বিজ্ঞাপন

ঘর পাওয়া মানুষের মুখের হাসি সবচেয়ে ভালো লাগে: প্রধানমন্ত্রী

April 26, 2022 | 5:19 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় গৃহহীন ব্যক্তিরা ঘর পাওয়ার পর তাদের মুখে যে হাসি ফোটে, সেটি দেখতে সবচেয়ে ভালো লাগে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমরা চাই যেন এই বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে। জাতির পিতা দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। আমরাও তার জন্য কাজ করছি। সব মানুষ যেন বাঁচতে পারে, সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারে— এটিই আমাদের লক্ষ্য। আজ গৃহহীন মানুষেরা ঘর পাচ্ছে। আমার সবথেকে ভালো লাগে যখন দেখি, একটি মানুষ ঘর পাওয়ার পর তার মুখে হাসি ফুটেছে।

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সকালে মুজিববর্ষ উপলক্ষে তৃতীয় পর্যায়ের ৩২ হাজার ৯০৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর হস্তান্তরের অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুন- ‘আমার কাছে ক্ষমতাটা হচ্ছে জনগণের সেবা দেওয়া’

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের পোড়াদিয়া বালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের খাজুরতলা আশ্রয়ন প্রকল্প, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের খোকশাবাড়ী আশ্রয়ন প্রকল্প এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারার বারখাইন ইউনিয়নের হাজিগাঁও আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যুক্ত থেকে উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে জাতি বুকের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে সেই জাতি কখনো পিছিয়ে থাকতে পারে না। জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে যারা অস্ত্র তুলে নিয়ে নিজের রক্ত দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, সেই শহিদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। জাতির পিতাও যুদ্ধবিধস্ত দেশকে শত বাধা উপেক্ষা করে অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। যখন কিছুতেই তার অগ্রযাত্রা থামিয়ে রাখা যাচ্ছিল না, তখনই আসে ১৫ আগস্টের আঘাত।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, তাকে আঘাত করে যারা ভেবেছিল এই দেশটাকে পিছিয়ে দেবে, তাকে আঘাত করে যারা ভেবেছিল এই দেশটাকে পিছিয়ে নিয়ে যাবে, এই দেশটাকে আবার ধ্বংসস্তূপে পরিণত করবে— তাদের সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে আজ আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাচ্ছি, এটাই তো সবথেকে বড় পাওয়া।

স্বাধীনতাবিরোধী সেই চক্র এখনো সক্রিয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক বাধা আসবে। কারণ বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, বাংলাদেশ উন্নত হোক, যারা স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করতে চেয়েছিল সেই ধরনের লোকগুলো কখনো সেটি চাইবে না। তারা এখনো আছে। কিন্তু সব বাধা অতিক্রম করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ইনশাআল্লাহ আমরা এগিয়ে যাব এবং জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব।

আরও পড়ুন- ‘ঘর নয়, যেন ফাইভ স্টার হোটেল পেয়েছি’

দলের নেতাকর্মীদের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বলব— জাতির পিতার আদর্শে নিয়েই চলবেন। দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। একটি মানুষকে যদি একটু আশ্রয় দেওয়া যায়, তার মুখে একটু হাসি ফোটানো যায়— এর চেয়ে বড় পাওয়া একজন রাজনীতিবিদের জীবনে আর কী হতে পারে!

বিজ্ঞাপন

বিত্তবানদের দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অর্থ-সম্পদ, টাকা-পয়সা এগুলো কাজে লাগে না। করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় আপনারা দেখেছেন, হাজার হাজার কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও কিন্তু তাদের কিছুই করার ছিল না। যারা বাংলাদেশে কোনোদিন চিকিৎসাই নেননি, তাদের কিন্তু এই দেশেই ভ্যাকসিন নিতে হয়েছে। কারণ টাকা থাকলেও কোথাও যেতে পারেননি। আগে তো একটু সর্দি-কাশি হলেও তারা চিকিৎসার জন্য বিদেশে উড়ে চলে যেতেন। করোনাভাইরাস মানুষকে একটা শিক্ষা দিয়ে গেছে— ধন-সম্পদ-অর্থ কিছুই না। আর মরলে তো সবকিছু রেখে যেতে হবে। কেউ কিছু কবরে নিয়ে যেতে পারবেন না। কাজেই সম্পদের পেছনে ছুটে নিজেকে মানুষের কাছে অসম্মানিত করার কোনো অর্থই হয় না।

সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার সব নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের পেছনে খরচ নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, সে প্রসঙ্গেও কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, এখানে কেবল ভ্যাকসিনের দাম হিসাব করলে হবে না। ভ্যাকসিন দিতে গেলে আমাদের যে লোকবল লেগেছে, যে স্থান লেগেছে, ভ্যাকসিন নিয়ে ফ্রিজারে রাখার জন্য ডিপ ফ্রিজ সংগ্রহ করতে হয়েছে, গ্রাম পর্যায়ে ভ্যাকসিন দিতে গিয়ে এয়ারকন্ডিশন ঘর তৈরি করতে হয়েছে— এগুলোরও কিন্তু খরচ আছে। সব খরচ এক কলে হয়তো সঠিক তথ্যটি পাবেন যে ভ্যাকসিনের পেছনে কত হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আমরা কিন্তু বিনা পয়সায় সব করে দিয়েছি এ দেশের মানুষের জন্য।

আরও পড়ুন- প্রধানমন্ত্রীর ইদ উপহার, ঘর পেল ৩৩ হাজার ভূমিহীন পরিবার

জনগণের জন্য তার সরকার ধারাবাহিকভাবে এরকম উদ্যোগ নিয়ে চলেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষকে শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি। এখন দেশে গৃহহীন, ভূমিহীন কেউ থাকবে না— আমরা সেই উদ্যোগ নিয়েছি। বিশ্বদরবারে যেমন আমরা এখন মর্যাদা নিয়ে চলছি, এই মর্যাদা নিয়েই এগিয়ে যাব। এখন আর কেউ বাংলাদেশকে অবহেলার চোখে দেখবে না। আজ বাংলাদেশের কথা শুনলে কেউ আর দুর্যোগের দেশ, দুর্ভিক্ষের দেশ বলতে সাহস পায় না। সবাই বলে— বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। আর এটা সম্ভব হয়েছে এ দেশের মানুষের জন্য।

তিনি বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাই দেশের জনগণকে যারা আমাকে বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন।

এদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে ঘর পেয়েছে আরও ৩২ হাজার ৯০৪ গৃহ ও ভূমিহীন পরিবার। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকার উপকারভোগীদের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

ইদুল ফিতরের আগে ঘর উপহার পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষরা। ভূমিহীন হয়েও সরকারের উদ্যোগে স্থায়ী আশ্রয় পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন তারা। ইদের আগে জমিসহ ঘর উপহার পেয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন