষ হলে জলাবদ্ধতা কমে আসবে। প্রকল্পটির মেয়াদ চার বছর। এখনো দুই বছর বাকি আছে। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সিটি করপোরেশনেরও প্রকল্প রয়েছে। সবগুলোর প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পূর্ণাঙ্গ সুফল মিলবে। শুধু প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে হবে না, কর্ণফুলী নদীও ড্রেজিং করতে হবে। কর্ণফুলী নদী ভরাট হয়ে চর জেগেছে।’

সভায় এপ্রিলের মধ্যে সংস্কার শেষ হওয়া খাল-নালাগুলোর বাঁধ ও মাটি উত্তোলনের কথা জানান জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ মো. আলী।

এদিকে, সংস্কার হওয়া খাল-নালা রক্ষণাবেক্ষণে ১০০ কোটি টাকা দাবি করেছে সিটি করপোরেশন। তা না পেলে সেগুলোর দায়িত্ব প্রকল্প গ্রহণকারী সিডিএ’কে নেওয়ার অনুরোধ করেছেন সিটি মেয়র।

সংস্কার করা খালগুলো পরিষ্কার কার্যক্রম চলমান না রাখলে আগের অবস্থায় ফিরে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। বলেন, ‘প্রকল্পটি নেওয়ার আগে সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল— খালগুলো পরিষ্কার রাখতে সিটি করপোরেশনকে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেই টাকা দেওয়া হয়নি। এখন যদি খাল-নালাগুলো সিটি করপোরেশনের ঘাড়ে তুলে দেওয়া হয়, এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা সিটি করপোরেশনের পক্ষে সম্ভব হবে না। সিটি করপোরেশনের সেই টাকাও নেই, জনবলও নেই। প্রকল্প থেকে ১০০ কোটি টাকা দিতে পারলে আমরা দায়িত্ব নেব। নয়তো এর সুরাহা পেতে মন্ত্রণালয়ে লিখব। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

পাঁচটি খালের মুখে বসানো স্লুইস গেট পরিচালনায় প্রশিক্ষিত জনবল নেই উল্লেখ করে সিটি মেয়র বলেন, ‘এ বছর স্লুইস গেটগুলো পরিচালনার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। স্লুইস গেটগুলো কারা পরিচালনা করবে, তা নিয়ে পরে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘প্রকল্পটি ভৌত অবকাঠামো কাজ বাস্তবায়নের কথা ছিল সিডিএ’র। খাল-নালাগুলো পরিষ্কারের কথা ছিল সিটি করপোরেশনের। এ জন্য ১০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীকে ভৌত-অবকাঠামো কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা কাজও করবে, পরিষ্কারও করবে।’

সভায় সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন, সিটি করপোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ, সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন