বিজ্ঞাপন

‘আমার জীবনের আয়ু যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পান’

April 25, 2022 | 11:58 pm

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে: ‘আমরা প্রেম করে বিয়ে করায় পরিবার থেকে মেনে নেয়নি। ফলে দীর্ঘদিন অভাব-অনটনের মধ্যে জীবন পার করছি। আমার স্বামী ছয় মাস আগে স্ট্রোক করে অসুস্থ হন। এরপর ১৭ দিন আগে দ্বিতীয় স্ট্রোকে তিনি মারা যান। দুঃখের বিষয় তিনি নতুন বাড়িতে উঠতে পারলেন না। আমার স্বামী মারা যাওয়ার আগে বলে গেছেন, আমার জীবনের আয়ু যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পান। তিনি যেন এভাবে মানুষের সেবা করে যেতে পারেন।’— এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সরকারের চলমান আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ঘর পেতে যাওয়া গৃহহীন সদ্য বিধবা নারী শারমীন আক্তার। তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি ঘর পেতে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সকালে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইদ উপহার হিসেবে এ বাড়িগুলো হস্তান্তর করবেন। গৃহহীন-ভূমিহীন এসব মানুষ ইদের আগে জমিসহ ঘর উপহার প্রাপ্তির খুশির আনন্দ-আবেগ অনুভূতিতে ভাসছেন। তাদের মুখে এখন প্রাপ্তির খুশি। আর কৃতজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। যারা ঘর পাচ্ছেন, তাদের মাঝে যেন এবার যেন ইদের আগেই ইদ আনন্দ। সরকারের চলমান আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ভূমি ও গৃহহীনরা এসব উপহার পেতে যাচ্ছেন।

সোমবার (২৫) সরেজমিন আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, ভাসমান জীবনের অবসান ঘটিয়ে কয়েকটি ভূমিহীন পরিবার নিজ বাড়িতে ওঠার প্রত্যাশায় ঘরগুলোর সামনে ঘুরাঘুরি করছেন। ইতোমধ্যে তারা বাড়ি ও জমির দলিলও হাতে পেয়ে গেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে মঙ্গলবার থেকে তারা দালিলিকভাবে জমিসহ ঘরের মালিক হবেন। তাদের অনেকে বলেন, অন্যের বাড়িতে আশ্রয় থেকে এতদিন কত ইদ, কত বছর পার করেছি। কিন্তু এবার সন্তানদের নিয়ে নিজের বাড়িতে ইদ করতে পারব। আজ আমরা জমিসহ ঘরের মালিক হচ্ছি, নিজের পাকা বাড়ি হলো। একটু জায়গা হলো। ঈদের আগেই সে জায়গা পাব। এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে!

হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাচ্ছেন মোহাম্মদ নেজাম। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি। রাজমিস্ত্রীর কাজ করে তিনি যা পেতেন তা দিয়ে সংসার চালানো শেষে বাড়তি কিছু থাকে না। ফলে নিজের বাড়িতে থাকার ভাগ্য তার এর আগে হয়নি। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘জীবনের বেশির ভাগ সময় অন্যের বাড়িতেই কাটালাম। শেষ জীবনে এসে নিজের বাড়িতে থাকতে পারব। এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। এই বাড়ি পাওয়ার ক্ষেত্রে যারা সহায়তা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

বিজ্ঞাপন

সেখানে কথা হয় খুশিদা বেগমের। তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তিনি আশ্রয়ণের বাড়িতে উঠবেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ছেলেমেয়েকে নিয়ে নতুন বাড়িতে উঠছি, অনেক আনন্দ লাগছে।’ ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝরে বাড়ি, জমি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েন ইয়ার মোহাম্মদ। এরপর তার আশ্রয় হয় সমুদ্রপাড়ের বেড়িবাঁধের ওপরে। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় জমিসহ বাড়ি পেয়ে খুশি ইয়ার মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। তার জন্যই আমরা নতুন বাড়িতে ইদ করতে পারব।’

শমসের নাহার (৪০) তিনিও দুই সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে ঘরে উঠবেন। তার চোখেমুখেও ছিল খুশির ঝিলিক। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘১৯৯৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ি। আজ কতদিন পর নিজের বাড়িঘর হতে যাচ্ছে। খুব ভালো লাগছে। কি যে খুশি হয়েছি তা বলতে পারছি না। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য খালি নামাজ পড়ি, আর দোয়া করি।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলটি বাংলাদেশের একটি দুর্যোগ প্রবণ এলাকা। ১৯৯১ সালে ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যায়। এক কোটি পরিবাচর আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছিল। এছাড়া ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছিল। তার আগে ১৯৮৫ ও ১৯৯৭ সালে ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল। এতে চট্টগ্রাম অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতো।

তিনি জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে যাদের জমি ও ঘর নেই এমন ২ হাজার ৩০০ মানুষকে ঘর দেওয়া হয়েছে। এবার তৃতীয় ধাপে ১৪০০ মানুষকে জমিসহ ঘর দেওয়া হচ্ছে। আগামীকাল হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ১৩০টি ঘর তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৩২টির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে এবং অবশিষ্টগুলোর নির্মাণ কাজ আগামী ১৫ থেকে ২০দিনের মধ্যে শেষ হবে।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘তারা এই ঘরের সঙ্গে দুই শতাংশ জমি পাচ্ছেন এবং এই দুই শতাংশ জমির বাজারমূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা। আমি মনে করি, তাদের এই অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অনেক বড় প্রাপ্তি। যিনি রাস্তায় ঘুমাতেন তিনি দলিলটি হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ৩৩ থেকে ৩৪ লাখ টাকা সম্পদের মালিক হচ্ছেন। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি অনেক বড় অর্জন। এটি শুধু ইদ উপহার নয়, সারাজীবন তাদের এই আনন্দ থেকে যাবে।’

বিজ্ঞাপন

আনোয়ারা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগামীকাল ৩২টি উপকারভোগী পরিবারকে আমরা ঘর বুঝিয়ে দিব। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এমন লোকজনকে এখানে আশ্রয় দিয়েছি। এছাড়াও বিভিন্ন মানুষ যারা ছিন্নমূল ছিল তাদের পুনর্বাসন করছি। আমার উপজেলাতে ৪১৫ জন ভূমিহীন-গৃহহীন আছে। আমরা এই পর্যন্ত ৬৫ জনকে দিয়েছি। এ পর্যায়ে আমরা ১৩০ জনকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার বরাদ্দ পেয়েছি। আশা করি এই বছরের মধ্যে বাকিদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া যাবে।’

এর আগে, রোববার (২৪ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় ধাপে ৩২ হাজার ৯০৪টি ঘর পাচ্ছেন গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষরা। আগামী ২৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে দেশের চারটি উলজেলায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে গৃহহীন মানুষের হাতে উপহারের এসব ঘর হস্তান্তর করবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৪ এপ্রিল ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের পোড়াদিয়া বালিয়া আশ্রয়ন প্রকল্প, বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের খাজুরতলা আশ্রয়ন প্রকল্প, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের খোকশাবাড়ী আশ্রয়ন আশ্রয়ন প্রকল্প এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারার বারখাইন ইউনিয়নের হাজিগাও আশ্রয়ন প্রকল্পে সরাসরি গণভবন থেকে যুক্ত হবেন।

তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষ উপলক্ষে ঘোষণা দিয়েছেন যে, বাংলাদেশের কোনো মানুষ যাতে ভূমিহীন ও গৃহহীন না থাকে। সেজন্য তিনি দুই শতক জমির উপর দুই রুমবিশিষ্ট একটি ঘর উপহার দিচ্ছেন। এসব ঘরের ডিজাইন প্রধানমন্ত্রী নিজেই প্রণয়ন করেছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ৬০ হাজার ১৯১টি ঘর, ২০ জুন ৫৩ হাজার ৩০০টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মিত মোট ঘরের সংখ্যা ১ লাখ ১৭ হাজার ২৯টি। তৃতীয় পর্যায়ে নির্মাণাধীন একক ঘরের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৬৭৪টি। এর মধ্যে ৩২ হাজার ৯০৪টি হস্তান্তর হচ্ছে আগামী ২৬ এপ্রিল।’

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন