‘সেই’ দুই কৃষকের মৃত্যু বিষপানেই: ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: গোদাগাড়ীর দুই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষকের মৃত্যু বিষপানেই হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ ছিল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুলিশ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষা করছিলো। শনিবার (১৬ এপ্রিল) এই প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘আমরা মৃতের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নমুনা সংগ্রহ করেছিলাম। এরপর সেগুলো ভিসেরা রিপোর্ট প্রস্তুতের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিলাম ল্যাবে। ওই ভিসেরা রিপোর্ট আমরা হাতে পাওয়ার পর চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করি। ভিসেরা রিপোর্ট অনুযায়ী মৃত দুই জনের শরীরে কীটনাশক বিষ পাওয়া গেছে। পরীক্ষায় আমরা অর্গানো ফসফরাস যৌগ নামে এক ধরনের কিটনাশক বিষ পায়। এই বিষপানেই তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছি।’

জমিতে পানি দেয়নি পাম্প অপারেটর, ক্ষোভে কৃষকের আত্মহত্যা

গোদাগাড়ীর দুইজন আদিবাসী কীটনাশক পানে কৃষক অসুস্থ হন গত ২৩ মার্চ সন্ধ্যায়। তারা নিজেরাই পরিবারের সদস্যদের জানান যে, তারা বিষ খেয়েছেন। এর মধ্যে অভিনাথ মারান্ডি (৩৬) নামে একজন ওই রাতেই বাড়িতে মারা যান। আর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ মার্চ মারা যান তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি (২৭)। দুই কৃষকেরই বাড়ি গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউনিয়নের নিমঘুটু গ্রামে।

অভিনাথ ও রবির পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অনেক ঘুরেও গভীর নলকূপ থেকে সেচের পানি পাচ্ছিলেন না তারা। তাই ক্ষোভে ওই নলকূপের সামনেই দু’জনে বিষপান করেন।

পানি না পেয়ে ২ কৃষকের আত্মহত্যা: অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে কমিটি

স্বামীর মৃত্যুর ঘটনায় অভিনাথের স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম এবং রবির ভাই সুশিল মারান্ডি বাদি হয়ে গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে আলাদা দু’টি মামলা করেছেন। গোদাগাড়ী থানায় আত্মহত্যা প্ররোচনার এই মামলার গ্রেফতার হয়েছেন অভিযুক্ত সাখাওয়াত। এরইমধ্যে তাকে নলকূপ অপারেটরের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি এই ঘটনা তদন্ত করে এরই মধ্যে প্রতিবেদনও দাখিল করেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুর রহমান জানান, প্রতিবেদন আনতে তিনি লোক পাঠিয়েছেন। এখনও হাতে পাননি, তবে পেয়ে যাবেন। তিনি বলেন, ‘দুই জনেই মারা গেছেন এক কারণে, তাই এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই মামলা কোন দিকে যাবে তা নিশ্চিত করে বলা যাবে। প্রতিবেদন হাতে বলে মামলা গতি পাবে।’

আরও পড়ুন:
সেচের পানি দেওয়াতে গাফিলতি হলে কঠোর ব্যবস্থা: কৃষিসচিব
জমিতে পানি না দেওয়ায় বিষপান করা আরেক কৃষকেরও মৃত্যু

সারাবাংলা/এমও