বিজ্ঞাপন

ফুল ভাসিয়ে পাহাড়ে শুরু বৈসাবি উৎসব

April 12, 2022 | 1:57 pm

প্রান্ত রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাঙ্গামাটি: উৎসবমুখর পাহাড়িরা বছরজুড়েই মেতে থাকে উৎসবে। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় বর্ষবিদায় ও বরণ উৎসব। যা ‘বৈসাবি’ নামে পরিচিত। বাংলা বর্ষের শেষ দিন চাকমারা ‘ফুল বিজু’, ত্রিপুরারা ‘হাঁড়িবসু’ আর মারমা সম্প্রদায়ে ‘সূচিকাজ’ নামে পালন করে যা ‘ফুল বিজু’ নামে সর্বাধিক পরিচিত। কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে রাঙ্গামাটিতে শুরু হয়েছে বৈসাবির মূল আয়োজন। জলে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই উৎসব ১৬ এপ্রিল মারমা সম্প্রদায়ের ‘জলকেলি’র মধ্য দিয়ে সাঙ্গ হবে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সকালে রাঙ্গামাটি শহরের বিভিন্নস্থানে কাপ্তাই হ্রদের জলে নানান রঙের ফুল ভাসিয়ে উদযাপিত হয় ফুল বিজু। এ সময় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন উপস্থিত পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বৃহত্তম এই সামাজিক আয়োজনে ব্যস্ত এখন শহর, নগর আর পাহাড়ি পল্লীগুলো। বাংলা বর্ষ বিদায় ও বরণ উপলক্ষে চাকমারা বিজু, ত্রিপুরা বৈসুক, মারমারা সংগ্রাই, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু ও অহমিয়ারা বিহু; এভাবে তারা ভিন্ন ভিন্ন নামে আলাদাভাবে পালন করে এই উৎসব। উৎসবের প্রথম দিনে পাহাড়ি জনগোষ্ঠিরা ফুল আর নিমপাতা দিয়ে ঘর সাজায়। আগামীকাল বুধবার মূল বিজু। এদিন পাহাড়িদের ঘরে ঘরে চলবে পাঁচন আতিথেয়তা।

ফুল বিজুর দিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা বয়সী পাহাড়িরা ফুল নিয়ে আসতে শুরু করে বিভিন্ন ঘাটে। খুব ভোরে মা গঙ্গার উদ্দেশে নদীতে পবিত্র এই ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে শুরু হয় এই উৎসব। উৎসবে নারীরা বাহারি রঙের পিনোন হাদি পরে আর ছেলেরা ধুতি, পাঞ্জাবি/ফতুয়া পরে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ফুল ভাসানোর উৎসবে মেতে ওঠে। পানিতে ফুল ভাসিয়ে পুরনো বছরের সব গ্লানি মুছে গিয়ে নতুন বছর বয়ে আনবে সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। তবে করোনার দুই বছরের বিষাদ ও বেদনা ভুলে আবারো প্রিয় বৈসাবি উদযাপন করতে পেরে খুশি সকলেই। ফুলবিজুর নানান আয়োজনে উপস্থিত বিশিষ্টজনরাও জানালেন নিজেদের উচ্ছাস, প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষার কথা।

বিজ্ঞাপন

পানিতে ফুল ভাসিয়ে পুরনো বছরের দুঃখ বেদনাই যেন ভাসিয়ে দিয়ে নতুন দিনের সম্ভাবনার আলো জ্বালায় পাহাড়ের মানুষ। পুরনো দিনের বেদনা ভুলে নতুন দিনের প্রত্যয়ের কথা জানায় ফুল ভাসাতে আসা পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা। জেলা শহরের রাজবাড়ীঘাট ফুল ভাসিয়ে অমর কুমার চাকমা জানান, এটি পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের ঐহিত্যবাহী সামাজিক উৎসব। করোনার কারণে গত দুই বছর উৎসবটি সেভাবে হয়নি। বিশ্ব যেন করোনা মুক্তি পায়, সেই প্রার্থনা করা হয় মা গঙ্গা দেবীর কাছে। পৃথিবী যেন ভালো হয়ে ওঠে এমনাটাই প্রত্যাশা।

সীমা চাকমা বলেন, সকালে ফুল সংগ্রহ করে ঘর সাজিয়ে, এখন ফুল ভাসাতে এসেছি। ফুল ভাসনোর মধ্যে দিয়ে পুরনো বছরের দুঃখ বেদনাকে ভাসিয়ে দিলাম এবং নতুন বছর যেন আরও অনেক সুন্দর হয়। করোনা থেকে দ্রুত বিশ্ব মুক্ত হোক। আমরা সবাই আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারি সেই কামনা।

বিজ্ঞাপন

বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব, ইন্টুমনি তালুকদার বলেন, পাহাড়ে বসবাসকারী পাহাড়ি-বাঙালি মিলেমিশে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারি, এই ফুল বিজুর মাধ্যমে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। একইসঙ্গে আগামীর দিনগুলো আনন্দে কাটুক সকলের।

রাঙ্গামাটি জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, গত দুই বছর করোনা মাহামারির কারণে এই আনন্দ একসঙ্গে করা সম্ভব হয়নি। এবার করোনা মহামারি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকায় আবারও একসঙ্গে মিলিত হতে পেরেছি।

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। পাহাড়ে সম্প্রতি অটুট ছিল সবসময়। প্রত্যাশা করছি আগামী দিনগুলোতেও সম্প্রতি অটুট থাকবে। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি সংরক্ষণের মধ্যদিয়ে আমাদের সংস্কৃতির প্রসার ঘটবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন