বিজ্ঞাপন

বলিখেলা হবে, মেলাও হবে—সব দায়িত্ব নিলেন রেজাউল

April 16, 2022 | 2:54 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠ বন্ধ থাকায় আব্দুল জব্বারের বলিখেলা ও বৈশাখী মেলা বন্ধের ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে ঐতিহাসিক এ আয়োজনের সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। মেয়র ঘোষণা দিয়েছেন, অতীতের মতো নির্ধারিত সময়েই বলিখেলা ও বৈশাখী মেলা হবে। এজন্য আর্থিক ও আনুষাঙ্গিক সকল সহযোগিতা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তিনি করবেন।

বিজ্ঞাপন

এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বলিখেলা ও বৈশাখী মেলা বন্ধের সিদ্ধান্তে চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে যে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল, তা পুরোপুরি নিরসন হবে বলে মনে করছেন মেয়র।

শনিবার (১৬ এপ্রিল) সকালে নগরীর বহদ্দারহাটে নিজ বাসভবনে জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এরপর তিনি আয়োজকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন।

মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ঘোষণা দেন, লালদিঘী মাঠের বদলে এর সামনেই জেলা পরিষদ চত্বরে সড়কের ওপর ১২ বৈশাখ (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বলিখেলা অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য সেখানে ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের মঞ্চ বানিয়ে বালি দিয়ে খেলার উপযোগী করা হবে। বলিখেলা দেখার জন্য আশপাশের চারদিক উন্মুক্ত থাকবে। বলিখেলার একদিন আগে ১১ বৈশাখ (২৪ এপ্রিল) শুরু হবে তিনদিনের বৈশাখী মেলা। চলবে ১৩ বৈশাখ (২৬ এপ্রিল) পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন

মেয়র বলেন, ‘রমজান মাস চলছে। খেলার সময়টা কিছুটা কমিয়ে বিকেল তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। বৈশাখী মেলা আগে পাঁচদিন হত। এবার তিনদিন হবে।’

আয়োজনের পুরো ব্যয়ভার বহনের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর ২-৩ মাস আগে থেকে বলিখেলার প্রস্তুতি নেয়া হত। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে স্পন্সর হিসেবে নেয়া হত। কিন্তু এবার সময় কম। আজ বৈশাখের তিন তারিখ। হাতে আছে মাত্র আটদিন। এখন আর স্পন্সর নেয়ার সময় নেই। সুতরাং মেলার জন্য যা যা লাগে সেটার ব্যবস্থা আমি করব। কোনো অসঙ্গতি হবে না। মেলার আগের যে জৌলুস ছিল, সবকিছু থাকবে। মেলার আনুষাঙ্গিক যা যা দরকার হয়, সব সহযোগিতা থাকবে।’

চট্টগ্রামবাসীকে উদ্দীপনার সঙ্গে বলিখেলা ও মেলায় অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আব্দুল জব্বারের বলিখেলা ও মেলা এটা সাধারণ কোনো মেলা ছিল না। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকে জোরদার করার জন্য আব্দুল জব্বার সাহেব এই বলিখেলার প্রচলন করেছিলেন। এই বলিখেলা বন্ধের ঘোষণায় সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা দেখেছি। ১১০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজন কেন বন্ধ হবে ? চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে আমার দায়দায়িত্ব আছে। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের সাথে এ মেলা জড়িত, এটা কোনো অবস্থায় বন্ধ হতে দিতে পারি না।’

বিজ্ঞাপন

‘সুতরাং আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলাম- মেলাও হবে, বলিখেলাও হবে। আগের মতো সব আয়োজন থাকবে, সুতরাং মাঠটা ছাড়া। যেহেতু লালদিঘী মাঠের কাজ শেষ হয়নি, এবার মাঠে করতে পারছি না। ইনশল্লাহ ভবিষ্যতে লালদিঘীর মাঠেই বলিখেলা হবে। আশা করি, চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, সেই ক্ষোভ-হতাশা আজ দূর হয়ে যাবে। আসুন, সকলে মিলে প্রাণের আনন্দে, উল্লাসে ফেটে পড়ি। সবাই মিলে সুন্দরভাবে বলিখেলা ও মেলা সম্পন্ন করি।’- বলেন মেয়র

সংবাদ সম্মেলনে আয়োজক কমিটির সভাপতি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন, ‘আমাদের নগরপিতা মেলা ও বলিখেলা আয়োজনের দায়িত্ব নিয়েছেন। মেয়র মহোদয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় খুব স্বল্প সময়ের প্রস্তুতিতে আমাদের বলিখেলা করতে হবে, সাথে বৈশাখী মেলাও হবে। আমি শুধু সকলের সহযোগিতা চাই। এছাড়া যারা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে মেলায় পণ্য নিয়ে আসছেন, সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে তাদের কাছে এই মেসেজ দিতে চাই যে, উনারা যেন আগের মতোই চলে আসেন এবং আগে যে যে জায়গায় পণ্য নিয়ে বসতেন, সেই জায়গায় যাতে বসেন।’

উল্লেখ্য, করোনার সংক্রমণের কারণে গত দুই বছর বলিখেলা ও মেলা হতে পারেনি। এবার মেলার ১১৩ তম আসর হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু বলিখেলার ভেন্যু লালদিঘী মাঠ বন্ধ অবস্থায় আছে। লালদিঘীর মাঠ সংস্কার করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ঘোষণার ইতিহাসের আলোকে স্থায়ী মঞ্চ, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ আরও কিছু স্থাপনা তৈরি করেছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকায় মাঠটি এখনও উন্মুক্ত করে দেয়া হয়নি।

এ অবস্থায় গত বুধবার (১৩ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলন করে জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও মেলা কমিটি বলিখেলা ও মেলা স্থগিতের ঘোষণা দেয়।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে মেলা কমিটির সদস্য সচিব ও আবদুল জব্বারের নাতি শওকত আনোয়ার বাদল বলেন, ‘লালদিঘীর মাঠ বন্ধ থাকায় আমরা মেলা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিলাম। আমার দাদার নামে এই বলিখেলা ও মেলা হলেও এটা আমাদের পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটা চট্টগ্রামবাসীর মিলনমেলা। স্থগিত ঘোষণার পর সাংবাদিক ভাইয়েরাসহ চট্টগ্রামের মানুষ যেভাবে সোচ্চার হয়েছেন, এর প্রেক্ষিতে মেয়র মহোদয় একটা উদ্যোগ নিয়েছেন। বলিখেলা ও মেলা হবে- এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। তবে মেয়র মহোদয়কে অনুরোধ করব, আগামী বছর থেকে যেন বলিখেলাটা আবার লালদিঘীর ময়দানে হয়, আপনি সেই উদ্যোগ নেবেন।’

সারাবাংলা/আরডি/এসএসএ

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন